তওবার পরিচয় : তওবা একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ অনুশোচনা করা, মহান আল্লাহতায়ালার কাছে ফিরে আসা বা প্রত্যাবর্তন করা। ওলামায়ে কেরামের উক্তি এই যে, প্রত্যেক পাপ থেকে তওবা করা (চিরতরে প্রত্যাবর্তন করা) ওয়াজিব (অবশ্য-কর্তব্য)। যদি গোনাহর সম্পর্ক আল্লাহর (অবাধ্যতার) সঙ্গে থাকে এবং কোনো মানুষের অধিকারের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক না থাকে, তাহলে এ ধরনের তওবা কবুলের জন্য তিনটি শর্ত রয়েছে : ১. পাপ সম্পূর্ণরূপে বর্জন করতে হবে, ২. পাপে লিপ্ত হওয়ার জন্য অনুতপ্ত ও লজ্জিত হতে হবে, ৩. ওই পাপ আগামীতে দ্বিতীয়বার না করার দৃঢ় সংকল্প করতে হবে। সুতরাং যদি এর মধ্যে একটি শর্তও লুপ্ত হয়, তাহলে সেই তওবা বিশুদ্ধ হবে না।
পক্ষান্তরে যদি সেই পাপ মানুষের অধিকার সম্পর্কিত হয়, তাহলে তা গ্রহণীয় হওয়ার জন্য চারটি শর্ত আছে। উপরোক্ত তিনটি এবং চতুর্থ শর্ত হলো, হকদারদের হক ফিরিয়ে দিতে হবে। যদি অবৈধ পন্থায় কারও মাল বা অন্য কিছু নিয়ে থাকে, তাহলে তা ফিরিয়ে দিতে হবে। আর যদি কারও ওপর মিথ্যা অপবাদ দেয় অথবা অনুরূপ কোনো দোষ করে থাকে, তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছে শাস্তি নিতে নিজেকে পেশ করতে হবে অথবা তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। যদি কারও গিবত করে থাকে, তাহলে তার কাছে তা ক্ষমা চেয়ে নেবে।
সব পাপ থেকে তওবা করা ওয়াজিব। আংশিক পাপ থেকে তওবা করলে সেই তওবা হকপন্থি আলেমদের কাছে গ্রহণযোগ্য বিবেচিত হবে এবং অবশিষ্ট পাপ রয়ে যাবে। তওবা ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে কোরআন ও হাদিসে প্রচুর প্রমাণ রয়েছে এবং এ ব্যাপারে উম্মতের ঐকমত্যও বিদ্যমান। আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা সবাই আল্লাহর কাছে তওবা (প্রত্যাবর্তন) কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।’ (সুরা নুর : ৩১)।
অন্য আয়াতে তিনি বলেন, ‘তোমরা নিজেদের প্রতিপালকের কাছে (পাপের জন্য) ক্ষমা প্রার্থনা কর, অতঃপর তাঁর কাছে তওবা (প্রত্যাবর্তন) কর।’ (সুরা হুদ : ৩)। তিনি আরও বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা কর বিশুদ্ধ তওবা।’ (সুরা তাহরিম : ৮)।
আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘আল্লাহর কসম! আমি প্রত্যহ ৭০ বারের অধিক আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা ও তওবা করি।’ (বোখারি : ৬৩০৭, তিরমিজি : ৩২৫৯, ইবনু মাজাহ : ৩৮১৬, আহমাদ : ৭৭৩৪, ৮২৮৮, ৯৫১৫)।
ইবনু ইয়াসার মুযানী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘হে লোক সকল! তোমরা আল্লাহর সমীপে তওবা কর ও তাঁর কাছে ক্ষমা চাও! কেননা, আমি প্রতিদিন ১০০ বার করে তওবা করে থাকি। (মুসলিম : ২৭০২, আবু দাউদ : ১৫১৫, আহমাদ : ১৭৩৯১, ১৭৮২৭)।
আবু হুরায়রাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয় হওয়ার আগে তওবা করবে, আল্লাহ তার তওবা গ্রহণ করবেন।’ (মুসলিম : ২৭০৩, আহমাদ : ৭৬৫৪, ৮৮৮৫, ৯২২৫, ১০০৪৭, ১০২০৩)।
যাদের তওবা নিশ্চিত কবুল হবে
এমন কতিপয় সময় ও পর্যায় রয়েছে, যখন নিশ্চিত তওবা কবুল হয়। এ পর্যায়ে কেউ ক্ষমা চাইলে আল্লাহ তাকে ফিরিয়ে দেন না। এরশাদ হচ্ছে- ‘আল্লাহ তওবা কবুল করেন কেবল সে সব লোকের, যারা অপরাধ করে অজ্ঞতাবশত; অতঃপর তাড়াতাড়ি তওবা করে।’ (সুরা আন-নিসা : ১৭)।
না জেনে কেউ ভুল করে তৎক্ষণাৎ তওবা করলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন। আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যখন বান্দা গোনাহ স্বীকার করে এবং অনুতপ্ত হয়ে তওবা করে, ক্ষমা চায়- আল্লাহ তার তাওবা কবুল করেন এবং তাকে ক্ষমা করে দেন।’ (বোখারি : ৪১৪১; মুসলিম : ২৭৭০; মুসনাদে আহমাদ : ২৫৬৬৪)।
তওবা ও ইস্তেগফারের দোয়া
আস্তাগফিরুল্লাহ। অর্থাৎ আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি। প্রতি ওয়াক্তের ফরজ সালাতে সালাম ফিরানোর পর রাসুলুল্লাহ (সা.) এই দোয়া ৩ বার পড়তেন। (মিশকাত-৯৬১)।
আস্তাগফিরুল্লা-হা ওয়া আতুবু ইলাইহি। অর্থাৎ আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি ও তাঁর দিকে ফিরে আসছি।
লেখক : শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা