ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপত্তকর্মীর সঙ্গে মারামারিতে জড়িয়ে জরিমানা দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন বিদেশফেরত এক প্রবাসী। সাঈদ উদ্দিন মোহাম্মদ নামের ২৯ বছর বয়সী ওই ব্যক্তির বাড়ি ফেনীর সোনাগাজীতে। তিনি থাকেন নরওয়েতে। গত বুধবার রাতে দেশে ফেরার পর বিমানবন্দরে তিনি ওই ঘটনায় জড়ান। ওই ঘটনার একটি সিসিটিভি ভিডিওতে দেখা গেছে, বাক-বিতণ্ডার এক পর্যায়ে সাঈদ উদ্দিন বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা একজন বিমানবাহিনী সদস্যকে ধাক্কা দিলে হাতাহাতি শুরু হয়। পরে তাকে নিবৃত্ত করেন এভসেক সদস্যরা। শেষে বিমানবন্দর ম্যাজিস্ট্রেট ৫ হাজার টাকা জরিমানা করে তাকে ছেড়ে দেন। বিমানবন্দরের নির্বাহী হাকিম মো. ফারুক সুফিয়ান ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে দণ্ডবিধির ১৮৯ ধারায় সাঈদ উদ্দিনকে জরিমানার আদেশ দেন। এই ধারায় সরকারি কর্মচারীকে হুমকি কিংবা তার কর্তব্য পালনে বাধা দেয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ দুই বছরের জেল বা জরিমানা কিংবা উভয়দণ্ডের বিধান আছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া আরেকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, সংঘর্ষের পর ওই প্রবাসীর চোখে জখম হয়েছে, তার ঠোঁট ফেটে গেছে এবং গালেও আঘাত পেয়েছেন তিনি। বিমানবাহিনীর যে সদস্যকে তিনি ধাক্কা দিয়েছেন, তার নাম কোহিনূর। তিনিও আহত হয়েছেন। তার চোখ ফুলে গেছে। ওই ভিডিওতে প্রবাসী ওই ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে কোহিনূরকে বলতে শোনা যায়, কাজটা ভালো করেন নাই। আপনি আমাকে কেন ধাক্কা দিলেন, কেন ধাক্কা দিলেন? আমি সিভিল লোক? জবাবে সাঈদ তার সঙ্গে আসা এক স্বজনকে দেখিয়ে বলতে থাকেন, ‘আপনি উনাকে ধরেন নাই? ধরেন নাই? আপনারা পাঁচজন-ছয়জন মিলে মারছেন ওরে।’ তখন বিমানবাহিনীর ওই সদস্য বলেন, ‘সিসিটিভি আছে, দাঁড়ান।’ বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম একটি লিখিত বক্তব্য পাঠান।
তাতে বলা হয়, ‘৮ জানুয়ারি রাত সোয়া ৯টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক আগমনী কেনোপি-২ এর সামনে ২ জন সম্মানিত যাত্রী কর্তৃক বিমানবন্দরের একজন নিরাপত্তা সদস্যকে শারীরিকভাবে আঘাতের ঘটনা ঘটে।’ প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা এবং প্রাথমিক তদন্তের বরাত দিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, পাঁচ জন যাত্রীর একটি দল বিমানবন্দরের কার্যক্রম শেষ করে কেনোপি-২ এলাকা দিয়ে বের হয়ে যাওয়ার সময় তাদের মধ্যে একজন ট্রলিসহ কেনোপি-২ এর গেটের সামনে দাঁড়ালে ওই গেইটে যাত্রীর পথ আটকে যায়। ‘ওই সময় ওই এলাকায় আগমনী যাত্রীর চাপ বেশি থাকায় কর্তব্যরত একজন নিরাপত্তাকর্মী ওই যাত্রীকে কিছুটা সরে দাঁড়ানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু তিনি তাতে কর্ণপাত না করে দাঁড়িয়ে থাকেন।
‘কিছুক্ষণ পর ওই নিরাপত্তাকর্মী পুনরায় ওই যাত্রীকে সরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করতে গেলে তিনি প্রচণ্ড রাগান্বিত হয়ে পড়েন এবং অকথ্য ও অশ্রাব্য ভাষায় উক্ত নিরাপত্তা কর্মীকে গালিগালাজ করতে থাকেন।’ বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘এ সময় সেখানে নিয়োজিত আরো একজন নিরাপত্তা কর্মী উল্লেখিত যাত্রীকে শান্ত করার চেষ্টা করলে এক পর্যায়ে উল্লেখিত যাত্রীর পুত্র (একই ফ্লাইটের যাত্রী, যিনি পেছনে অবস্থান করছিলেন) ঘটনাস্থলে এসে বিমান বাহিনীর ওই নিরাপত্তা কর্মীকে শারীরিকভাবে আঘাত ও লাঞ্ছিত করেন। ‘যাত্রীরা ওই নিরাপত্তাকর্মীকে কিলঘুষি মারা শুরু করলে তাদের মধ্যে ধ্বস্তাধস্তি হয় এবং ওই নিরাপত্তা কর্মী মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। একপর্যায়ে পরিস্থিতি মোকাবিলায় অত্র স্থলে নিয়োজিত আনসার এবং এভিয়েশন সিকিউরিটির সদস্যরা এগিয়ে এলে উক্ত নিরাপত্তা কর্মীদের উল্লেখিত দুজন যাত্রীর হাত থেকে মুক্ত করা হয়।’