আল্লাহতায়ালার মানুষকে দেয়া নেয়ামতের মধ্যে অন্যতম একটি হলো সম্পদ। মানুষ কোন পথে আয় করবে ইসলাম তার যেমন নির্দেশনা দিয়েছে, ঠিক তা কোন পথে ব্যয় করবে তারও স্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনীয় ও শরিয়ত অনুমোদিত ক্ষেত্রে ব্যয় না করা কিংবা কম ব্যয় করা যেমন কৃপণতা তেমনি মাত্রাতিরিক্ত ব্যয় করা বা সম্পদ বিনষ্ট করা অপচয় এবং অপব্যায়ের শামিল। কোনটা প্রয়োজন আর কোনটা অপব্যায় আসুন, কোরআন ও হাদিসের আলোকে দেখে নেই।
১. আত্মীয় ও অভাবীদের দান করা : এটি প্রয়োজন ও দায়িত্ব। আল্লাহ পবিত্র কালামে এরশাদ করেন : ‘আত্মীয়স্বজনকে তার হক দান কর এবং দান কর অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকেও। কিছুতেই অপব্যয় করো না। নিশ্চয়ই অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। আর শয়তান স্বীয় পালনকর্তার প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ।’ (সুরা বনি ইসরাইল : ২৬-২৭)।
২. সুসজ্জিত ও পরিপাটিভাবে নামাজ পড়া : পোশাক-পরিচ্ছেদের মাধ্যমে আমরা আমাদের আভিজাত্য ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করি। বাসাবাড়িতে বিলাসবহুল আসবাবপত্র দিয়ে ক্ষণস্থায়ী জীবনকে পরিপাটি করি। কিন্তু নামাজের ক্ষেত্রে আমরা অবহেলা কিংবা অবজ্ঞায় নিম্নমানের পোশাক, ছোট পোশাক বা অব্যবহৃত পোশাক পরেও আমরা নামাজ পড়ে থাকি। অথচ এ বিষয়ে আল্লাহর বিধান হচ্ছে: ‘হে বনি-আদম তোমরা প্রত্যেক নামাজের সময় সাজসজ্জা পরিধান করে নাও। খাও এবং পান করো আর অপব্যয় করো না। তিনি অপব্যয়কারীদের পছন্দ করেন না। (সুরা আরাফ : ৩১)।
৩. প্রয়োজনের অতিরিক্ত অপব্যয় : আমরা বাসাবাড়িকে পরিচ্ছন্ন পরিপাটি এবং বিলাসবহুল করে সাজানোর জন্য প্রতিটি রুম ভিন্ন ভিন্ন নকশা এবং ভিন্ন ভিন্ন ডিজাইনের কারুকার্যে শোভিত করার চেষ্টা করি। এক্ষেত্রে আমরা অপব্যয়ের চূড়ান্ত মাত্রার পৌঁছে যাই।
অথচ জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন: ‘কারও ঘরে একটি বিছানা (যদি থাকে) তার জন্য, অপরটি তার স্ত্রীর জন্য, তৃতীয়টি মেহমানের জন্য এবং চতুর্থটি শয়তানের জন্য।’ (মুসলিম : ২০৮৪)।
আলোচ্য হাদিসটি আমাদের অপব্যয় কী, তা স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিয়েছে।
৪. অভ্যাসগত অপচয় : পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ নানাবিধ ক্ষেত্রে আমরা এমনভাবে অপচয় করি যে, এগুলোকে কোনো বিষয় বলেই গণ্য করি না। বিশ্বব্যাপী দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি, নগরায়ণ এবং কৃষিকাজে পানির অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমেই নিচে নেমে যাচ্ছে। পোল্যান্ড, সোমালিয়া, পাকিস্তান, সুদান, নাইজেরিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সুপেয় পানির অভাবে মানুষ রোগাক্রান্ত হচ্ছে। বিদ্যুতের অপচয়ের ফলে আমাদের দেশসহ উন্নত দেশগুলোতে লোডশেডিং তীব্র হচ্ছে। বাসাবাড়ি ও কলকারখানায় গ্যাসের অপব্যবহারের ফলে আমাদের দেশের শিল্প-কলকারখানাগুলো আজ ঝিমিয়ে পড়ছে। তবুও আমরা এগুলোকে আমলে নিচ্ছি না।
অথচ একদা সা’দ (রা.) অজু করার সময় রাসুল (সা.) তার কাছ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। রাসুল (সা.) বললেন : সা’দ! এ অপচয় কেন? সা’দ (রা.) বললেন : অজুর মধ্যে অপচয় আছে? রাসুল (সা.) বললেন : হ্যাঁ! তুমি প্রবহমান নদীর তীরেই থাকো না কেন (তবুও পানির ক্ষেত্রে অপচয় করতে পারবে না)। (মুসনাদে আহমদ : ৭০৬৫)।
৫. কৃপণতা : আল্লাহ মানুষের প্রয়োজন ও সদকা করার জন্য নেয়ামত হিসেবে সম্পদ দিয়েছেন। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যারা কৃপণতা করে নিজের পরিবার, সন্তান ও আত্মীয়স্বজনকে অভাব-অনটনে রাখে, তাদের প্রয়োজনে নিজের অর্থ খরচ করে না, আল্লাহর রাস্তায় দান-সদকা করে না, তাদের জন্য ভয়ঙ্কর সতর্কবাণী পবিত্র কালামে পাকে উল্লেখ রয়েছে। আল্লাহ বলেন : ‘আল্লাহ তাদেরকে নিজের অনুগ্রহে যা দান করেছেন, তাতে যারা কৃপণতা করে, এই কার্পণ্য তাদের জন্য মঙ্গলজনক হবে- তারা যেন এমন ধারণা না করে। বরং এটা তাদের পক্ষে একান্তই ক্ষতিকর হিসেবে প্রতিপন্ন হবে, যাতে তারা কার্পণ্য করে, সেসব ধন-সম্পদকে কেয়ামতের দিন তাদের গলায় বেড়ি বানিয়ে পরানো হবে।’ (আল ইমরান : ১৮০)।
লেখক : শিক্ষক, প্যারামাউন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, রাজশাহী