ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ইসলামে দ্বিতীয় বিয়ে : একটি পর্যালোচনা

মুহাম্মদ আব্দুল হাই সাইফুল্লাহ
ইসলামে দ্বিতীয় বিয়ে : একটি পর্যালোচনা

ইসলামে প্রয়োজনে দ্বিতীয় বিয়ে করাকে জায়েজ করেছে এটা সত্য কথা। কিন্তু একাধিক বিয়েকে কখনও উৎসাহিত করেনি। কোরআন, হাদিস, সিরাতে সাহাবা ও সলফে সালেহিনদের জীবন চরিত্র গভীরভাবে অধ্যয়ন করলে এটি স্পষ্ট প্রতিয়মান হয়। বহুবিবাহের ফজিলতের চেয়ে শরিয়ত মাসআলা বেশি বলে শর্তারূপ করেছে।

ইদানীংকালে নেট দুনিয়া স্বল্পশিক্ষিত ও অতিউৎসাহী কিছু নেটিজন এটিকে ব্যাপক প্রচারণা ও প্রমোট করছেন দেখে অবাক হতে হয়। রাসুল (সা.) বা সাহাবায়ে কেরামের আমলে একাধিক বিয়েকে উৎসাহিত করার ঘটনা খুঁজে পাওয়া যায় না। তারা যা করেছিলেন সেটি প্রয়োজনের তাগিদে, নিজের যৌন চাহিদা বা খায়েশাত পূরণ করার জন্য কখনও নয়।

কোরআনের যে আয়াত দিয়ে বহুবিবাহকে জায়েজ করা হয়েছে এবং এর দলিল পেশ করা হয়, সেই আয়াতেই সয়ং আল্লাহতায়ালা দ্বিতীয় বিবাহকে অযথাই উৎসাহিত করেননি। কারণ একাধিক স্ত্রী থাকলে তাদের সবার মধ্যে সমতা বিধান করা স্বামীর কর্তব্য। কারও ক্ষেত্রে কম-বেশি হলে শেষ বিচারের দিন স্বামীকে জবাবদিহি করতে হবে এবং শাস্তি পেতে হবে। কোরআনে সুরা নিসায় বলা হয়েছে- ‘যদি তোমরা আশঙ্কা কর, এতিমের প্রতি ইনসাফ করতে পারবে না, তাহলে যেসব মহিলা তোমাদের পছন্দ হয় তাদের মধ্যে থেকে এক, দুই, তিন বা চারজনকে বিয়ে করে নাও। কিন্তু যদি তোমাদের আশঙ্কা হয় যে তোমরা তাদের মধ্যে ইনসাফ করতে পারবে না, তাহলে একজনকেই বিয়ে কর। অথবা ওইসব মহিলাকে বিবি বানাও, যারা তোমাদের মালিকানায় এসেছে। অবিচার থেকে বাঁচার জন্য এটাই বেশি সহজ।’ (সুরা নিসা : ৩)

এ আয়াতটি নাজিল হয় ওহুদ যুদ্ধের পরক্ষণেই। ওহুদ যুদ্ধে অনেক মুসলিম শহীদ হন। তাদের স্ত্রী ও সন্তানেরা অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে। তাদের খাদ্য, আশ্রয় ও পারিবারিক পরিবেশের প্রয়োজন ছিল। এ কারণে তাদেরকে বিভিন্নজনের তত্ত্বাবধানে রাখা হলো। বোখারি শরিফে আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, এক ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে একটি এতিম মেয়ে ছিল। সে ব্যক্তির একটি বাগান ছিল, যার মধ্যে উক্ত এতিম বালিকাটিরও অংশ ছিল। সে ব্যক্তি ওই মেয়েটিকে বিয়ে করে নিল এবং নিজের পক্ষ থেকে ‘দেনমোহর’ আদায় তো করলোই না, বরং বাগানে মেয়েটির যে অংশ ছিল তাও সে আত্মসাৎ করে নিল। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে উপরোক্ত আয়াত নাজিল হয়।

এ আয়াতটি সর্তকতার সঙ্গে পড়লে কয়েকটি ব্যাপার পরিষ্কার হয়ে আসে।

১. বহুবিবাহ মুসলমানদের জন্য ‘অত্যাবশ্যক’ (ফরজ) বা পছন্দনীয় (মুস্তাহাব) কিছু নয়। বিশেষ কিছু অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সুযোগ মাত্র।

২. একের অধিক বিয়ে শর্তযুক্ত। শর্তপূরণের সাপেক্ষেই এটি হালাল হয়।

৩. সমতা বিধান না করতে পারলে একটি বিবাহে সন্তুষ্ট থাকতে স্পষ্ট নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ সমতা বিধান না করতে পারলে একাধিক বিবাহ নিষিদ্ধ।

৪. সমতা বিধান ফরজ।

৫. ইসলাম বহুবিবাহকে নিষিদ্ধ করেনি তবে নিরুৎসাহিত করেছে।

‘আর যদি তোমরা আশঙ্কা কর যে, সুবিচার করতে পারবে না তবে একজনেই সন্তুষ্ট থাক।’ (সুরা নিসা : ৩)। অর্থাৎ ঢালাওভাবে সব পুরুষের জন্য সব পরিস্থিতিতে বহুবিবাহকে আল্লাহ জায়েজ করেননি। আমাদের দেশে অনেকের এ ভুল ধারণা রয়েছে যে, একাধিক স্ত্রী গ্রহণ সওয়াবের কাজ। ধারণাটি ভুল। বিশেষ অবস্থায় শর্তসাপেক্ষে এটি মুবাহ মাত্র। অপ্রয়োজনে একাধিক স্ত্রী গ্রহণ আল্লাহ নিষিদ্ধ করেছেন। (দ্রষ্টব্য- নিসা : ৩)।

যারা একাধিক স্ত্রী গ্রহণ করেন তারা আল্লাহর দেয়া শর্ত ‘সমব্যবহার’ অনেক ক্ষেত্রেই করেন না, এক্ষেত্রে সমব্যবহার হলো- একই মানের বাসস্থান। একই মানের খাদ্য। একই মানের পোশাক। একই মানের সুযোগ সুবিধা (যেমন চিকিৎসা, বিনোদন ইত্যাদি)। সমপরিমাণ সময় দান। রাসুল (সা.) তার অল্পবয়স্কা স্ত্রী আয়েশা (রা.) এর জন্য যতদিন বরাদ্দ করেছিলেন বৃদ্ধা স্ত্রী সাওদা এর জন্যও ততদিনই বরাদ্দ করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে তার নিজের দিনটি আয়েশা (রা.)-কে দিয়ে দেন। কাজেই যারা এরূপ সমব্যবহার করতে পারবে না, তাদের জন্য একাধিক বিবাহ হালাল নয় বরং এক স্ত্রী গ্রহণ ফরজ। (সুরা নিসা : ৩)

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর একাধিক স্ত্রী বর্তমান বিদ্যমান ছিল। আর তিনি ছিলেন আদল ও ইনসাফের মূর্ত প্রতীক। সব স্ত্রীকে সমান মর্যাদা দান করতেন। স্ত্রীদের জন্য যতটুকু সময় ব্যয় করতেন, তা সবার জন্য সমানভাবে ভাগ করতেন। এভাবে সাওদাসহ আরও কয়েকজন স্ত্রী সমানভাবে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আরাম ও প্রশান্তি লাভের সময়ের ভাগ পেতেন। কিন্তু মূলত তাদের বয়সের কারণে তারা রাসুল (সা.)-কে প্রশান্তি দিতে অক্ষম ছিলেন। স্বেচ্ছায় নিজের অধিকার সতীন আয়েশা (রা.)-এর অনুকূলে ছেড়ে দিয়ে রাসুল (সা.)-কে দায়মুক্ত করেন।

আরও বলা হয়েছে- ‘তোমরা যতই আগ্রহ রাখো না কেন, তোমাদের স্ত্রীদের প্রতি সমান ব্যবহার করতে কখনও সক্ষম হবে না।’ (সুরা নিসা : ১২৯)। এ ব্যপারে নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তির দুইজন স্ত্রী আছে, কিন্তু তার মধ্যে একজনের দিকে ঝুঁকে যায়, এরূপ ব্যক্তি কিয়ামতের দিন অর্ধদেহ ধসা অবস্থায় উপস্থিত হবে।’ (আহমেদ ২/৩৪৭; আসবে সুনান; হাকিম ২/১৮৬) ইবনে হিব্বান ৪১৯)।

উপরোক্ত দলিল থেকে এটা স্পষ্ট বুঝা যায় যে, বহুবিবাহ শর্ত সাপেক্ষে জায়েজ; কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বিনা প্রয়োজনে খাহেশাতে বা সমতা রক্ষা করতে না পারলে বহুবিবাহকে নিরুৎসাহিতই বেশি করা হয়েছে। ইসলামে একের অধিক বিবাহকে প্রয়োজনে জায়েজ করা হয়েছে এটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ বিয়ের অনুমতি দেয়ার প্রেক্ষাপট নিয়ে বা প্রাসঙ্গিক শর্তাবলি নিয়ে আলোচনা কম হয়। রাসুল (সা.) এর জীবন-চরিত্র ও সিরাতের সঙ্গে এটিকে না মিলিয়েই আম আওয়াজ তুলতে চাই।

নবীজি খাদিজা (রা.)-এর জীবদ্দশায় কোনো নারীকে বিয়ে করেননি। এটিও একটি সুন্নত। দীর্ঘ ২৪ বছর সংসার করেছেন। আপনি আগে ২৪ বছর একজন নিয়ে সংসার করুন তার পরে দ্বিতীয় বিয়ের সুন্নত পালন করুন। এটি তো নবীজির শিক্ষা।

বহুবিবাহের আয়াত নাজিল হয়েছিল ওহুদ যুদ্ধের পর। মাসনা থেকে আয়াত শুরু হওয়ার কারণ ও প্রেক্ষাপট এটি। আয়াতের শানেনুজুল পড়ুন। যখন বিপুল পরিমাণ মুসলিম পুরুষ সৈন্য মারা গেলেন। নারীরা তখন কেউ বিধবা হলো, কেউ এতিম হলো। স্বাভাবিকভাবেই পুরুষের সংখ্যা কমে গেল। বহুবিবাহ ছাড়া সব মেয়ের জন্য স্বামীর ব্যবস্থা করা সম্ভব ছিল না। এ প্রেক্ষাপটে আল্লাহ জায়েজ ঘোষণা করেছেন; কিন্তু শর্ত ও নিরুৎসাহিতের সঙ্গে। আর এখানে নারীর সম্মান, মর্যাদা ও সম্ভ্রম সুরক্ষাই মূল উদ্দেশ্য। (বিস্তারিত দেখুন : তাফসিরে মা’আরেফুল কোরআন : ২/২৮৬-২৯৫, আনওয়ারুল বয়ান : ২/২৩৫, তাফসির ফি জিলালিল কোরআন : ১/৫৭৭-৫৮৩)।

সুতারাং দেখা যাচ্ছে, দ্বিতীয় বিয়ের হুকুম এসেছিল নারীর স্বার্থ রক্ষার প্রয়োজনে, পুরুষের খায়েশ মিটানোর জন্য নয়। সেসব নারীদের প্রেক্ষিতে এই আয়াত যারা বিধবা ও অসহায়। তাদের আশ্রয়ের জন্য। তাদের ও তাদের সন্তানের নিরাপত্তা ও হেফাজতের জন্য। আজকে যারা আওয়াজ তুলছেন, তারা কী কখনও এমন অসহায় নারীদের নিয়ে ভাবছেন? তাদের প্রয়োজনে বিবাহ করে দায়িত্ব নিচ্ছেন? বরং অধিকাংশই শর্তের বাইরে শুধু নিজের মনোরঞ্জন মেটানোর জন্য এসব বিষয় ভাইরাল করছেন। আবেগ নয়, আসুন শরিয়াহর বাস্তবতা অনুধাবন করে বহুবিবাহ কেন জায়েজ সে প্রেক্ষাপট অনুধাবনের চেষ্টা করি।

হজরত মুহাম্মদ (সা.) তার প্রথম স্ত্রী বিবি খাদিজার (রা.) ইন্তেকালের পরবর্তী জীবনের বিয়েগুলো ছিল কোনোটা সামাজিক কারণে, কোনোটা রাজনৈতিক কারণে, কোনোটা ধর্মীয় কারণে। নবীজি (সা.) খাদিজাতুল কুবরা (রা.) ছাড়া সব স্ত্রীকে আল্লাহর নির্দেশে, ইসলামের প্রয়োজনে বিয়ে করেছিলেন।

