প্রশ্ন : মৃতব্যক্তির পাশে বসে কোরআন তেলাওয়াতের হুকুম কী?
উত্তর : মৃতব্যক্তির পাশে নিঃশব্দে গোসলের আগে কোরআন তেলাওয়াত করা জায়েজ। আর লাশ আপাদমস্তক ঢেকে দিলে গোসল দেওয়ার আগে তার পাশে সশব্দে তেলাওয়াত করা জায়েজ। তবে গোসল দেওয়ার আগে মাইয়েতকে না ঢেকে তার পাশে বসে সশব্দে কোরআন তেলাওয়াত করা মাকরুহ। (তাবয়িনুল হাকায়েক : ১/৫৬৪, শরহুল মুনয়া : ৫৭৭, আল বাহরুর রায়েক : ২/১৭১, হালবাতুল মুজাল্লি : ২/৫৯৭, হাশিয়াতুত তাহতাবি আলাদ্দুর : ১/৩৬৫)।
প্রশ্ন : কোনো নিখোঁজ ব্যক্তির যদি শুধু কর্তিত মস্তক বা দেহের একটা অংশ পাওয়া যায়, তবে এর গোসল, নামাজ এবং দাফন-কাফন কীভাবে করতে হবে?
উত্তর : মৃতব্যক্তির শুধু মাথা বা হাত-পা কিংবা কর্তিত অল্প অংশ পাওয়া গেলে এর গোসল, জানাজা কিছুই দিতে হয় না। তাই প্রশ্নোক্ত মস্তকটি পবিত্র কাপড়ে মুড়িয়ে দাফন করে দেবে। উক্ত মাথার গোসল দেওয়া বা জানাজা পড়া যাবে না। প্রকাশ থাকে যে, মৃতদেহের মস্তকসহ অর্ধেক পাওয়া গেলে কিংবা মাথা ছাড়া অর্ধেকের বেশি পাওয়া গেলে পূর্ণ লাশের হুকুমে ধর্তব্য হবে। সে ক্ষেত্রে তার গোসল ও জানাজা সবকিছুই নিয়মমাফিক করতে হবে। (কিতাবুল আসল : ১/৩৪১, ফাতহুল কাদির : ২/৭৬, ইমদাদুল ফাত্তাহ : ৬১২, শরহুল মুনইয়া : ৫৯০, আদ্দুররুল মুখতার : ২/১৯৯)।
প্রশ্ন : ডাকাত ও দুর্বৃত্তের হাতে নিহত ব্যক্তির জানাজা ও গোসলের হুকুম কী?
উত্তর : ডাকাত ও দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত ব্যক্তি শহিদ। তাকে গোসল দিতে হয় না। তবে জানাজা আদায় করতে হবে। বর্ণিত আছে, শাবি (রহ.)-কে এমন ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো, যে চোরদের হাতে নিহত হয়েছে। তিনি বললেন, তাকে গোসল দেওয়া হবে না। (মুসান্নাফে আবদির রাজ্জাক : ৬৬৪৮ ও ৯৫৯৪, কিতাবুল আসল : ১/৩৩৯, আল জামিউস সগির : ১১৮-১১৯, শরহুয যিয়াদাত : ১/১৮৬-১৮৭, আদ্দুররুল মুখতার : ২/২৪৭-২৫০)।
প্রশ্ন : ভুলে গোসল করানো ছাড়া জানাজা পড়ানো হলে হুকুম কী?
উত্তর : মৃত ব্যক্তিকে গোসল করানো ছাড়া তার জানাজা পড়া সহিহ নয়। তাই গোসল দেওয়ার আগে কোনো মাইয়েতের জানাজা পড়া হলে তা আদায় হবে না। সে ক্ষেত্রে গোসল দেওয়ার পর পুনরায় তার জানাজা পড়তে হবে। (কিতাবুল আসল : ১/৩৬০, আল মাবসুত লিস সারাখসি : ২/৭৩, আল মুহিতুল বোরহানি : ৩/৯৭, বাদায়েউস সানায়ে : ২/৫৫, ফতোয়ায়ে খানিয়া : ১/১৮৭)।
প্রশ্ন : অনেক ব্যক্তিকে দেখা যায়, কাপড়ের টুকরোতে মাটির টুকরো দিয়ে কালিমায়ে শাহাদত লিখে মাইয়েতের কাফনে এঁটে দেয়। এটা কতটুকু শরিয়তসম্মত?
উত্তর : মৃতের সঙ্গে বা কাফনে কালিমায়ে শাহাদত, কোনো আয়াত বা জিকির লেখা নাজায়েজ। এটি প্রচলিত ভুল ও বেদাত। শরিয়তে এর কোনো ভিত্তি নেই। তা ছাড়া লাশ গলে গেলে জিকির ও কালিমার অংশে ওই নাপাকি লেগে যেতে পারে। তাই এ থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। (রদ্দুল মুহতার : ২/২৪৬)।
প্রশ্ন : নারীদের জন্য জানাজার নামাজের আলাদা ব্যবস্থা থাকলে তারা জানাজায় শরিক হতে পারবে কী?
উত্তর : নারীদের জন্য জানাজার নামাজের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হওয়া জায়েজ নয়। নবীজি (সা.) এবং সাহাবা ও তাবেয়িন থেকে এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা এসেছে। তাবেয়ি যার ইবনে আবদিল্লাহ (রহ.) বলেন, একবার নবীজি (সা.) জানাজার সঙ্গে ছিলেন। হঠাৎ দেখলেন, একজন বৃদ্ধাও জানাজার সঙ্গে সঙ্গে আসছে। রাসুল (সা.) রেগে গেলেন। তার মুখমণ্ডলে ক্রোধের ছাপ ফুটে উঠল। তখন তার নির্দেশে ওই বৃদ্ধাকে ফিরিয়ে দেওয়া হলো। এরপর খাটিয়া রাখা হলো; কিন্তু তিনি জানাজা শুরু করলেন না। যখন লোকেরা বলল, ওই সত্তার শপথ, যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন, ওই নারী শহরের বাড়িঘরের আড়াল হয়ে গেছে, তখন তিনি জানাজার তাকবির বললেন। (মুসান্নাফে আবদির রাজ্জাক : ৬২৯০)। উম্মে আতিয়্যা (রা.)-এর বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) আমাদের জানাজায় বের হতে নিষেধ করেছেন। (আল মুজামুল কাবির লিত তাবারানি : ২৫/৪৫)। আমর ইবনে কায়েস (রহ.) বলেন, আমরা এক জানাজায় উপস্থিত ছিলাম। আবু উমামাও সেখানে ছিলেন। তিনি দেখলেন, জানাজায় কয়েকজন নারীও এসেছে। তখন তিনি তাদের সরিয়ে দিলেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা : ১১৪০৮)। মুহাম্মদ ইবনুল মুনতাশির (রহ.) বলেন, মাসরুক (রহ.) ওই জানাজা পড়তেন না, যে জানাজায় কোনো নারী উপস্থিত আছে। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা : ১১৪০৩)। শাবি (রহ.)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, নারীরা কি জানাজার নামাজ পড়বে? উত্তরে তিনি বললেন, না, নারীরা জানাজার নামাজ পড়বে না, চাই সে পবিত্র হোক কিংবা ঋতুমতী। (মুসান্নাফে আবদির রাজ্জাক : ৬২৯৭)। উল্লিখিত হাদিস এবং সাহাবা-তাবেয়িনের আসারগুলো থেকে এ কথা স্পষ্ট যে, নারীদের জন্য জানাজার উদ্দেশ্যে বের হওয়া জায়েজ নয়। (হালবাতুল মুজাল্লি : ২/৬০৭, শরহুল মুনয়া : ৫৯৪, আদ্দুররুল মুখতার : ২/২৩২)।
প্রশ্ন : জানাজার নামাজে তিন কাতার করার হুকুম কী?
উত্তর : রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মুসলমান মারা যাওয়ার পর তার জানাজায় যদি তিন কাতার মুসলমান শরিক হয়, তাহলে তার জন্য (জান্নাত) অবধারিত।’ সুনানে তিরমিজি ও সুনানে আবি দাউদসহ বহু হাদিস গ্রন্থে এ হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে। বর্ণনাকারী মালেক ইবনে হুবায়রা (রা.) যখন লোক সংখ্যা অল্প দেখতেন, তখন তাদের (উপস্থিত লোকদের) তিন কাতার করে দিতেন। ফকিহগণ এ সংক্রান্ত হাদিসের আলোকে জানাজার নামাজে মুসল্লি সংখ্যা কম হলেও যথাসম্ভব তাদের তিন কাতারে বিভক্ত করে দাঁড় করানো উত্তম বলেছেন। তবে মুসল্লি সংখ্যা অধিক হলে তিনের অধিক কাতারও করা যাবে। এতে সেই ফজিলতও পাওয়া যাবে। (সুনানে আবি দাউদ : ৩১৫৮, তিরমিজি : ১০২৮, শরহুল মুসলিম লিন নববি : ৭/১৭, শরহুল মুনইয়া : ৫৮৮, হালবাতুল মুজাল্লি : ২/৬১৩, আল হাদিয়্যাতুল আলাইয়্যাহ : ১২৩)।