বর্তমানে শহুরে সমাজে বড় আতঙ্কের নাম ‘কিশোর গ্যাং’। উঠতি বয়সি এসব তরুণের অপরাধকর্মে আতঙ্কিত রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকা ও দেশের অন্যান্য শহরের বাসিন্দারাও। বর্তমান সময়ে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য ছড়িয়ে পড়েছে দেশের প্রতিটি বিভাগ-জেলা ও পাড়া-মহল্লায়। দল বেঁধে চলাচল, আধিপত্য বিস্তারসহ নিজেদের হিরোইজম জাহির করতে বিভিন্ন চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মাদক কারবার এমনকি খুনোখুনিতে লিপ্ত হচ্ছে কিশোর-তরুণরা। তবে অভিযোগ রয়েছে, কিশোর গ্যাংয়ের পেছনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী, স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি। কিছু জায়গায় তাদের ইন্ধন দিচ্ছে রাজনৈতিক নেতারাসহ শীর্ষ সন্ত্রাসীরা।
গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে সারা দেশের পাড়া-মহল্লাকেন্দ্রিক কিশোর গ্যাং কালচার আরও বেড়েছে। এতে সমাজে বসবাসকারী নাগরিকদের আতঙ্কও বাড়ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছে, সমাজের বিভিন্ন স্তরে মাদকের আগ্রাসন বেশি। এ আগ্রাসনের শিকার হচ্ছে কিশোররা। এ কারণে তারা বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করতে দ্বিধাবোধ করে না। ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মারামারি করছে, হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে তারা। সম্প্রতি অনেক শীর্ষ সন্ত্রাসী জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে। তাদের ছত্রছায়ায় থেকে সমাজের বিভিন্ন তাণ্ডব চালাচ্ছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এদিকে রাজধানীসহ সারা দেশেই কিশোর গ্যাং গ্রুপগুলোর বিষয়ে নজরদারি বৃদ্ধি এবং শনাক্তের কাজ করছে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট র্যাব।
অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে আইনের শাসনে ঘাটতি থাকায় বিভিন্ন ধরনের অপরাধ বেড়ে যাচ্ছে সমাজে। কিশোর অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণে আনতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যবস্থাগুলোতে কিছুটা ঘাটতিও আছে, এ ঘাটতি সমাজব্যবস্থায়ও রয়েছে। পাশাপাশি আমাদের কিশোর অপরাধীদের শাস্তির চেয়ে সংশোধনের বিষয়ে গুরুত্ব বেশি দিতে হবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ডাইল্লা গ্রুপ, এলেক্স গ্রুপ, ইমন গ্রুপ, আনোয়ার ওরফে শুটার আনোয়ার গ্রুপ, আকাশ গ্রুপ, দ্য কিং অব লও ঠেলা গ্রুপ, ডায়মন্ড গ্রুপ, আই ডোন্ট কেয়ার (আইডিসি), মুরগি গ্রুপ, সাব্বির গ্রুপ, শাওন গ্রুপ, ফিল্ম ঝিরঝির, স্টার বন্ড, গ্রুপ টোয়েন্টি ফাইভ, লাড়া দে, লেভেল হাই, দেখে ল-চিনে ল, কোপাইয়া দে গ্রুপ। উত্তরা এলাকার গ্যাংগুলোর মধ্যে রয়েছে নাইন স্টার, পাওয়ার বয়েজ, বিল বস, নাইন এম এম বয়েজ, সুজন ফাইটার, ক্যাসল বয়েজ, আলতাফ জিরো, ভাইপার, তুফান। মিরপুর এলাকায় আছে সুমন গ্যাং, পিচ্চি বাবু, বিহারি রাসেল, বিচ্চু বাহিনী, সাইফুল গ্যাং, বাবু রাজন, রিপন গ্যাং, সাব্বির গ্যাং, নয়ন গ্যাং এবং মোবারক গ্যাং। ধানমন্ডিতে একে ৪৭, নাইন এম এম ও ফাইভ স্টার বন্ড। বংশালে রয়েছে জুম্মন গ্যাং, তেজগাঁওয়ে মাঈনুদ্দিন গ্যাং, মুগদায় চান জাদু, ডেভিড কিং ফল পার্টি, ভলিয়ম টু ও ভান্ডারি। পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজার, কলতাবাজার, পানিটোলা, লালকুঠি, শ্যামবাজার, ইসলামপুর, বাবুবাজারসহ সদরঘাটের পার্শ্ববর্তী এলাকায় ফেরদৌস গ্রুপ, সাজু গ্রুপ, সিনিয়র গ্রুপ, জুনিয়র গ্রুপ, টাইগার গ্রুপ, চিতা গ্রুপ।
পটপরিবর্তনের পর থেকে মোহাম্মদপুর এলাকায় শুরু হয় গণছিনতাইয়ের মতো ঘটনা। কিশোর গ্যাং গ্রুপের মহড়া চলে আদাবরে রাস্তায় রাস্তায়। বেড়ে যায় ছিনতাই। আধিপত্য বিস্তার বা পূর্বশত্রুতার জেরে জোড়া খুনের ঘটনাও ঘটে মোহাম্মদপুর রায়েরবাগ এলাকায়। এসব অপরাধে জড়িত রয়েছে একাধিক কিশোর গ্যাং গ্রুপ। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এলাকায় কিছুদিন পরপর কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যরা গণছিনতাই চালায়, আবার দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয়। সন্ধ্যার পর বাইরে বের হতে ভয় লাগে তাদের। মহড়া দেয়ার সময় বাসাবাড়ির জানালার গ্লাস ভাঙচুর, লাইট ভাঙচুর করে গ্যাংয়ের সদস্যরা।