সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব এহসানুল হক বলেছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিরাপদ সড়ক পদ্ধতির আলোকে দেশে একটি সার্বিক সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়নে সরকার দৃঢ়ভাবে অঙ্গীকারাবদ্ধ। তিনি বলেন, সরকার সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি অংশীজনদের সমন্বয়ে খসড়া আইন প্রণয়নের কাজ করছে। আশা করি, আগামী দিনে সরকারের সমন্বিত কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশের সড়কসমূহ নিরাপদ হয়ে উঠবে। গতকাল বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে দিনব্যাপী ‘বাংলাদেশ সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক’ শীর্ষক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস ইনিশিয়েটিভ ফর গ্লোবাল রোড সেফটি (বিআইজিআরএস) যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি), ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি), চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (সিসিসি) ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) এ সভা আয়োজনে সহযোগিতা করে। সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিসের সড়ক নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিচালক কেলি লারসন, ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সাইদ মো. কামরুজ্জামান, ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. সারওয়ার, সিসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম তৌহিদুল ইসলাম, গ্লোবাল রোড সেফটি পার্টনারশিপ (জিআরএসপি) প্রতিনিধি তাইফুর রহমান প্রমুখ।
বিআইজিআরএসের ইনিশিয়েটিভ কোঅর্ডিনেটর-ঢাকা মো. আবদুল ওয়াদুদ সভা সঞ্চালনা করেন। কেলি লারসন বলেন, বিআইজিআরএসের মাধ্যমে ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস সড়ক নিরাপত্তার মাধ্যমে মানুষের জীবন বাঁচাতে পৃথিবীর ২৭টি শহরে কাজ করছে। ২০২০ সালে ঢাকা উত্তর ও চট্টগ্রাম সিটি এ উদ্যোগে যুক্ত হয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে শহরের সড়ক নিরাপদ করতে কাজ করছে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সরকার বৈশ্বিক উদাহরণ কাজেলাগিয়ে গতি নিয়ন্ত্রণে সড়ক, মহাসড়ক ও যানবাহনের ধরন অনুযায়ী গতিসীমা নির্ধারণ করে একটি গাইডলাইন প্রণয়ন করেছে। এর কার্যকর বাস্তবায়ন গতি কমাবে, জীবন বাঁচাবে। আবু সাঈদ মো. কামরুজ্জামান বলেন, বিআইজিআরএসের আওতায় আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউটের (ডব্লিউআরআই) কারিগরি সহায়তায় ডিএনসিসি বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল সংলগ্ন এলাকাকে নিরাপদ এলাকা ও মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকাকে নিরাপদ করে পুননির্মাণ করেছে।
তিনি আরও বলেন, এছাড়া ১৬০ জন নগর পরিকল্পনাবিদ ও প্রকৌশলী এবং ৫০ জন সাংবাদিককে সড়ক নিরাপত্তার বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। মো. সারওয়ার বলেন, সড়ক নিরাপত্তার লক্ষ্যে ডিএমপির বিভিন্ন উদ্যোগ চলমান রয়েছে। ডিএনসিসির সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে রোড ক্রাশের তথ্য বিশ্লেষণ করে ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক চিহ্নিত করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা জিআরিএসপির সহায়তায় পুলিশ অফিসারদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। এসএম তৌহিদুল ইসলাম সড়ক নিরাপত্তায় আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতার আলোকে দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়ায় ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিসকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, ‘সড়ক নিরাপত্তায় আমরা মাত্র কাজ শুরু করেছি। আশা করছি, আগামী দিনে চট্টগ্রামের সড়ক ব্যবহারকারীরা এর সুফল পাবেন।’ সভায় ঢাকা উত্তর সিটি ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিতে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিতকরণ ও পুনর্নির্মাণ গতিরোধক স্থাপন, ফুটপাথ দখলমুক্তকরণের মতো গৃহীত উদ্যোগগুলো তুলে ধরা হয়। উভয় শহরেই জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে গণমাধ্যমকে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে সাংবাদিকদের জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে, যার আওতায় প্রায় একশ’ সাংবাদিক সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। এছাড়া বিআইজিআরএস কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ডিএমপি ও সিএমপির কর্মকর্তাদের নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতে গতিসীমা বাস্তবায়ন ও সড়ক আইন প্রয়োগ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছে জিআরএসপি।
উল্লেখ্য, সভায় ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিগত দিনের অর্জন তুলে ধরেন বিআইজিআরএস-ঢাকার ইনিশিয়েটিভ কোঅর্ডিনেটর মো. আবদুল ওয়াদুদ ও চট্টগ্রামের ইনিশিয়েটিভ কোঅর্ডিনেটর লাবিজ তাজওয়ান উৎসব।