অপর্যাপ্তভাবে পরিশোধিত বা অপরিশোধিত বর্জ্যজল যদি স্বাভাবিক জলাশয়ে জমা হয়ে জলাশয় দূষিত করে, তাকে পানি দূষণ ( Water Pollution) বলে। সাধারণত যেসব কারণে পানি দূষণ হয় তা হলো, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণজাত বর্জ্য, কীটনাশক এবং ভেষজনাশক, বিভিন্ন ধরনের অর্গ্যানোহ্যালাইডস এবং অন্যান্য রাসায়নিক যৌগ পেট্রলিয়াম হাইড্রোকার্বন, যেমন পেট্রল, ডিজেল জ্বালানি, জেট জ্বালানি এবং জ্বালানি তেল, মোটর তেল, অনুপযুক্ত সঞ্চয়স্থান থেকে ছড়িয়ে পড়া কারখানার দ্রবক, ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি দ্রব্য এবং প্রসাধনী দ্রব্যে উপস্থিত বিভিন্ন রাসায়নিক যৌগড্রাগ, ড্রাগ, বিপাকজাত দ্রব্য, গর্ভনিরোধক বড়ির মতো হরমোন ওষুধ।
অজৈব জল দূষণকারী পদার্থগুলোর মধ্যে রয়েছে : শিল্পকারখানার বর্জ্য বিশেষ করে তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের সালফার ডাই-অক্সাইড, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের বর্জ্য থেকে প্রাপ্ত অ্যামোনিয়া, শিল্পকারখানার উপজাত হিসেবে প্রাপ্ত রাসায়নিক বর্জ্য, নাইট্রেট এবং ফসফেট জাতীয় উপাদানযুক্ত সার, যা কৃষিজমি থেকে এবং বাণিজ্যিক ও গৃহস্থ ব্যবহারের ফলেও বৃষ্টির জলের সঙ্গে যুক্ত হয়, মোটর গাড়ির ভারী ধাতু, খনির নর্দমা, মাটিতে মানুষের দ্বারা পরিত্যক্ত আবর্জনা যেমন, কাগজ, প্লাস্টিক অথবা নষ্ট খাবার, পরিত্যক্ত ভাঙা জাহাজ, এর সঙ্গে রয়েছে দুর্ঘটনাপ্রযুক্ত অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে আবর্জনার স্তূপ তৈরি, যা বৃষ্টির পানির সঙ্গে ধুয়ে যায় এবং ভূপৃষ্ঠতলীয় জলে উন্মুক্ত হয়।
পানি দূষণ রোধে ইসলাম কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে। জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী করিম (সা.) বদ্ধ পানিতে পেশাব করতে নিষেধ করেছেন।’ (মুসলিম : ৫৪৮)।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কারও উচিত নয়, স্থির পানি যা প্রবাহিত হয় না সেখানে পেশাব করা, অতঃপর সেখানে গোসল করা।’ (বোখারি : ২৪০)। কেননা, পেশাবের ভেতর এমন কিছু উপাদান আছে, যা শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
অজু করার আগে পাত্রের পানি যেন দূষিত না হয় এজন্য উচিত হাত ধুয়ে নেয়া। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ ঘুম থেকে উঠে হাত না ধুয়ে যেন পানির পাত্রে হাত না দেয়। কারণ সে জানে না, রাতে তার হাত কোথায় ছিল।’ (মুসলিম : ৫৩৬)।
রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা (খাবারের) পাত্র ঢেকে রাখ (পানির) মশকের মুখ বন্ধ করে রাখ, কেননা, বছরে এমন রাত্রি আছে, যাতে মহামারি অবতরণ করে। সেই মহামারি যে খোলা পাত্র ও পানির মশকের পাশ দিয়ে অতিক্রম করে, তাতেই পতিত হয়। (মুসলিম : ৫০৮৫)। পানিকে পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য এ হাদিসে বলা হয়েছে। যদি তা খোলা থাকে তাহলে সেখানে পোকাণ্ডমাকড় বা ধুলাবালুর মাধ্যমে তা দূষিত হয়ে পড়ে। তাই পানির পাত্র ঢাকে রাখতে বলা হয়েছে। এভাবে ইসলাম পানিকে দূষণমুক্ত রাখতে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছে।