ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

হাদিস ও কোরআনে বৃক্ষরোপণের তাগিদ

মাওসিকা জান্নাত রাহি
হাদিস ও কোরআনে বৃক্ষরোপণের তাগিদ

প্রত্যেক প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য গাছ আবশ্যকীয়। গাছ আমাদের অক্সিজেন দেয়। সেই অক্সিজেন গ্রহণ করে আমরা বেঁচে থাকি। আমরা নিঃশ্বাস ফেলার সময় যে কার্বন ডাই-অক্সাইড ত্যাগ করি তা গাছ প্রকৃতির কাছ থেকে শোষণ করে নেয়। বিনিময়ে আমাদের দেয় অক্সিজেন। গাছ কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ না করলে বাতাস বিষাক্ত হয়ে যেত। আমরা এবং প্রাণীকুল বেঁচে থাকতে পারতাম না। একটি গাছ বছরে প্রায় ১৩ কেজি কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে। এটি আল্লাহরই সুন্দর ব্যবস্থাপনা। তিনিই এভাবে বৃক্ষের মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করেন। চারদিক সতেজ-সজীব গতিময় রাখেন। আল্লাহ বলেন, ‘তিনিই আল্লাহ যিনি বায়ু প্রেরণ করেন। অতঃপর তা মেঘমালাকে সঞ্চালিত করে। অতঃপর তিনি মেঘমালাকে যেভাবে ইচ্ছা আকাশে ছড়িয়ে দেন এবং তা স্তরে স্তরে রাখেন। এর পর তুমি দেখতে পাও, তার মধ্য থেকে বারিধারা নির্গত হয়। তিনি তার বান্দাদের মধ্যে যাদের কাছে ইচ্ছা তা (বৃষ্টি) পৌঁছান। তখন তারা আনন্দিত হয়। (সুরা রুম, আয়াত: ৪৩)।

বৃক্ষ আল্লাহকে সেজদা করে

এক সময় ছিল উদ্ভিদকে মনে করা হতো প্রাণহীন। বিজ্ঞান গাছপালার প্রাণ আবিষ্কার করেছে বেশিদিন হয়নি। কিন্তু ইসলাম বলেছে, গাছের শুধু প্রাণ নয় অনুভূতি আছে, দায়িত্ববোধও আছে। এমনকি মহান আল্লাহকে বৃক্ষ সেজদা করে। তার তাসবিহ পাঠ করে। কোরআন পাকে ঘোষিত হয়েছে, ‘আপনি কি দেখেননি নভোমণ্ডলে ও ভূমণ্ডলে যা কিছু আছে, সূর্য, চন্দ্র, তারকারাজি, পর্বতমালা বৃক্ষলতা ও জীবজন্তু এবং অনেক মানুষ আল্লাহকে সেজদা করে।’ (সুরা হজ, আয়াত-১৮)।

বৃক্ষরোপণ ইবাদত

ইসলামে বৃক্ষরোপণের গুরুত্ব অপরিসীম। বৃক্ষরোপণকে ইবাদত হিসেবে গণ্য। রাসুল (সা.) নিজ হাতে বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যা করেছেন। বৃক্ষরোপণে মহানবী (সা.) মানুষকে উৎসাহিত করেছেন। জমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধির জন্য ইসলাম মানুষকে যেসব কর্মের প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছে, তার অন্যতম কৃষিকাজ। কারণ, ভূমি উর্বর থাকলে ফলন ভালো হয়। পরিবেশ ভালো থাকে। মানুষ সহজে ব্যধিগ্রস্ত হয় না।

বৃক্ষরোপণে মহানবী (সা.)-এর উৎসাহ

রাসুল (সা) কৃষিকাজ ও বৃক্ষরোপণে উৎসাহিত করেছেন, যাতে উদ্ভিদ বৃদ্ধি পায় ও সুস্থ পরিবেশ রক্ষা পায়। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যদি কোনো মুসলিম কোনো গাছ রোপণ করে অথবা ক্ষেতে ফসল বোনে। আর তা থেকে কোনো পোকামাকড় কিংবা মানুষ বা চতুষ্পদ প্রাণী খায়, তাহলে তা তার জন্য সদকা হিসেবে গণ্য হবে।’ (বোখারি, হাদিস : ২৩২০; মুসলিম, হাদিস : ৪০৫৫)।

হাদিসে বৃক্ষরোপণে প্রেরণা দেওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট। বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে একজন বান্দা তার মালিকের কাছ থেকে যথার্থ মূল্যায়ন পান। বান্দার লালন-পালনে বেড়ে ওঠা বৃক্ষ থেকে সৃষ্টি জীবের কেউ কিছু খেলেই বা একটু উপকৃত হলেই সওয়াব লেখা হচ্ছে তার আমলনামায়। ব্যক্তি মরে গেলেও তা যুক্ত হবে সদকা জারিয়া হিসেবে।

বৃক্ষরোপণের সওয়াব

ইসলামমের দৃষ্টিতে বৃক্ষরোপণ করতে গিয়ে যদি কোনো ফল প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত হয়, তাহলে তার যথোপযুক্ত প্রাপ্তি বান্দাকে দেওয়া হবে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো বৃক্ষরোপণ করে আর ফলদার হওয়া নাগাদ তার দেখাশোনা ও সংরক্ষণে ধৈর্য ধারণ করে, তার প্রতিটি ফলের বিনিময়ে আল্লাহ তাকে সদকার সওয়াব দেবেন।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১৬৭০২; শুআবুল ইমান, হাদিস : ৩২২৩)।

গাছ যদি এমন স্থানে হয়, যার ফলে মানুষের চলাচল কষ্টকর হয়, পরিবেশ ও ঘরদোরের জন্য ক্ষতিকর হয় এবং মানুষের প্রয়োজনে কাটার প্রয়োজন হয়- তাহলে গাছ কাটতে কোনো অসুবিধা নেই। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমি এক ব্যক্তিকে দেখেছি জান্নাতে সে ওই গাছের ছায়ায় চলাচল করছে, যা সে রাস্তার মোড় থেকে কেটেছিল, যা মানুষকে কষ্ট দিত।’ (মুসলিম, হাদিস : ৫৮৩৭)।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত