ফল : মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠ নিয়ামত
সাকী মাহবুব
প্রকাশ : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
মহান আল্লাহর অগণিত নিয়ামতের মধ্যে অন্যতম একটি নিয়ামত হচ্ছে ফল। ফলের সঙ্গে অন্য কোনো কিছুর তুলনা হয় না। ফলের মধ্যে রয়েছে চিন্তাশীলদের জন্য নিদর্শন। আল্লাহতায়ালা বলেন- তিনি তোমাদের জন্য আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন। এই পানি থেকে তোমরা পান করো এবং এ থেকেই উদ্ভিদ উৎপন্ন হয়, যাতে তোমরা পশুচারণ করো, এই পানি দ্বারা তোমাদের জন্য উৎপাদন করেন ফসল, জয়তুন, খেজুর, আঙুর ও সব ধরনের ফল। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীলদের জন্য রয়েছে নিদর্শন। (সুরা আন নাহল : ১০-১১)।
ফলের প্রতি আকৃষ্ট পৃথিবীর সব প্রাণী। ক্ষুদ্র কীটপতঙ্গ থেকে শুরু করে মুক্ত বিহঙ্গরাও ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে আসে ফলের বাগানে। আর তাই আদিকাল থেকেই মানুষের জীবন ফলের সঙ্গে অঙ্গাঅঙ্গি ভাবে জড়িত। মানুষের প্রথম খাদ্য ছিল ফল। ফল আমাদের রসনা তৃপ্ত করে, একই সঙ্গে আমাদের দেহের রোগও প্রতিরোধ করে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রত্যেক মানুষের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য দৈনিক ৮৫ গ্রাম ফল খাওয়া প্রয়োজন। কারণ ফল মানবদেহের জন্য অতুলনীয় প্রতিষেধক। ফলে আছে অ্যালাজিক অ্যাসিড, ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ রোগকে প্রতিরোধ করে। এছাড়া ফলে রয়েছে ভিটামিন এ, সি, ই, কে ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। আছে বিটা ক্যারোটিন, লুটেইন, ক্রিপটাক্রন্থিন, পটাশিয়াম এবং ফল ইনসুলিন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
পৃথিবীর সব বয়সের মানুষই ফল পছন্দের তালিকায় রাখে। স্থান, কাল, মাটি ও আবহাওয়াভেদে সমগ্র বিশ্বে হরেক রকমের ফল উৎপন্ন হয়ে থাকে। স্বাদ, রং, গন্ধ, আকার ইত্যাদিতে বৈচিত্র্য পরিলক্ষিত হয়। ফল শুধু দুনিয়াতেই পছন্দের বস্তু নয়, এটি জান্নাতি নিয়ামতও। আল কোরআনে জান্নাতিদের জন্য ফল পছন্দের তালিকায় থাকবে বলে বলা হয়েছে। জান্নাতে বসবাসকারী বান্দাদের খাবারের বিবরণ দিতে গিয়ে আল্লাহ বলেন- তাতে রয়েছে ফলমূল, খেজুরের গাছ, যার খেজুর আবরণ যুক্ত (সুরা আর রহমান : ১১)। আল্লাহ অন্যত্রে আরও ঘোষণা করেন- সেখানে তাদের জন্য থাকবে ফলফলাদি এবং থাকবে তারা যা চাইবে তাও। (সুরা ইয়াছিন : ৫৭)।
ফলফলাদির মতো উৎকৃষ্ট খাবার আর নেই এবং এর গুরুত্বেরও শেষ নেই। কোনো কোনো ফল কাঁচা, কোনো ফল সাদা, কোনো ফল হলুদ, কোনো ফল সবুজ, কোনো ফল আবার কালো, সবই আল্লাহর কুদরতের বৈচিত্র্য।
ফল যেহেতু আল্লাহ তায়ালার এক বিশেষ নিয়ামত, তাই আমাদের উচিত ফল খেয়ে তাঁর এই বিশেষ নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা। আর ফল খাওয়ার সময় নবীজির (সা.) শেখানো দোয়া পাঠ করা। এটি আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। রাসুল (সা.) ফল খাওয়ার সময় আমাদের এই দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন- আল্লাহুম্মা বারিকলানা ফি ছামারিনা, ওয়া বারিকলানা ফি মাদিনাতিনা, ওয়া বারিকলানা ফি সা ইনা ওয়া ফি মুদ্দি না। অর্থাৎ হে আল্লাহ আমাদের ফলগুলোতে আমাদের জন্য বরকত দিন, আমাদের শহরে আমাদের জন্য বরকত দিন, আমাদের জন্য আমাদের ‘সা’ এবং আমাদের ‘মুদ্দ’ (ফলমূল ও শস্য)-এ বরকত দিন। যে কোনো ফল খাওয়ার সময় এই দোয়া পাঠ করলে আল্লাহর বরকত লাভ করা যাবে। পাশাপাশি ওই ফলের পরিপূর্ণ উপকারিতা আল্লাহতায়ালা আমাদের দান করবেন।
লেখক : শিক্ষক, প্রাবন্ধিক, আলেম, গবেষক, পাংশা, রাজবাড়ী