ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ভূমিকম্প

মুমিনের জন্য পরীক্ষা কাফেরের জন্য শাস্তি

মুফতি ইমামুদ্দীন সুলতান
মুমিনের জন্য পরীক্ষা কাফেরের জন্য শাস্তি

মাঝেমধ্যে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ভূমিকম্প হয়। ভূমিকম্পের ধাক্কায় ধ্বংস হয়ে যায় অনেক শহর, নগর ও জনপদ। মুহূর্তেই ধসে যায় পাহাড়সম অট্টালিকা, বিলাসবহুল ভবন। মাটির সঙ্গে মিশে যায় হাজারো স্বপ্ন, সাধনা আর শ্রমে গড়ে তোলা স্বপ্নিল ভুবন। বিজ্ঞান যেভাবেই ব্যাখ্যা করুক এগুলো নিছক প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়; বরং সৃষ্ট জগতের প্রতিপালক মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে সতর্কবার্তা। এগুলোর মাধ্যমে তিনি বান্দাদেরকে সতর্ক ও সাবধান করেন। যেন মানুষ তাওবা করে মহান আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করে। নিজেদের সংশোধন করে নেয়। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আমি ভয় দেখানোর জন্যই (তাদের কাছে আজাবের) নিদর্শনগুলো পাঠাই।’ (সুরা বনি ইসরাইল : ৫৯)। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘আর অবশ্যই আমি তাদেরকে গুরুতর আজাবের আগে লঘু আজাব আস্বাদন করাব, যাতে তারা ফিরে আসে। (সুরা আস সাজদা : ২১)

ভূমিকম্প কেয়ামতের আলামত

হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, কেয়ামতের আগে কেয়ামতের অনেক ছোট-বড় আলামত প্রকাশ পাবে। কিছু আলামত এরই মধ্যে প্রকাশ পেয়েও গেছে এবং প্রতিনিয়ত প্রকাশ পাচ্ছে। তন্মধ্যে একটি আলামত হলো, ভূমিকম্প, ভূমিধস ইত্যাদি। হাদিস শরিফে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত : তিনি বলেন, নবী কারীম (সা.) বলেছেন, কেয়ামত কায়েম হবে না, যে পর্যন্ত না ইলম উঠিয়ে নেয়া হবে, অধিক পরিমাণে ভূমিকম্প হবে, সময় সংকুচিত হয়ে আসবে, ফেতনা প্রকাশ পাবে এবং হারজ বৃদ্ধি পাবে। হারজ খুন-খারাবি। তোমাদের ধন-সম্পদ এত বৃদ্ধি পাবে যে, উপচে পড়বে। (বোখারি : ১০৩৬)।

ভূমিকম্প মানুষের পাপ ও অপরাধের ফল

পৃথিবীতে যত বিপদণ্ডআপদ ও বিপর্যয় নেমে আসে, কার্যত এগুলো মানুষের পাপ ও অপরাধের ফল। এরশাদ হয়েছে, ‘তোমদের উপর যেসব বিপদণ্ডআপদ পতিত হয় তা তোমাদের কর্মেরই ফল এবং তিনি তোমাদের অনেক গোনাহ ক্ষমা করে দেন।’ (সুরা শূরা : ৩০)। অন্য আায়াতে মহান আল্লাহ বলেন, স্থলে ও জলে মানুষের কৃতকর্মের দরুন বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ছে। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যেন তারা ফিরে আসে। (সুরা রুম : ৪১)।

হাদিস শরিফে এসেছে, আবু মালিক আল-আশআরী (রা.) থেকে বর্ণিত : তিনি বলেন, রাসুলে কারিম (সা.) বলেছেন, আমার উম্মাতের কতক লোক মদের ভিন্নতর নামকরণ করে তা পান করবে। (তাদের পাপাসক্ত অবস্থায়) তাদের সামনে বাদ্যবাজনা চলবে এবং গায়িকা নারীরা গীত পরিবেশন করবে। আল্লাহতায়ালা এদেরকে মাটির নিচে ধসিয়ে দেবেন এবং তাদের কতককে বানর ও শূকরে রূপান্তরিত করবেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ : ৪০২০)।

অন্য হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত : তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন গনিমতের (যুদ্ধলব্ধ) মাল ব্যক্তিগত সম্পদে পরিণত হবে, আমানতের মাল লুটের মালে পরিণত হবে, জাকাতকে জরিমানা মনে করা হবে, ধর্মবিবর্জিত শিক্ষার প্রচলন হবে, পুরুষ স্ত্রীর অনুগত হয়ে যাবে কিন্তু নিজ মায়ের অবাধ্য হবে, বন্ধু-বান্ধবকে কাছে টেনে নেবে, কিন্তু পিতাকে দূরে ঠেলে দেবে, মসজিদে কলরব ও হট্টগোল করবে, পাপাচারীরা গোত্রের নেতা হবে, নিকৃষ্ট লোক সমাজের কর্ণধার হবে, কোনো মানুষের অনিষ্ট থেকে বাঁচার জন্য তাকে সম্মান দেখানো হবে, গায়িকাণ্ডনর্তকি ও বাদ্যযন্ত্রের বিস্তার ঘটবে, মদপান করা হবে, এই উম্মতের শেষ জামানার লোকেরা তাদের পূর্ববতী মনীষীদের অভিসম্পাত করবে, তখন তোমরা অগ্নিবায়ু, ভূমিধস, ভূমিকম্প, চেহারা বিকৃতি ও পাথর বর্ষণরূপ শাস্তির এবং আরও আলামতের অপেক্ষা করবে যা একের পর এক নিপতিত হতে থাকবে, যেমন পুরোনো পুঁতির মালা ছিঁড়ে গেলে একের পর এক তার পুঁতি ঝরে পড়তে থাকে। (তিরমিজি : ২২১১)। হাদিসে বর্ণিত প্রায় সবগুলো অপরাধ আমাদের সমাজে বিরাজমান। বিশ্বব্যাপী অনেকটা আয়োজন করে এসব অপরাধ করা হচ্ছে।

ভূমিকম্প হলে কী করণীয়?

এসব বিপর্যয় যেহেতু আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার প্রতি সতর্কবার্তা, তাই প্রথমেই আমাদের প্রত্যেককে আল্লাহমুখী হতে হবে এবং খুবই আন্তরিকভাবে মহান রবের কাছে তওবা করা এবং আল্লাহতায়ালার বেশি পরিমাণে স্মরণ ও তাঁর কাছে নিরাপত্তার দোয়া করা উচিত। বিশেষ করে হাদিসে বর্ণিত মুসিবতের সময় নির্দিষ্ট দোয়াগুলো বেশি বেশি পড়া। সেই সঙ্গে যাপিত জীবনে সব পাপাচার থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করা। আল্লাহ আমাদের যেকোনো বিপর্যয় থেকে হেফাজত করুন। বিশেষ করে তুরস্কে সদ্য ঘটে যাওয়া ভূমিকম্পে যারা নিহত হয়েছে, আল্লাহ সেসব মুসলিম ভাই-বোনকে শাহাদাতের মর্যাদা দান করুন! আমিন।

লেখক : মুফতি ও মুহাদ্দিস, জামিয়া ইমদাদিয়া আরাবিয়া শেখেচরচর, নরসিংদী

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত