ঢাকা ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শীতার্ত মানুষের সাহায্য করা বিত্তবান-ধর্মপ্রাণ মানুষের নৈতিক দায়িত্ব

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ 
শীতার্ত মানুষের সাহায্য করা বিত্তবান-ধর্মপ্রাণ মানুষের নৈতিক দায়িত্ব

শীতকাল দরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষের জন্য ভীষণ কষ্টের। খাবারের চেয়েও তাদের শীত নিবারণ অতীব প্রয়োজন হয়ে পড়ে। শৈত্যপ্রবাহের কষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়ার ন্যূনতম ব্যবস্থাপনাও তাদের থাকে না। ফলে অসহায় ও হতদরিদ্রদের কষ্ট শুধু বেড়েই যায়। এছাড়া শীতজনিত কারণে ছড়িয়ে পড়ছে নানা অসুখণ্ডবিসুখ। তীব্র শীতে বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ ও ছিন্নমূল মানুষের দুর্ভোগ অসহনীয় অবস্থায় পৌঁছে যায়। বেড়ে যায় শীতজনিত রোগের প্রকোপ। বৃদ্ধ ও শিশুদের মধ্যে জ্বর, শ্বাসকষ্ট, সর্দি, কোল্ড ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে পড়ে। ফুটপাত এবং খোলা আকাশের নিচে বসবাসকারীদের কষ্টের সীমা থাকে না। গরম কাপড় কেনার সামর্থ্য না থাকায় চা শ্রমিকসহ নিম্ন আয়ের মানুষেরা ভীষণ কষ্টে দিনযাপন করে।

বিভিন্ন স্থানে দেখা যাচ্ছে দরিদ্র মানুষেরা খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। শীত নিবারণের পোশাক এবং কম্বল-কাঁথার অভাবে অভাবী মানুষের কষ্টের যেন শেষ নেই। হাড়কাঁপানো শীত গরিব মানুষের জীবনকে অসহনীয় অবস্থার দিকে ঠেলে দিয়েছে। অনেকে শীতের তীব্রতা সহ্য করতে না পেরে মারাও যাচ্ছেন। তাই শীতের পোশাক ও কম্বল বিতরণের মাধ্যমে অসহায়ের পাশে দাঁড়ানোর সময় এখনই।

শীতার্ত হতদরিদ্র মানুষের প্রতি সমাজের সামর্থ্যবান ও বিত্তশালী ব্যক্তিদের সাহায্য ও সহানুভূতির হাত সম্প্রসারিত করে তাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে শীতবস্ত্র বিতরণ করে তাদের পাশে এসে দাঁড়ানো দরকার। নিঃস্বার্থভাবে শীতার্ত মানুষের সাহায্য ও সেবা করাই মানবতার সেবা। এমন মহৎ ও পুণ্যময় কাজই সর্বোত্তম ইবাদত।

সমাজের সংগতিসম্পন্ন ও সচ্ছল মানুষের ঘরে বছর পরিক্রমায় শীতকাল ঋতু হিসেবে আনন্দ ও খুশির বার্তাবহ হলেও দেশের বৃহত্তর জনজীবনে শীত নৈরাশ্য ও বেদনার ধূসর বার্তাবাহক মাত্র। হাড়কাঁপানো শীত ও ঘন কুয়াশায় বিপর্যস্ত জনজীবনে শৈত্যপ্রবাহ থেকে বাঁচার জন্য অসহায়-দরিদ্র মানুষের প্রয়োজন অনেক শীতবস্ত্রের। শীতজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব থেকে রক্ষা পেতে হলেও প্রয়োজন সুচিকিৎসা ও ওষুধপথ্য। বিশেষ করে শিশুরা গণহারে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ায় তাদের সুচিকিৎসার ব্যাপারে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না নিলে শীতের দুর্ভোগ যেমন বাড়বে, তেমনি শীতজনিত মৃত্যুর হারও বাড়বে।

তাই জাতি-ধর্ম-বর্ণ, দলমত- নির্বিশেষে সমাজের ধনাঢ্য ও বিত্তবান ব্যক্তিদের শীতার্ত বস্ত্রহীন মানুষের পাশে অবশ্যই দাঁড়াতে হবে। নবী করিম (সা.) মানুষকে অন্ন ও বস্ত্রদানের পরকালীন পুরস্কারপ্রাপ্তির কথা বলেছেন, ‘এক মুসলমান অন্য মুসলমানকে কাপড় দান করলে আল্লাহ তাকে জান্নাতের পোশাক দান করবেন। ক্ষুধার্ত অবস্থায় খাদ্য দান করলে আল্লাহ তাকে জান্নাতের সুস্বাদু ফল দান করবেন। কোনো মুসলমানকে তৃষ্ণার্ত অবস্থায় পানি পান করালে আল্লাহ তাকে জান্নাতের সিলমোহরকৃত পাত্র থেকে পবিত্র পানি পান করাবেন।’ (আবু দাউদ)।

শীতবস্ত্র ও গরম কাপড়ের অভাবে যে অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্টের মধ্য দিয়ে শীতার্ত ব্যক্তিদের দিন কাটছে- এ অবস্থার শিগগির অবসান ঘটাতে হবে। যারা শীতজনিত রোগব্যাধিতে ভুগছে, তাদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ওষুধপথ্য ও সুচিকিৎসার বন্দোবস্ত করা একান্ত প্রয়োজন। যাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই, তাদের আশ্রয়স্থলের ব্যবস্থা করতে হবে। এটি বিত্তবান-ধর্মপ্রাণ মানুষের নৈতিক দায়িত্ব। 

প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে শীতের তীব্রতায় দুস্থ, নিঃস্ব, ছিন্নমূল, গরিব, দুঃখী, বস্ত্রাভাবী শিশু, বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ নিদারুণ কষ্ট পায়। তাই সমাজের বিত্তশালী ব্যক্তিরা যদি ইচ্ছা করেন, তাঁদের নিজ নিজ জেলার শীতার্ত অসহায় গরিব-দুঃখী মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করতে পারেন। হাদিস শরিফে উল্লেখ আছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দুনিয়ায় মানুষকে খাদ্য দান করেছে, সেদিন (রোজ কেয়ামতের দিন) তাকে খাদ্য দান করা হবে। যে আল্লাহকে খুশি করার জন্য মানুষকে পানি পান করিয়েছে, তাকে সেদিন পানি পান করিয়ে তার পিপাসা দূর করা হবে। যে মানুষকে বস্ত্র দান করেছে, তাকে সেদিন বস্ত্র পরিধান করিয়ে তার লজ্জা নিবারণ করা হবে।’ সুতরাং প্রত্যেক ধর্মপ্রাণ মানুষেরই পারস্পরিক মানবতাবোধ ও উদার মানসিকতা থাকা অপরিহার্য। একজন মানুষ বিপদে পড়লে বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে অসহায় হলে তাকে যথাসাধ্য সাহায্য করা সমাজের বিত্তবান প্রতিবেশীদের ইমানি দায়িত্ব ও মানবিক কর্তব্য।

শীতার্ত গরিব-দুঃখী মানুষের সামান্য উঞ্চতার ব্যবস্থা করে দিলে আল্লাহতায়ালা অবশ্যই এর উপযুক্ত বদলা দেবেন। কারণ বান্দার দুঃখ-দুর্দশায় কেউ সহযোগিতার হাত বাড়ালে আল্লাহ তার প্রতি করুণার দৃষ্টি দেন। তাই শীতার্ত হতদরিদ্র মানুষের প্রতি সমাজের সামর্থ্যবান ও বিত্তশালী ব্যক্তিদের সাহায্য ও সহানুভূতির হাত সম্প্রসারিত করে তাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে শীতবস্ত্র বিতরণ করে তাদের পাশে এসে দাঁড়ানো দরকার। নিঃস্বার্থভাবে শীতার্ত মানুষের সাহায্য ও সেবা করাই মানবতার সেবা।

অতএব আসুন, এই নিদারুণ শীতে মানুষের সাহায্যে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করি। ইসলামের নির্দেশনা মেনে মানুষের সাহায্যে তার পাশে দাঁড়াই। যথাসাধ্য সহায়তাণ্ডসহযোগিতা করে তাদের কষ্ট লাঘব করি। বিনিময়ে আল্লাহতায়ালা দুনিয়া-আখেরাতে প্রতিদান দেবেন, ইনশাআল্লাহ।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক ও কলামিস্ট এবং 

প্রতিষ্ঠাতা জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি 

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত