ঢাকা ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ২৫ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সবাই ভাবে রাজপথ দখলে নিলেই সমাধান

ডিএমপি কমিশনার
সবাই ভাবে রাজপথ দখলে নিলেই সমাধান

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেছেন, সবাই মনে করে রাজপথ দখলে নিলে তাদের দাবি দ্রুত আদায় হবে বা সমস্যার সমাধান হবে। গতকাল বুধবার ঢাকা ক্লাবে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) বার্ষিক সাধারণ সভায় তিনি এ কথা বলেন। ডিএমপি কমিশনার সাজ্জাত আলী বলেন, ঢাকায় দুই থেকে আড়াই কোটি লোকের বসবাস। এখানে হতদরিদ্র, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির সংখ্যাই বেশি। বেকারত্বের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। নানাবিধ সামাজিক সমস্যা প্রকারান্তরে পুলিশের ঘাড়েই এসে পড়ে। ইদানিং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকেরা ছোটখাটো দাবি আদায়ের জন্য রাজপথকেই বেছে নিচ্ছে। ছিনতাই প্রতিরোধে গত এক সপ্তাহে ‘ব্যাপক ব্যবস্থা’ নেয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা আপনাদের এ ব্যাপারে সাহায্য করব। কিন্তু নিজের ব্যক্তিগত ব্যাগ এবং মানিব্যাগ, পার্স, মোবাইল নিজে একটু নিরাপদে রাখার চেষ্টা করবেন। তাহলে এ কাজটির মাধ্যমে আপনি আমাদের সহযোগিতা করতে পারবেন। ইদানিং যে অপরাধটি মানুষের মধ্যে শঙ্কার সৃষ্টি করেছে সেটি ছিনতাই। ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত অধিকাংশ মাদকাসক্ত অল্প বয়সের ছেলেরা। ১৫ থেকে ২২ বছরের ছেলেরা মাদকাসক্ত হয়ে এই ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। ছিনতাইয়ে ৮০ শতাংশই মোবাইল ফোন ছিনতাই জানিয়ে তিনি বলেন, বাসে বা প্রাইভেটকারে যখন কথা বলে তখন মোবাইল ফোন নিয়ে দৌড় দেয়। তাদের হাতেনাতে ধরা অত্যন্ত কঠিন কাজ। আমার অফিসারদের কাছে বড় অস্ত্র থাকে, বুট পরা, ইউনিফর্ম পরা থাকে। ছিনতাইকারী থাকে খালি পায়ে বা একটা কেডস পরা। তার সঙ্গে দৌড়ে পারাটা অনেক কঠিন।

তাই প্রথমত আমি ঢাকাবাসীকে অনুরোধ করব, আপনার মোবাইল ফোন, নারীরা যারা পার্স ব্যবহার করেন আপনার পার্স বা হ্যান্ডব্যাগ নিজের নিরাপত্তায় ভালোভাবে রাখার চেষ্টা করবেন। ছিনতাইয়ের ব্যাপারে গত এক সপ্তাহে ব্যাপক ব্যবস্থা নিয়েছি। দিনে এবং রাতে পেট্রোল সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। ডিবিকেও এ কাজে লিপ্ত করেছি। গত এক সপ্তাহে তথ্য মোতাবেক আগের তুলনায় ছিনতাই কমে এসেছে। আশা করছি আমরা ছিনতাইকে আরো নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হবো। ছিনতাই প্রতিরোধে গত ২২ ডিসেম্বর থেকে রাজধানীজুড়ে ‘বিশেষ অভিযান’ পরিচালনা শুরু করে ডিএমপি। পরদিন অভিযানের প্রথম ২৪ ঘণ্টায় ৯৩ জন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তারের তথ্য দিয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার এসএন মো. নজরুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, এই ছিনতাই প্রবণতা ‘কমে না আসা পর্যন্ত’ বিশেষ অভিযান অব্যাহত থাকবে। ঢাকার উত্তর থেকে দক্ষিণে মূলত মিরপুর রোড, এয়ারপোর্ট রোড ও রামপুরা রোড এই তিনটি সড়কের কথা তুলে ধরে ডিএমপি কমিশনার বলেন, একটি রোড বন্ধ হলে পুরো শহর অচল হয়ে যায়। আমরা এ সমস্যার প্রতিনিয়ত সম্মুখীন হচ্ছি। তাই অনুরোধ দাবির ব্যাপারে খোলা মাঠ, অডিটোরিয়াম, সভাস্থল বেছে নিন। যথাযথ কর্তৃপক্ষকে সেখানে ডেকে টেবিলে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করুন। ঢাকাবাসীর ট্রাফিক ব্যবস্থাকে আরো ভঙ্গুর করে তুলবেন না, এটি আমার সবিনয় নিবেদন।

তিনি আরো বলেন, বিগত ১৫ বছর ডিএমপি সদস্যরা যেরূপ আচরণ করেছেন, সেই আচরণ থেকে বের হয়ে আসতে চাই। কিন্তু এ জন্য সময়ের প্রয়োজন। আমার সব অফিসারের নতুন করে প্রশিক্ষণের বিশেষভাবে প্রয়োজন। প্রশিক্ষণ ছাড়া হঠাৎ করে ৪০ হাজার সদস্যকে পরিবর্তন সম্ভব না। তাই আমরা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ইতোমধ্যে শুরু করেছি। কোথায় কী পরিমাণ বল প্রয়োগের প্রয়োজন সেদিকে আমরা দৃষ্টি রাখছি। অচিরেই আপনারা সেই পরিবর্তন লক্ষ্য করবেন। ৫ আগস্টের পরে ডিএমপির মনোবল ‘একদম ভেঙে পড়ে’ এবং বিগত পাঁচ মাসের ‘অক্লান্ত পরিশ্রমে’ অনেকটাই কাটিয়ে ওঠার কথা জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার সাজ্জাত আলী বলেন, পুলিশ যদি নিষ্ক্রিয় থাকে তার ফলাফল কি হয় ৫ আগস্টের পরে ঢাকাবাসী মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছে। এ পুলিশ আপনাদের লাগবে। আমাদের অনেক দুর্বলতা আছে, সেগুলো থেকে বের হয়ে আমরা আপনাদের সেবা দেবো। কিন্তু ডিএমপি আপনাদের লাগবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত