বর্তমান আধুনিক সমাজের খুবই পরিচিত একটি শব্দ ‘রিলেশনশিপ’। আমরা কম-বেশি সব বয়সি ছেলে-মেয়েই এই শব্দটির সঙ্গে পরিচিত। আভিধানিক দিক থেকে শব্দটির বেশ কয়েকটি অর্থ রয়েছে। যেমন ঃ সম্পর্ক, আত্মীয়তা, জ্ঞাতিত্ব, অন্তরঙ্গতা ইত্যাদি। একটু বৃহৎ পরিসরে যদি আমরা বলতে চাই তাহলে রিলেশনশিপ মানে হলো ব্যক্তিদের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ক বা আত্মীয়তা। অর্থাৎ বাবা-মায়ের সঙ্গে সন্তানের সম্পর্ক, ভাই-বোনের সম্পর্ক, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক, আরও অন্যান্য যে সম্পর্ক রয়েছে সাধারণত সেগুলোই বোঝায়। কিন্তু এখন আধুনিক সমাজে বিয়ের আগেই ছেলেমেয়েদের মধ্যে যে প্রণয় বা ঘনিষ্ঠতা রয়েছে, সেটাকে রিলেশনশিপ বলে। হ্যাঁ ঠিক তাই, আধুনিক সমাজ এই অবাধ মেলামেশা ও চালচলনকেই রিলেশনশিপ নাম দিয়েছে।
এবার ইসলাম এই শব্দটিকে কীভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে, সেটা একটু বলা যাক। কোরআনের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী, বৈধ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া ব্যতীত পুরুষ ও মহিলার মধ্যকার কোনো ধরনের যৌন ক্রিয়াকলাপ, সম্পর্ক কিংবা কথাবার্তা বা চালচলনকে জেনা বলে।
আমাদের ডিজিটাল সমাজ যে শব্দটিকে রিলেশনশিপ বলছে, সেটাকে ইসলাম জেনা-ব্যভিচার বলে। রাসুল (সা.) এর একটি হাদিসের মাধ্যমে বিষয়টি আরেকটু পরিষ্কার করা যেতে পারে। সহিহ মুসলিম শরিফে এসেছে যে, ‘চোখের জেনা হলো দেখা, কানের জেনা শোনা, জিহ্বার জেনা বলা, হাতের জেনা ধরা, পায়ের জেনা হলো হাঁটা, মন কামনা করে আর লজ্জাস্থান তা সত্য বা মিথ্যায় পরিণত করে।’ আর এই বিষয়ে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলছেন, ‘তোমরা জেনার নিকটবর্তীও হয়ো না, নিশ্চয় তা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট আচরণ।’ (সুরা বনি ইসরাইল : ৩২)।
আর এই জেনার ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে রাসুল (সা.)-এর অসংখ্য হাদিসে সতর্ক করা হয়েছে। যেখানে দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জাহানে লাঞ্ছনা-গঞ্জনা এবং কঠিন শাস্তির হুঁশিয়ারি করা হয়েছে। আজ পারিবারিক প্রেক্ষাপটের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই যে, কত ভঙ্গুরতা, কত দূরত্ব স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কের মাঝে। একটা প্রশ্ন তাদের উভয়ের, তোমার কি বিয়ের আগে কোনো রিলেশন ছিল? কী সাধারণ জিজ্ঞাসা! দিন শেষে দু’জনেই সেই রিলেশন নামক পাপে জর্জরিত হয়ে আছে। যার ফলশ্রুতিতে বাড়ছে সন্দেহ, হচ্ছে অমিল, কমছে ভালোবাসা, দিচ্ছে ডিভোর্স।
আধুনিক সমাজের পাটাতলে পড়ে আজ আমরা রিলেশনশিপ নামে জেনার নোংরামি বুঝতে পারি না। পারি না কোরআন-সুন্নাহের জ্ঞান ধারণ করে প্রচলিত ভয়াবহ ও নিকৃষ্ট ফেতনাগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে। যার ফলে আজ আমরা প্রকৃত প্রশান্তির আলো থেকে বঞ্চিত হয়ে অন্ধকার বিভীষিকায় পথ চলতে বারবার হোঁচট খাচ্ছি।
তাই বলতে চাই, কোরআন-হাদিসে যা বলা হয়েছে, তাই কেয়ামত নাগাদ বিদ্যমান থাকবে। একটি শব্দকে অন্য ভাষায় পরিবর্তন করলেই তার আসল রূপ কোনোদিন পাল্টে যাবে না। আমাদের যেকোনো অবস্থান থেকেই ইসলামের আসল রূপকে জানা উচিত এবং সেই অনুসারেই জীবনকে গড়ে তোলা আবশ্যক।