অন্তর্বর্তী সরকার কিছুই সমাধান করতে পারছে না

মোস্তফা জামাল

প্রকাশ : ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কোনোকিছুই সমাধান করতে পারছেন না। সংস্কার করার যোগ্যতা এই সরকারের নেই। অবিলম্বে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করুন। নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে সসম্মানে বিদায় নিন। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন। দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী স্বৈরচারের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দোসরদের গ্রেপ্তার এবং বিচার দাবিতে ১২ দলীয় জোট এই কর্মসূচির আয়োজন করে। মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করতে চায়। এতে করে দেশের শিল্প কারখানা ধ্বংস হয়ে যাবে। অতীতে শেখ হাসিনার সরকারও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের কলকারখানা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। এখন বর্তমান সরকারকেও কি সেরকমই একটা সরকার মনে করব? আমি বলব, আগুনে হাত দেবেন না। শ্রমিক অসন্তোষের মুখে গ্যাসের দাম বাড়িয়ে কলকারখানা ধ্বংস করবেন না। মানুষের অসন্তোষ বৃদ্ধি করবেন না। বিএনপির চেয়ারপারসনের সুস্থতা কামনা করে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে গিয়েছেন।

আল্লাহ তাকে সুস্থ করে দিয়ে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করুন। অনেকেই তাকে মাইনাস করার কথা বলছেন। কিন্তু এ ধরেনর চক্রান্ত দেশের ছাত্র-জনতা কোনোভাবেই সহ্য করবে না। বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (বিএলডিপি) চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, জনগণ যা চায় তা বুঝে অবিলম্বে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যেই নির্বাচন দিন। ভোটারের বয়স ১৭ এবং নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বয়স করতে চান ২১ বছর। দুটোই সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আমরা বলব, দেশে কচিকাঁচার সংসদ গড়বেন না। আপনাদের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। পাঁচ মাস ধরে কিছুই করতে পারছেন না। আইনশৃঙ্খলা, নিত্যপণ্যের বাজার কোথাও শৃঙ্খলা আনতে পারছেন না। আমাদের মাঠে নামতে বাধ্য করবেন না। কারণ, আমাদের মাঠে নামার অভিজ্ঞতা আছে। সুনাম রক্ষা করতে চাইলে দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করুন।

কোনো উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য কারো হাতিয়ার হবেন না। জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, শেখ হাসিনার আমলে দেশের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করা হয়েছিল। মানুষের বাকস্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হয়েছিল। অতঃপর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন। কিন্তু আজ পাঁচ মাস হয়ে গেলেও সরকার কিছুই করতে পারেনি। আমি বলব, টালবাহানা না করে অবিলম্বে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করুন। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে নির্বাচিত সরকার।

সেই সঙ্গে জুলাই আগস্টে ছাত্রজনতার গণহত্যাকারী পুলিশ ও প্রশাসনের দোসরদের গ্রেপ্তার করে শাস্তির আওতায় আনুন। মানুষ অক্সফোর্ড আর হার্ভার্ডের সংস্কার বোঝেনা। অন্যান্য বক্তারা বলেন, অবিলম্বে সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে। তা না হলে দেশের চলমান সংকট সমাধান সম্ভব হবে না। শেখ হাসিনার পতনের জন্য দেশের ছাত্রজনতা রাজপথে নেমে এসেছিল। এখন জনআকাঙ্খা পূরণে একটি সুন্দর ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেয়া অত্যন্ত জরুরি। না হলে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ আবারো মাথাচাড়া দেবে।

গরিব মানুষ কিন্তু সংস্কার বুঝে না। তারা চায় দুবেলা দুমুঠো খেয়ে নিরাপদে বাঁচতে। অতএব জাতীয় সংসদ নির্বাচন দ্রুত করতে হবে। তারা বলেন, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের সিন্ডিকেট ও দোসররা এখনো বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা ষড়যন্ত্র করে নিত্যপণ্যের দাম ইচ্ছামতো বাড়িয়ে সাধারণ মানুষকে কষ্টে ফেলেছে। তারা দেশীয় পণ উৎপাদন ও নিত্যপণ্যের দাম কমাতে আহ্বান জানান। ১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিমের সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মুফতি গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, জাতীয় পার্টির মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন, বিকল্প ধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নুরুল আমিন বেপারী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান লায়ন মুহাম্মদ ফারুক রহমান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন পারভেজ, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা আব্দুল করিম প্রমুখ।