ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ৪ বৈশাখ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

কিউলেক্স মশার দখলে চট্টগ্রাম মহানগরী

কিউলেক্স মশার দখলে চট্টগ্রাম মহানগরী

মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ চট্টগ্রাম নগরীর লাখো বাসিন্দা। সন্ধ্যার পর বাসাবাড়িতে ঝাঁকে ঝাঁকে হানা দেয় মশা। ৬০ বর্গকিলোমিটারের নগরীতে কোথাও স্বস্তি নেই। বাসাবাড়িতে যেন জেঁকে বসেছে মশা। ১০তলা ভবনের ৭-৮ তলায়ও মশার যন্ত্রণা। লোকজনের প্রশ্ন হঠাৎ করে, এত মশা কোত্থেকে এলো। খোদ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তাও বলছেন, হঠাৎ বেড়েছে মশা। মশা নিয়ে আমরাও যন্ত্রনায় আছি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, নগরীর ১৬০০ কিলোমিটার ড্রেন একযোগে পরিষ্কার কাজ শুরু করেছে চসিক। এতে ড্রেনের ভেতর থাকা মশা বেরিয়ে আবাসিক এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। তবে বরাবরের মতো নগরবাসীর অভিযোগ, চসিক মশক নিধনে কিছু করছে না।

অন্যদিকে চসিক বলছেন, পরিচ্ছন্ন বিভাগ মশক নিধনে কাজ শুরু করেছে। গত মঙ্গলবার বিভাগের কর্মীদের সাথে বৈঠক করেন মেয়র। মশক নিধনে নানা দিক নির্দেশনা দেয়া হয় সেই বৈঠকে। মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বৈঠকে বলেন, যৌক্তিক কারণ ছাড়া সাতদিন অনুপস্থিত থাকলে বরখাস্ত করা হবে। মশার হঠাৎ উৎপাত বেড়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার আই ইউ এ চৌধুরী। তিনি জানান, আসলেই মশার উপদ্রব বেড়ে গেছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা চিন্তায় আছি। তবে মশক নিধনে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আশা করছি মশার উপদ্রুপ কমবে।

এই মৌসুমে মশার উৎপাত কম থাকে। কিন্তু এত মশার এলো কীভাবে এ প্রশ্নে তিনি বলেন, হঠাৎ মশার উৎপাত বেড়ে গেছে কথাটি সত্য। এর অন্যতম একটি কারণ পরিচ্ছন্নতা কাজের জন্য নগরীতে ড্রেনগুলো খোলা হচ্ছে একযোগে। এতে ড্রেনের ভেতর থাকা মশাগুলো বেরিয়ে এসে ছড়িয়ে পড়েছে। বাসাবাড়িতে ঝাঁকে ঝাঁকে প্রবেশ করছে। আশা করছি, ওয়ার্ডভিত্তিক মশার ওষুধ তেল ছিটানো হবে। স্প্রে করা হবে বিভিন্ন স্থানে। এরপর মশার উৎপাত কমবে। প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার আই ইউ এ চৌধুরী বলেন, এডাল্টিসাইড পর্যাপ্ত মজুত আছে। জোরদার স্প্রে শুরু হলে মশক নিধন কমবে।

চসিকের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো. সরফুল ইসলাম মাহি জানান, এখন ছড়িয়ে পড়া মশার সবগুলো কিউলেক্স মশা। মশক নিধনে ২৫ হাজার লিটার ওষুধ কেনার টেন্ডার করা হয়। সাড়ে ১২ হাজার লিটার সরবরাহ পৌঁছে গেছে। আমরা প্রতিটি ওয়ার্ডে আগে দু’বেলা করে মশার ওষুধ ছিটাতাম। এখন তিনবেলা করে দিচ্ছি। আশা করছি মশা নিয়ন্ত্রণে আসবে।

খালে ড্রেনে বর্জ্যরে কারণে মশার ওষুধ লার্ভা পর্যন্ত পৌঁছে না জানিয়ে তিনি বলেন, পানিতে লার্ভা থাকে। সেখানে ওষুধ পৌঁছালে মশার বংশ বিস্তার রোধ হয়। কিন্তু আবর্জনা বর্জ্যের কারণে ওষুধ ছিটানো হলেও অনেক সময় লার্ভা পর্যন্ত যেতে পারে না। তাই মশার ওষুধ ছিটালেও সবখানে সমান কার্যকর হয় না।

নগরীতে ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার ড্রেন পরিষ্কার করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, এর মধ্যে অন্তত ৫০০ কিলোমিটার ড্রেন পরিষ্কার হয়ে গেছে। বাকিগুলো দ্রুত পরিস্কার করা হবে।

চট্টগ্রাম মহানগরীতে কিউলেক্স মশার উপদ্রব বেড়ে গেছে। যা সাধারণত শুষ্ক মৌসুমে জন্ম নেয় এবং তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত বংশবিস্তার করে। সাধারণত বছরের ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত এই মশার বিস্তার হয়। তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে কিউলেক্স মশার উপদ্রবও বেড়ে যায়। চসিক মশা ধ্বংসের জন্য ২৫ হাজার লিটার এডাল্টিসাইড সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মশার এমন লাগামহীন উৎপাত মশক নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের ব্যর্থতার চিত্রকেই স্পষ্ট করে তোলে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া উচিত, নতুবা মশার যন্ত্রণা থেকে নগরবাসীর সহসা মুক্তি মিলবে না।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত