জীবন ও সভ্যতায় গাছপালার গুরুত্ব
ড. মুহাম্মদ ঈসা শাহেদী
প্রকাশ : ০১ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
সুন্দর জীবনযাপন এবং পৃথিবীকে বাস উপযোগী রাখার জন্য আল্লাহ পাক যেসব নেয়ামত দিয়েছেন, তন্মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে জলবায়ু ও প্রাকৃতিক পরিবেশ। এই দুই নেয়ামতের ওপর মানুষের জীবন নির্ভর করে। মানব সভ্যতার নিয়ামকও এই দুটি উপাদান। কিন্তু আধুনিক বিশ্বে শিল্পায়ন ও নগরায়ণ প্রক্রিয়া মানব জীবন ও সভ্যতার নিয়ামক এই দুই উপদানকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। শিল্পায়ন ও নগরায়ণের জন্য নির্বিচারে বৃক্ষনিধন করা হচ্ছে। ফলে পরিবেশের ভারসাস্য নষ্ট হয়ে মানুষের স্বাস্থ্য ও জলবায়ু হুমকির মুখে পড়ছে।
প্রতিটি প্রাণীই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বৃক্ষ বা উদ্ভিদের ওপর নির্ভরশীল। এক কথায় বৃক্ষ ছাড়া পৃথিবীতে জীবজগৎ অকল্পনীয় ব্যাপার। বৃক্ষ বাতাসে বিভিন্ন গ্যাসের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইডের মাত্রা বেশি হলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়, কারণ ওই গ্যাস তাপ শোষণ করে রাখে, বর্তমানে যা গ্রিনহাউস ইফেক্ট নামে সুপরিচিত। এ ক্ষেত্রে বৃক্ষ বাতাস থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে গ্রিন হাউস ইফেক্টের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। অপরদিকে বাতাসে অক্সিজেন যোগ করে বায়ুমণ্ডলে বিভিন্ন গ্যাসের অনুপাত বজায় রাখতে সাহায্য করে। এভাবে বৃক্ষ বায়ুদূষণ কম করে বাতাস বিশুদ্ধ রাখে।
বৃক্ষ বৃষ্টিপাত ঘটাতে সাহায্য করে। বৃক্ষের অভাবে উর্বর উৎপাদনশীল মাটি ধীরে ধীরে মরুভূমিতে পরিণত হয়। মাটির উর্বরতা বজায় রাখার জন্য দরকার বৃষ্টিপাত। বৃষ্টিপাত ঘটাতে আবশ্যক গাছপালা।
গাছপালার শিকড় মাটিকে আঁকড়ে বেঁধে তার ক্ষয়রোধ করে। জীববৈচিত্র্য রক্ষার ক্ষেত্রে গাছপালা অপরিহার্য। অসংখ্য প্রজাতির প্রাণীর খাদ্য ও বাসস্থানের ব্যবস্থা গাছই করে থাকে। গাছপালা থেকে মানুষ খাদ্য, ওষুধ, জ্বালানি, গৃহনির্মাণ ইত্যাদি তো পেয়েই থাকে। অন্যদিকে গাছপালা পরিবেশের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে মানুষের মনে আনন্দ দান করে।
পরিবেশ দূষণ কমিয়ে এবং পরিবেশের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে উদ্ভিদ মানুষের শারীরিক স্বাস্থ্য ও মানসিক স্বাস্থ্য উভয়ের উন্নতিতে সবচেয়ে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
উদ্ভিদ জীবন জগতে খাদ্য বা শক্তির জোগান দিয়ে থাকে। আবার নিজের খাদ্য নিজে তৈরি করতে পারে, অন্য কোনো প্রাণী নিজের খাদ্য নিজে তৈরি করতে পারে না। সৌরক্তিকে ব্যবহার করে সালোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উদ্ভিদ কার্বোহাইড্রেট বা গ্লুকোজ নামক মৌলিক খাদ্য উপাদান প্রস্তুত করে। তারপর পর্যায়ক্রমে তার রূপান্তর ঘটে এক শ্রেণি থেকে অন্য শ্রেণিতে স্থানান্তরিত হয়ে শক্তির জোগান দেয়। প্রত্যেক প্রাণীই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে শক্তির জন্য উদ্ভিদের ওপর নির্ভরশীল, তা সে মাংসাশী হোক বা নিরামিষাশীই হোক। তাই উদ্ভিদ হলো উৎপাদক আর বাকি সব প্রাণীই ভক্ষক। এক কথায় উদ্ভিদ ছাড়া এ পৃথিবীতে জীবন অকল্পনীয়।
উদ্ভিদ বৃষ্টিপাত ঘটাতে সাহায্য করে। উদ্ভিদের অভাবে উর্বর উৎপাদনশীল মাটি ধীরে ধীরে মরুভূমিতে পরিণত হয়। মাটির উর্বরতা বজায় রাখার জন্য দরকার বৃষ্টিপাত। বৃষ্টিপাত ঘটাতে আবশ্যক গাছপালা।
ভূমিক্ষয় রোধে উদ্ভিদের ভূমিকা অপরিসীম। বৃষ্টির প্রচণ্ড গতি ও শক্তিকে প্রশমিত করে ভূমিকে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করে। গাছপালার শিকড় মাটিকে আঁকড়ে বেঁধে তার ক্ষয়রোধ করে।
জীববৈচিত্র্য রক্ষার ক্ষেত্রে গাছপালা অপরিহার্য। অসংখ্য প্রজাতির প্রাণীর খাদ্য ও বাসস্থানের ব্যবস্থা উদ্ভিদই করে থাকে। গাছপালা থেকে মানুষ খাদ্য, ওষুধ, জ্বালানি, গৃহনির্মাণ ইত্যাদি তো পেয়েই থাকে, অধিকন্তু গাছপালা পরিবেশ সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে মানুষের মনে আনন্দের উদ্রেকও ঘটায়। পরিবেশ দূষণ কমিয়ে এবং পরিবেশ সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে উদ্ভিদ মানুষের শারীরিক স্বাস্থ্য ও মানসিক স্বাস্থ্য উভয়ের উন্নতিতে সবচেয়ে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
পরিবেশ সংকট সম্পূর্ণ রোধ করা সাধারণ মানুষের সামর্থ্যরে বাইরে হলেও এর মাত্রা অনেকটাই কম করা সম্ভব। বাড়ি, রাস্তাঘাট, সরকারি অফিস, স্কুল-কলেজ সর্বত্রই কিছু পরিমাণে গাছপালা লাগানো সম্ভব।
এ ব্যাপারে সবাই আন্তরিক হলে আমাদের পরিবেশকে অনেকটাই দূষণমুক্ত ও সবুজ করে তোলা যায়। তবে শুধূ গাছ লাগানোই শেষ কথা নয়, তাকে বাঁচিয়ে তুলতে হবে।
সুখের বিষয় হল, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমাদের দেশেও পরিবেশ বিদ্যা স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আগামী দিনে শিক্ষার প্রারম্ভিক স্তর থেকেই পরিবেশ বিদ্যা শিক্ষাদানের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করা হচ্ছে।
মানুষ বুঝতে পারছে যে, তারা নিজেরাই সংকট ডেকে আনছে। মানুষ যতই সভ্য হোক, বিজ্ঞানের যতই বিকাশ ঘটুক না কেন, প্রকৃতিকে পুরোপুরি অবজ্ঞা করে যে মানুষ বাঁচতে পারে না, সভ্যতা টিকে থাকতে পারে না, দেরিতে হলেও মানুষ আজ তা অনুধাবন করতে সক্ষম হচ্ছে।
গ্রীষ্মের পর বর্ষাকাল। বর্ষকালে বৃক্ষচারা রোপণের উপযুক্ত সময়। আসুন সবাই মিলে নিজ বাড়ির আঙিনায়, স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসাসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যত বেশি সম্ভব বৃক্ষচারা রোপণ করার উদ্যোগ নিই এবং পৃথিবীকে ফলে ফুলে সাজিয়ে তোলার কাজে প্রত্যেকে ভূমিকা রাখার প্রস্তুতি নিই।