ঢাকা রোববার, ৩০ মার্চ ২০২৫, ১৬ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কয়েকশ কোটি টাকা বাণিজ্যের আশা

রংপুরে জমজমাট ঈদের বাজার

রংপুরে জমজমাট ঈদের বাজার

মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর এগিয়ে আসছে। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে উদযাপিত হবে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর। তাই সবাই নিজেদের পছন্দের পোশাক কিনতে ভিড় জমাচ্ছেন জেলা শহরের বিভিন্ন নামী, দামি শপিং মলে। প্রতি বছর এ আনন্দে সব পরিবারেই থাকে বাড়তি কেনাকাটার চাপ। আবার রমজান জুড়ে উনায় সেহরি ও ইফতার বাবদও অতিরিক্ত ব্যয় হয়ে থাকে। সব মিলিয়ে এবার রোজায় ভোগব্যয়সহ ঈদকেন্দ্রিক বিভিন্ন ধরনের কেনাকাটায় সারা দেশের ন্যায় রংপুরের মার্কেট ও বিপণিবিতান গুলোর হাজারো দোকানে কয়েক’শ কোটি টাকা বাণিজ্যের প্রত্যাশা করছেন ব্যবসায়ীরা। নগরীর ঘুরে দেখা গেছে, জাহাজ কোম্পানি শপিং কমপ্লেক্স, জেলা পরিষদ মার্কেট, সুপার মার্কেট, আরএমসি মার্কেট, জামাল মার্কেট, ছালেক মার্কেট, রজনীগন্ধ্যা মার্কেট ছাড়াও ইয়োলো, আম্ব্রেলা, ইনফিনিটি, আড়ং, দর্জিবাড়ি, বন্ড, ডায়মন্ড, বেঙ্গলবস, অঞ্জনসহ শতাধিক অত্যাধুনিক শোরুমগুলো আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে। ক্রেতা আকর্ষণে কেনাকাটা করলেই নিশ্চিত উপহার রাখা হয়েছে মার্কেটগুলোর পক্ষ থেকে। ’শপিংমল গুলোতে অফা আর অফার । ৩০% থেকে শুরু করে ৫০% পর্যন্ত অফার । গ্রামিণ চেক, রয়েলিটি মেগামল শোরুম, সমবায় মার্কেটে। সকাল ১০টা থেকে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত প্রচুর লোকের সমাগম হচ্ছে এসব মার্কেটগুলোতে। হালের ফ্যাশনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রতিটি শোরুমে পোশাকের পসরা সাজানো হয়েছে। ভিন্ন ডিজাইনের নতুন কালেকশন এসেছে, বিশেষ করে পাঞ্জাবি, লন-সালওয়ার-কামিজ ও কুর্তিতে দেখা গেছে ভিন্নতা। নামিদামি শপিংমলের শোরুমে শোভা পাচ্ছে হাজার থেকে লাখ টাকা মূল্যের পোশাক। এবার জামদানি ৩ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা, মেয়েদের পাগলু, বিপাশা বসু, জান্নাত-টু, আশিকী-২, জিপসি ৩৫০ থেকে ২৮ হাজার ৫০০ টাকা, ছেলেদের কার্গো জিন্স, থাই, ডিসকার্ড-২, সিম ফিট, ফরমাল টি-শার্ট ৭৫০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা, ছোটদের লেহেঙ্গা, মাসাক্কালী, সিঙ্গেল টপ, টপসেট, গেঞ্জিসেট ১ হাজার ২০০ থেকে ৬ হাজার টাকা, পাঞ্জাবির মধ্যে বড়দের ছোটদের ধুতি কাতান ৩৫০ টাকা থেকে ৫ হাজার এবং আকর্ষণীয় শেরওয়ানি ৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

জেলা পরিষদ সুপার মার্কেটের দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব রশিদুজ্জামান জামান বুলবুল বলেন, ঈদুল ফিতরে সবচেয়ে বেশি কেনাবেচা হয়। ফলে ঈদ অর্থনীতির আকারও বড় হচ্ছে। তবে মানুষের আয়ের বেশির ভাগ খরচ হয়ে যায় দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে। সে কারণে ঈদে বিক্রি বাড়লেও তার হার গতরারের তুলনায় কম। উচ্চ মূল্যস্ফীতিই তার অন্যতম কারণ। তবে ঈদ ঘিরে কয়েক’শ কোটি টাকার ঈদের দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে কেনাকাটার ধুম। নগরীর বিভিন্ন ব্যস্ততম মোড়ের ফুটপাত থেকে অভিজাত শপিংমলে চলছে বেচাবিক্রি। নানা রঙের আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে অভিজাত শপিংমল, মার্কেট ও দোকান। ভাসমান হকাররাও অস্থায়ী টেবিল বসিয়ে বিভিন্ন ধরনের পোশাকের পসরা সাজিয়েছেন। অনেকে আবার ভ্যানে করে বিক্রি করছেন বিভিন্ন ধরনের পোশাক। নিম্নবিত্তের পাশাপাশি মধ্যবিত্তরাও ছুটছেন ফুটপাতের এসব দোকানগুলোতে। সরেজমিনে দেখা যায়, নগরীর গ্রান্ড হোটেল মোড় থেকে ঢাউনহল চত্বর পর্যন্ত সড়কের দুইধারে কাপড়, স্যান্ডেল, জুতা, প্যান্ট-শার্ট, থ্রি পিস, শাড়ি, লুঙ্গি, পাঞ্জাবি, বাচ্চাদের কাপড়, টুপি, আতরসহ বিভিন্ন ধরনের পোশাকের পসরা সাজিয়ে বসেছেন হকাররা। শুধু ওই সড়কেই নয়, নগরীর স্টেশন রোড, মেডিকেল মোড়, হাঁড়িপট্টি রোড, সিও বাজারসহ বিভিন্ন এলাকার ফুটপাত কেন্দ্রিক দোকানগুলোতে জমে উঠেছে ঈদবাজার। এ সব দোকানে চলছে জমজমাট বেচাকেনা। অধিকাংশ ক্রেতারা নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির। সোনালী ব্যাংক করপোরেট শাখার সামনে ফুটপাতে ভ্যানে করে কাপড় বিক্রি করছেন হোসেন।

তিনি বলেন, অনেকে মনে করেন ফুটপাতে মানহীন কাপড় বিক্রি হয়। এ ধারণা একেবারে ঠিক নয়। এখানে ভালো মানের কাপড়ও পাওয়া যায়। আমাদের লাইটিং বিল নেই, দোকান ভাড়া নেই। সমান্য কিছু লাভে কাপড় বিক্রি করলেও চলে। এ কারণে আমাদের ক্রেতা শুধু নিম্নবিত্তরাই না, অনেক মধ্যবিত্তরাও কাপড় কিনতে আসেন। নগরীর সিটি বাজারের সামনে ফুটপাতে কাপড় বিক্রেতা আলী বলেন, কয়েকদিন ধরে বেচাবিক্রি ভালো হচ্ছে। অভিজাত শপিংমল ও মার্কেটের তুলনায় আমাদের ব্যবসা পরিচালনা ব্যয় অনেক কম। এ কারণে অনেক ভালো মানের পণ্য সাশ্রয়ী মূল্যে বিক্রি করতে পারি। এতে ক্রেতারাও সন্তুষ্ট হয়। ফলে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষেরা আমাদের মতো ফুটপাত ও হকারদের কাছ থেকে জিনিসপত্র কিনতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। শহরের বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে জানা যায়, এবারের ঈদে মেয়েদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে পাকিস্তানি পোশাক সারারা-গারারা। তবে শাড়িপ্রেমীদের কাছে ভারতীয় শাড়িই পছন্দ। শহরের আর এমসি মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন ব্র্যান্ড, নন-ব্র্যান্ড ও চায়না থেকে আমদানি করা জুতা কসমেটিকস ও জুয়েলারির দোকানে ভিড় জমাচ্ছেন ক্রেতারা। ছেলে ও মেয়েদের নন ব্র্যান্ডের জামাকাপড় ও শাড়িসহ বিভিন্ন তৈরি পোশাকের দোকানেও ভিড়। এসব দোকানে নিম্নবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তের সামর্থ্যরে মধ্যে সব জিনিস পাওয়া যায়। এ জন্য ভিড়ও বেশি।

রংপুরের সেন্ট্রাল রোড কাপড় পট্টি এলাকা ঘুরে জনতা ট্রেডিং, মদিনা গার্মেন্টস, ব্রাদার্স ট্রেডিংসহ বিভিন্ন বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ বছর সরকার পরিবর্তনের পর বেচাকেনা কমেছে অনেকটা। তারা মনে করেন, ‘দুর্নীতিবাজ ও আগের সময়ের নেতারা যাদের বেতনের বাইরেও ইনকাম ছিল তাদের অবস্থা নড়বড়ে হওয়ায় এখন বাজারে কম আসছেন। এছাড়া মানুষজন খুব হিসাব করে খরচ করছেন।’ শপিংমল গুলোতে অফার আর অফার। মিথিলা গার্মেন্টস এর বিক্রেতা মেহেদি হাসান লিটন বলেন, ‘আগের বছরগুলোতে প্রশাসন বা সরকারি কর্মচারী, নেতাকর্মী ছিল তারা কিনে নিয়ে যেতেন। এমনও হতো, একজনই ২০ হাজার টাকার পোশাক কিনতেন। এ বছর সেরকম ক্রেতা পাচ্ছি না। সবদিক থেকেই ক্রেতা কমেছে। শিশুদের জামাকাপড় বিক্রি এ সময়ে শেষপর্যায়ে থাকে। এ বছর সবই রয়ে গেছে।’

বিক্রেতারা জানান, এ বছর বাজারে পাকিস্তানি পোশাকের চাহিদা বেশি। সিল্ক, জর্জেট ও অরগ্যাঞ্জা কাজের বিভিন্ন পোশাকের দাম ৫ থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে। পাশাপাশি পাকিস্তানি এ সব পোশাকের মাস্টার কপিও পাওয়া যাচ্ছে। যার মূল্য আড়াই থেকে ৪ হাজার টাকার মধ্যে। রংপুর সুপার মার্কেটের সেঁজুতি এক্সক্লুসিভ-এর বিক্রেতা মেহেদি হাসান বলেন, ‘এ বছর পাকিস্তানি পোশাক ট্রেন্ডিংয়ে রয়েছে। সন্ধ্যার পর থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ক্রেতার উপস্থিতি অনেক ভালো। এ জন্য রাত একটা পর্যন্ত মার্কেট খোলা থাকে।’ সেঁজুতি শাড়ী ঘরের বিক্রেতা মুসলিম মিয়া বলেন, ‘ভারতীয় তানা বানা কাতান শাড়ি ও পাকিস্তানি থ্রি-পিস, সারারা-গারারা ও লাক্সারি শিপনসহ অন্যান্য পোশাকের চাহিদা বেশি। এ সব পোশাকের দাম ৫ থেকে ১০ হাজারের মধ্যে।’ বাজার ঘুরে দেখা যায় ফুটপাতে এক থেকে দেড়শো বা তার একটু বেশি দরে পাওয়া যাচ্ছে বাচ্চাদের জামা কাপড়। তরুণ-তরুণীদের সব ধরনের পোশাক মিলছে ৫০০ থেকে হাজার টাকায়। নগরীর সালেক মার্কেটে ঈদ বাজার করতে আসা শামছুল ইসলাম বলেন, ‘সব ধরনের কাপড়ের দাম অনেক বেশি। ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও চাহিদামত ছেলে মেয়েদের কাপড় কিনতে পারছি না।’ পায়রা চত্বরে স্ত্রীসহ পরিবারের জন্য কাপড় কিনতে এসেছেন শিক্ষক মনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘মেয়ের জন্য জামা কিনলাম। পছন্দ তেমন হয়নি, তাও দাম ২৭০০ টাকা। ছেলের জামা কাপড় এখনও কিনতেই পারি নাই। যে দাম তাতে আমাদের মত নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ঈদ যেন ফিকে হয়ে গেছে।’ দিনের চেয়ে রাতে ঈদের বাজারে ক্রেতাদের ভিড় বাড়ছে। তৈরি হচ্ছে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের নিরাপত্তা ঝুঁকি। তাই ঈদ বাজারকে সামনে রেখে জেলার নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে। রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মজিদ আলী বলেন, ‘ঈদ কে সামনে রেখে নগরীর সব মার্কেট ও বিপনী বিতানগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।’ ‘ঈদ কেনাকাটা স্বাচ্ছন্দে ও নির্বিঘ্ন করতে প্রতিটি মার্কেটের সামনে পুলিশ রয়েছে। সেই সঙ্গে সাদা পোশাকে পুলিশের নজরদারি রয়েছে। এছাড়াও নগরীতে যাতে কেনাকাটা শেষে নির্বিঘ্নে মানুষ বাসায় পৌঁছতে পারে সে জন্য পুলিশি টহল ও চেকপোস্ট বসানো হয়েছে।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত