ইসলামি সংস্কৃতিতে বিড়াল
রিজবান আল হাসান জায়ান
প্রকাশ : ০১ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
বিড়ালকে ইসলামে একটি সম্মানিত এবং সর্বজনীন পোষা প্রাণী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিড়াল তার পরিচ্ছন্নতার জন্য প্রশংসার দাবি রাখে। তাই একে বাড়িতে এবং মসজিদে সাচ্ছন্দে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছে। ইসলাম বিড়ালের প্রতি সযত্ন আচরণ ও সম্মান প্রদর্শন, প্রশংসা জ্ঞাপন এবং ভালোবাসা শিক্ষা দেয়।
কতিপয় মুসলিমের বিশ্বাস, আপনার বাড়িতে একটি পোষা বিড়াল থাকা মানে সেখানে ফেরেশতার উপস্থিতিতে আশীর্বাদপুষ্ট হওয়া। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ইসলামে বিড়ালকে একটি পরিচ্ছন্ন প্রাণী বলে মনে করা হয়।
শতাব্দীকাল যাবত মুসলিম সংস্কৃতিতে বিড়ালের সঙ্গে সম্মানজনক আচরণ করা হয়েছে। বিড়ালকে এতটাই গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়েছে যে, মহানবীর (সা.) একজন সাহাবি বিড়ালের প্রতি তার অতিরিক্ত আসক্তির জন্য ‘আবু হুরায়রাহ’ (বিড়ালের বাপ/বিড়ালওয়ালা) নামে পরিচিতি লাভ করেন। মহানবী (সা.) নিজেও ব্যক্তিগতভাবে বিড়ালকে পছন্দ ও লালন করতেন। অনেক মুসলিম বিশ্বাস করেন যে, মুয়েযযাহ বা মুইযযাহ ছিল তার প্রিয় বিড়ালের নাম। তবে হাদিস শাস্ত্রে এই নামধারী বিড়ালের কোনো উল্লেখ পাওয়া যায় না।
পোকামাকড় থেকে বাড়িঘর এবং খাবারের দোকানপাট রক্ষাকারী হওয়া ছাড়াও ক্যালিগ্রাফি ও ইসলামি সংস্কৃতিতে বিড়াল প্রজাতির মূল্যায়ন করা হয়েছিল ইঁদুর শিকারি হিসেবে, যারা বইপত্র কেটে নিঃশেষ করে ফেলে। সে কারণে, বিড়ালকে প্রায়ই ইসলামিক স্কলার এবং গ্রন্থপঞ্জিদের সঙ্গে চিত্রকর্মে চিত্রিত করা হয়।
উদাহরণস্বরূপ, ইস্তান্বুলের বায়েজিদ লাইব্রেরির পরিচালক ইসমাইল শাইব সেন্সার (১৮৭৩-১৯৪০) শত শত বিড়ালকে আহার করাতেন। এ কারণে বায়েজিদ লাইব্রেরিকে ‘দ্য ক্যাট লাইব্রেরি’ বা বিড়াল পাঠাগার হিসেবেও নামকরণ করা হয়।
বিড়ালের যত্ন নেয়ার গুরুত্ব সমধিক। প্রিয় নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, এক মহিলা একটি বিড়ালের কারণে জাহান্নামে প্রবেশ করে। কারণ সে বিড়ালটিকে বেঁধে রেখেছিল; বন্দি অবস্থায় তাকে সে কোনো খাবার তো দেয়ইনি, বরং মাটির পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে সুরক্ষারও কোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। (বোখারি, ৩৩১৮)।
দামেস্ক শহরে ‘মসজিদ আল-কিতাত’ নামে একটি মসজিদ রয়েছে। আরবি ভাষায় ‘কিতাত’ মানে বিড়াল সম্প্রদায়।
১২৬৭ সালে এটি বিড়ালদের সুরক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠিত একটি দাতব্য ফাউন্ডেশন, যা ইসলামি আইনের অধীনে ওয়াকফ সম্পত্তি হিসেবে দান করা হয়েছিল। ৮০০ বছর আগে স্থাপিত এই ওয়াকফ এস্টেটটি এখনও খুব সমৃদ্ধ।
তুরস্কের কির্কলারেলি প্রদেশের আহমেতসি গ্রামের মসজিদের ইমাম হুসেইন কোকাক বিড়ালপ্রেমী হিসেবে, বিশেষ করে প্রচণ্ড শীতের সময় মসজিদে বিড়ালদের প্রতি যত্নশীল হওয়া এবং আশ্রয় প্রদান করার জন্য সুখ্যাতি লাভ করেন। (ইন্টারনেট)।