সদাচার মানুষের একটি মহৎ গুণ। এটি মানুষের অন্তর জয়ে সাহায্য করে থাকে। তাছাড়া সদাচরণ ইসলামের সৌন্দর্য। সদাচরণ পাওয়ার সবচেয়ে বড় হকদার হলেন আপন বাবা-মা, এরপর স্বামী-স্ত্রী, সন্তান ও নিকটাত্মীয়রা। এছাড়া আল্লাহতায়ালার সব সৃষ্টিই সদাচরণ পাওয়ার দাবিদার। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো এবং কাউকে তাঁর সঙ্গে শরিক করো না। বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন, এতিম, নিকট-প্রতিবেশী, দূর-প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথি, মুসাফির ও তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের প্রতি সদাচরণ করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ দাম্ভিক-অহংকারীকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা নিসা : ৩৬)
মা-বাবার সঙ্গে সদাচরণের তাগিদ দিয়ে আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন, ‘তোমরা মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে, তাঁদের একজন অথবা উভয়ে বার্ধক্যে উপনীত হলে তাঁদের বিরক্তিসূচক উহ্ শব্দটিও বলো না।’ (সুরা বনি ইসরাইল : ২৩)।
সামাজিক জীবনে মানুষ পরস্পর পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। তাই সমাজে শান্তি, স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা ও রক্ষায় সহানুভূতি এবং সদাচারের গুরুত্ব অপরিসীম। সদাচরণের মাধ্যমে শত্রুকেও বন্ধু বানানো যায়। এটি রাসুল (সা.) এর মহৎ গুণ। এই মহৎ গুণের মাধ্যমে জাহেলি যুগের অন্ধকার সমাজকে আলোকিত করেছেন। যার চরিত্রের ব্যাপারে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে নবী! নিশ্চয় আপনি মহান চরিত্রের ওপর প্রতিষ্ঠিত।’ (সুরা কালাম : ৪)।
সদাচারের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় হলো মানুষের হিংসা-বিদ্বেষ ও গর্ব অহংকারের মনোভাব। মানবচরিত্রে যেসব খারাপ দিক আছে, তার মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ মারাত্মক ক্ষতিকর। ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজে পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ, ঈর্ষাকাতরতা, কলহ-বিবাদ প্রভৃতি মানুষের শান্তিপূর্ণ জীবনকে অত্যন্ত বিষাদময় করে তোলে। এতে মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও জাতীয় জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। মানুষের মধ্যে পারস্পরিক শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার উদ্দেশ্যে পবিত্র কারআনে আল্লাহ তায়ালা সতর্ক করে বলেছেন, ‘আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে মানুষকে যা দিয়েছেন, সে জন্য কি তারা তাদের ঈর্ষা করে?’ (সুরা আন-নিসা : ৫৪)।
সদাচরণ ইসলামের নৈতিক শিক্ষা। সদাচারের মাধ্যমে মানুষ পরস্পর আন্তরিক হয়ে ওঠে, একে অপরের মাঝে সুসম্পর্ক তৈরি হয়। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন যে জিনিসটি মুমিনের পাল্লায় সবচেয়ে ভারী হবে তা হলো- উত্তম চরিত্র।’ (আবু দাউদ : ৪৮০১)।
চরিত্র সুন্দর করার সর্বোত্তম উপায় হচ্ছে, বিশ্বনবী (সা.) এর সুন্নতের অনুসরণ ও অনুকরণ করা। মহান আল্লাহতায়ালা কোরআনে এ কথাই ঘোষণা করেছেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) এর জীবনে রয়েছে সর্বোত্তম নমুনা বা আদর্শ।’ (সুরা আহজাব : ২১)। এ সম্পর্কে রাসুল (সা.) স্বয়ং বলেছেন, ‘আমি প্রেরিত হয়েছি সুমহান নৈতিক গুণাবলির পূর্ণতা সাধনের জন্য।’ (ইমাম আহমাদ, আল মুসনাদ : ৮৯৫২)।
লেখক : শিক্ষার্থী, কাদেরিয়া তৈয়্যবিয়া আলিয়া কামিল মাদ্রাসা