যেমন, পালিত পুত্রের স্ত্রীর সঙ্গে দেখা দেয়া নাজায়েজ এবং বিধবা হলে বা ডিভোর্স হলে বিয়ে করা জায়েজ; এই নিয়ম প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি নিজেই তালাকের পর পালিত পুত্রের স্ত্রীকে বিয়ে করেছিলেন। আম্মাজান আয়েশার সঙ্গে তাঁর বিয়ের পয়গাম সয়ং আল্লাহতায়ালা পাঠিয়েছিলেন। কারণ তিনি উত্তম পরিকল্পনাকারী। মূলত অল্প বয়সে মানুষের স্মৃতিশক্তি ভালো থাকে। কাজেও দেখা গেল রাসুলুল্লাহ (সা.) এর মৃত্যুর পর উম্মুল মোমেনিন আয়েশা (রা.) সর্বোচ্চসংখ্যক হাদিস বর্ণনা করেছেন।

হজরত আলী (রা.) রাসুলের কাছে দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতি চাইলে তিনি বলেছিলেন, ‘যে আমার ফাতিমাকে কষ্ট দেয়, সে যেন আমাকেই কষ্ট দিল।’ অর্থাৎ তিনি নিজেও প্রথম স্ত্রীর জীবদ্দশায় দ্বিতীয় বিয়েকে নিরুৎসাহিত করেছেন।

হজরত মেসওয়ার ইবনে মাখরামা (রা.) বলেছেন- ‘আমি রসুলুলাহ (সা.)-কে মিম্বরে বসে বলিতে শুনেছি- হিশাম ইবনে মুগীরা আলী ইবনে আবু তালেব (রা.)-এর কাছে তার মেয়ে বিবাহ দেওয়ার জন্য আমার কাছে প্রস্তাব করেছে। কিন্তু আমি অনুমতি দিইনি এবং আলী (রা.) আমার কন্যা ফাতেমা (রা.)-কে তালাক না দেওয়া পর্যন্ত আমি অনুমতি দেব না। কেননা ফাতেমা হচ্ছে আমার শরীরের অংশ। আমি ওই জিনিস ঘৃণা করি, যা সে ঘৃণা করে এবং তাকে যা আঘাত করে তা আমাকেও আঘাত করে।’ (বোখারি, ৭ম খণ্ড, ১৫৭)।

নিজের মেয়ের বিষয়েও তিনি দ্বীতিয় বিয়েকে অপছন্দ করেছেন এবং নিরুৎসাহিত করেছেন। বিয়েতে জোরগলায় মহরে ফাতেমিকে সুন্নত মানলে একাধিক বিয়ের ক্ষেত্রে ফাতেমি এই সুন্নত মানা জরুরি নয় কেন? প্রয়োজন প্রেক্ষাপটে জায়েজ এতে কারও কোনো আপত্তি নেই। তবে ঢালাওভাবে নয়।

রাসুলের পবিত্র স্ত্রীরা ছিলেন আল্লাহর পক্ষ থেকে দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ মানবের জন্য নির্নাচিত ও সম্মানীত। এই মর্যাদাবান উম্মাহাতুল মুমিনিন মধ্যেও সতীনদের সঙ্গে ঝগড়া, মান-অভিমানের কথা হাদিসে এসেছে। স্ত্রীদের এসব আচরণে নবিিজ (সা.) কষ্ট পেয়ে দীর্ঘ দিন আম্মাজানদের সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এ নিয়ে আল্লাহপাক কোরআনের আয়াত নাজিল করেছেন। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানবের সিরাতের এসব ঘটনা উম্মতের জন্য কী শিক্ষা দেয়?

এছাড়া রাসুলুল্লাহর (সা.)-এর বহু বিবাহের মাঝে সুপ্ত ছিল বহু প্রজ্ঞা। আরশের স্রষ্টা আল্লাহর নির্দেশেই তিনি এ মহৎ কাজ সম্পাদন করেছেন। আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ততক্ষণ আমি কোনো নারীকে বিবাহ করিনি এবং আমার মেয়েদের অন্য কারও কাছে বিবাহ দেইনি যতক্ষণ না আমার প্রভুর পক্ষ থেকে জিবরাইল (আ.) বিবাহের আদেশ সংবলিত বার্তা না এনেছেন। (উয়ুনুল আছার - ২/৩০০, শরহে মাওয়াহিব - ৩/২১৯)।

চলুন দেখা যাক ইমামরা এ ব্যাপারে কী বলেছেন

ইমাম আলাউদ্দিন আল মারদাওয়ি বলেন, ‘মুস্তাহাব হলো একের অধিক বিয়ে না করা।’

ইমাম ইবনে কাজি আল জাবাল তার ‘আল ফায়িক’ কিতাবে লিখেছেন, ‘একের অধিক বিয়ে করা উচিত নয়।’

ইমাম আল নাজিম বলেন, ‘একটি বিয়েই ন্যায়পরায়ণতার অধিক নিকটবর্তী।’

ইমাম আলি ইবনে মুহাম্মাদ আল বালি তাঁর ‘তাজরিদ আল ইনায়াহ’ কিতাবে লেখেন, ‘(একের অধিক বিয়ে করা উচিত নয়) এটাই প্রসিদ্ধতম মত।’

ইমাম ইবনু খতিব বলেন, ‘আমাদের অধিকাংশ ইমাম একের অধিক বিয়ে না করাকে পছন্দ করেছেন।’ (সূত্র : কিতাব আল ইনসাফ, খণ্ড: ৮, পৃষ্ঠা: ১৬)।

ইমাম শাফেয়ি বলেন, ‘আমি পছন্দ করি পুরুষ শুধু একটি বিয়েতেই সীমিত থাকবে, যদিও একাধিক করা তার জন্য বৈধ। কেননা আল্লাহ বলেছেন, ‘যদি ভয় করো সমতা করতে পারবে না, তবে একটি অথবা তোমাদের অধীন দাসীদের। সীমা লঙ্ঘন থেকে বিরত থাকার এটাই সহজতম উপায়।’ (সুরা আন নিসা : ৩)।

ইমাম আশ শিরবিনি লিখেছেন, ‘সুন্নত হলো সুস্পষ্ট অনিবার্য কারণ ছাড়া একের অধিক বিয়ে না করা।’ (মুগনি আল মুহতাজ, খণ্ড : ৩, পৃষ্ঠা : ১৭)।

ফাতাওয়া আলমগীরীতে বলা হয়েছে : ‘যদি কারও একজন স্ত্রী থাকে এবং সে আরেকটি বিয়ে করতে চায়, তার যদি ভয় থাকে যে, সে তাদের মধ্যে সমতা ও ন্যায় রক্ষা করতে পারবে না, তাহলে তার জন্য দ্বিতীয় বিয়ে করার সুযোগ নেই। যদি এরকম কোনো ভয় না থাকে, তাহলে সে দ্বিতীয় বিয়ে করতে পারে। তবে দ্বিতীয় বিয়ে থেকে বিরত থাকাই উত্তম এবং স্ত্রীকে দুঃখ দেওয়া থেকে বিরত থাকার কারণে সে সওয়াব পাবে।’ (ফাতাওয়া আলমগীরী ৭/ ৪৭৮)।

হানাফি ফকিহ সিরাজুদ্দীন ইবনে নুজাইম (রহ.) বলেন, যদি কেউ স্ত্রীকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকার উদ্দেশ্যে একাধিক বিয়ে না করে, তাহলে সে সওয়াব পাবে। স্ত্রীকে কষ্ট না দেওয়া ইবাদত ও সওয়াবের কাজ এবং উত্তম হলো এক বিয়েতেই সীমাবদ্ধ থাকা। (আন-নাহরুল ফায়েক শরহু কানযিদণ্ডদাকায়েক)।

তাই আমভাবে, শর্তহীন কেবল নিজের নফসানিয়্যাত ও খায়েশাত পূরণের নিমিত্তে বহুবিবাহ করা কিংবা এর জন্য অন্যকে উৎসাহিত করা, কিংবা এটিকে মিশন বানিয়ে কাজ করার সুযোগ ইসলাম আপনাকে ঢালাওবাবে অনুমতি দেয়নি। কারও প্রয়োজন হলে শর্ত সাপেক্ষ এটিকে জায়েজ করা হয়েছে নিরুৎসাহিতভাবে। যেমন একইভাবে তালাককে নিরুৎসাহিত ও ঘৃণিত কাজ হিসেবে বিবেচনায় করেই প্রয়োজনে শর্ত সাপেক্ষ জায়েজ করা হয়েছে নিরুৎসাহিতভাবে। তালাক নিয়ে যেমন মার্কেটিং করার সুযোগ নেই, তেমনি মাসনা নিয়েও উৎসাহিত করার সুযোগ ইসলামে দেয়া হয়নি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত