ঢাকা শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫, ২৮ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কুমিল্লায় যুবককে কুপিয়ে হত্যা, আটক চার

কুমিল্লায় যুবককে কুপিয়ে হত্যা, আটক চার

কুমিল্লার তিতাসে পুঞ্জীভূত ক্ষোভ থেকে তিন বন্ধু পরিকল্পিতভাবে খুন করে আরেক বন্ধুকে। ঘটনার ৯ ঘণ্টার মধ্যে চারজনকে আটক করেছে তিতাস থানা পুলিশ। গত শুক্রবার বাদ মাগরিক উপজেলার বলরামপুর ইউনিয়নের গাজীপুর বাস্তুহারা পল্লীতে মো. রুবেল মিয়া (২৭) খুন হয়। গত শুক্রবার রাতে আটক চারজনকে গতকাল শনিবার আদালতে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক আসামিদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, বাস্তুহারা পল্লীর মোহাম্মদ আলীর ছেলে নিহত রুবেল মিয়া, আটক একই এলাকার জয়নাল আবেদীনের ছেলে মোহাম্মদ আলী, শাহজাহানের ছেলে মো. ইয়াছিন এবং কামাল খানের ছেলে মো. তোফাজ্জল পরস্পর চার বন্ধু। তারা এলাকায় মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত এবং তিনজনই মাদকাসক্ত। কিছুদিন আগে ইয়াছিনের স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে যায়। এই চলে যাওয়ার কারণ হিসেবে ইয়াছিন নিহত রুবেলের প্রতি ক্ষিপ্ত ছিল। এছাড়াও সম্প্রতি সময়ে রুবেলের সঙ্গে অপর তিন বন্ধুর ইয়াবা সেবন ও বিক্রির টাকা নিয়েও দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। ঘটনার একদিন আগে একটি মোবাইল ফোন নিয়ে চার বন্ধুর মধ্যে তর্কবির্তক ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এসব কারণে ইয়াছিন পরিকল্পনা করে তোফাজ্জল ও মোহাম্মদ আলীর সহযোগিতায় তাকে উচিত শিক্ষা দিবে। ঘটনার দিন শুক্রবার মাগরিক নামাজের আগে অন্যান্য দিনের মতো মোহাম্মদ আলীর ঘরে অপর তিনবন্ধু রুবেল, ইয়াছিন ও তোফাজ্জল একত্রিত হয়। চারজনের টাকার সমন্বয়ে ৬৫০ টাকা দিয়ে ৩টি ইয়াবা কিনে আনে। ঘরের মেঝে গোল করে বসে দুটি ইয়াবা তারা সেবন করে।

তৃতীয় ইয়াবাটি যখন রুবেল সেবন করা অবস্থা ছিল তখন পেছন থেকে ইয়াছিন হাতুড়ি দিয়ে রুবেলের ঘাড়ে আঘাত করে। এতে রুবেলের ঘাড়ের উপরের অংশ ফেটে রক্তপাত শুরু হয় এবং রুবেল অজ্ঞান হয়ে পড়ে। ইয়াছিন তার ঘর থেকে পেছনে করে হাতুড়ি এনে ছিল। অবস্থা বেগতি দেখে ঘরে থাকা কুড়াল দিয়ে মোহাম্মদ আলীসহ অন্য বন্ধুরা রুবেলের মাথায় একাধিকবার কোপ মারে। মুহূর্তের মধ্যে ঘরের মেঝে রক্তে ভরে যায়। ঘটনাস্থল থেকে ইয়াছিন ও তোফাজ্জল কৌশলে চলে যায় এবং মোহাম্মদ আলী ঘরের পাশে টিউবওয়েলে গোসল করে রক্তাক্ত কাপড় পরিবর্তন করে। এদিকে, ঘটনার পর মোহাম্মদ আলী একই গ্রামের রাশেদ ফরাজীকে তার বাড়িতে আসতে অনুরোধ করে। রাশেদ তাদের ঘরে এসে রক্তাক্ত লাশ দেখে রুবেল খুন হয়েছে বলে চিৎকার করে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়। এসময় স্থানীয় লোকজন মোহাম্মদ আলীকে আটক করে। ঘটনাস্থলে মোহাম্মদ আলীর পিতা জয়নাল আবেদীন উপস্থিত হলে স্থানীয় লোকজন তাকেও আটক করে বাবা-ছেলেকে পুলিশে দেয়।

খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে রাত ৯টায় লাশ থানায় নিয়ে আসে এবং আটক মোহাম্মদ আলীর স্বীকারোক্তিতে রাতেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে অপর দুই বন্ধু ইয়াছিন ও তোফাজ্জলকে বাস্তুহারা এলাকা থেকে আটক করে।

তিতাস থানার ওসি মোহাম্মদ মামুনুর রশীদ জানান, মূলত বিভিন্ন কারণে জমে থাকা ক্ষোভ থেকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে তিন বন্ধু মিলে রুবেলকে খুন করে। নিহত রুবেল ও আসামি ইয়াছিন একাধিক হত্যাকাণ্ড ও ডাকাতি মামলার আসামি। উক্ত ঘটনায় নিহতের বড় ভাই জিয়াউল রহমান বাদী হয়ে আটক চারজনের নাম উল্লেখসহ ৩-৪ জন অজ্ঞাতনামা রেখে একটি হত্যা মামলা করেছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত