রমজানের শ্রেষ্ঠ আমল
ইলিয়াস মশহুদ
প্রকাশ : ১২ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
পবিত্র রমজানের বিভিন্ন ইবাদত-বন্দেগির মধ্যে রাসুল (সা.) যেসব কাজ বা ইবাদতকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন, ইতেকাফ তার অন্যতম। অনেক নফল কাজ রাসুল (সা.) কখনও করেছেন, কখনও ছেড়েছেন; কিন্তু মদিনায় হিজরত করার পর যতদিন তিনি জীবিত ছিলেন, কখনও রমজানের শেষ ১০ দিনের ইতেকাফ ছাড়েননি। ইতেকাফ শরিয়তসম্মত একটি আমল হওয়ার ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি ইবরাহিম ও ইসমাইলকে আদেশ দিয়েছিলাম, যেন তারা আমার ঘরকে (কাবা) তওয়াফকারী, ইতেকাফকারী ও (সর্বোপরি তাঁর নামে) রুকুণ্ডসেজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখে।’ (সুরা বাকারা : ১২৫)। অন্য আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘মসজিদে যখন তোমরা ইতেকাফ অবস্থায় থাকবে, তখন স্ত্রী-সম্ভোগ থেকে বিরত থেক। সিয়ামের ব্যাপারে এগুলোই হলো আল্লাহর সীমারেখা।’ (সুরা বাকারা : ১৮৭)। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) প্রতি রমজানে শেষ ১০ দিন ইতেকাফ করতেন। কিন্তু যে বছর তিনি ইন্তেকাল করেন, সে বছর তিনি বিশ দিন ইতেকাফ করেছেন। (বোখারি ও মুসলিম)। আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) প্রতি বছর রমজানের শেষ ১০ দিন ইতেকাফ করতেন। ইন্তেকালের আগ পর্যন্ত তিনি এ নিয়ম পালন করেন। তাঁর ইন্তেকালের পর তাঁর স্ত্রীরা এ নিয়ম জারি রাখেন। (বোখারি)।
ইতেকাফের গুরুত্ব ও তাৎপর্য
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত; যখন রমজানের শেষ ১০ দিন আসে, তখন নবীজি (সা.) কোমর বেঁধে নামতেন। অর্থাৎ বেশি বেশি ইবাদত করার প্রস্তুতি নিতেন এবং রাতে জেগে থাকতেন, পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন। (বোখারি)। ইতেকাফের অন্যতম লক্ষ্য হলো লাইলাতুল কদরের যে অগণিত ফজিলত রয়েছে, তা অর্জন করা এবং কদরের মর্যাদাময় রাত যেন কোনোভাবে হাতছাড়া হয়ে না যায়, সেজন্য নিজেকে সদা ইবাদতে নিয়োজিত রাখা। আর ইতেকাফের প্রধান উদ্দেশ্য হলো, মহান আল্লাহর সঙ্গে গভীর সম্পর্ক সৃষ্টি করা। এর মাধ্যমে বান্দা সব সৃষ্টি থেকে আলাদা হয়ে নিবিষ্ট মনে একান্ত নির্জনে তাঁর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য হাসিলের চেষ্টা করে।
ইতেকাফের শর্ত
ইতেকাফের শর্তগুলো হলো- নিয়ত করা; জামাত অনুষ্ঠিত হয়, এমন মসজিদে ইতেকাফ করা; ইতেকাফকারী রোজাদার হওয়া; জ্ঞানসম্পন্ন মুসলমান স্ত্রী-পুরুষের নাপাকি ও নারীরা হায়েজ-নেফাস থেকে পবিত্র হওয়া; পুরুষ লোক জামে মসজিদে ইতেকাফ করা এবং সর্বদা সব ধরনের নাপাকি থেকে পবিত্র থাকা। আর নারীরা নির্দিষ্ট ঘরে বা নির্ধারিত কক্ষে ইতেকাফ করবেন। প্রাকৃতিক প্রয়োজন ও একান্ত ঠেকা ছাড়া ওই ঘর বা কক্ষ থেকে বের হবেন না। অজু-ইস্তিঞ্জা বা পাক পবিত্রতার জন্য বাইরে বের হলে কারও সঙ্গে কথাবার্তা বলবেন না বা সালাম বিনিময় করবেন না। তবে দরকার হলে ওই কক্ষের ভেতর থেকে বাইরের কাউকে ডাকতে পারবেন। কেউ ভেতরে এলে তার সঙ্গে কথাবার্তা বলতে পারবেন।
ইতেকাফের উপকারিতা
নিশ্চিতভাবে রমজানের শেষ ১০ দিনের যে কোনো বেজোড় রাতের একটি রাত হচ্ছে লাইলাতুল কদর। তাই ইতেকাফকারীর সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে, তার পক্ষে কদর রাতের সন্ধান করা খুব সহজ। ইতেকাফের ফলে আল্লাহর সঙ্গে বান্দার সম্পর্ক সুদৃঢ় করার সুযোগ সৃষ্টি হয়। এতে দিনরাতের অধিকাংশ সময় ইবাদতে মশগুল থাকার প্রকৃত পরিবেশ তৈরি হয়। ইতেকাফকারী মসজিদে অবস্থানের কারণে এক সালাতের পর আরেক সালাতের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।
ইতেকাফের নিয়ম
রমজানের শেষ দশকের ইতেকাফ সুন্নতে মোয়াক্কাদা আলাল কেফায়া। মহল্লার ন্যূনতম যে কোনো একজন তা আদায় করলে অন্য সবাই দায়মুক্ত হয়ে যাবেন, নইলে সবাই তা পরিত্যাগের কারণে পাপী হবেন। রমজানের ২০ তারিখ আসরের পর সূর্যাস্তের আগে শেষ দশকের ইতেকাফের নিয়ত করে মসজিদে প্রবেশ করতে হবে। তারপর ২৯ বা ৩০ তারিখ শাওয়ালের চাঁদ দেখা পর্যন্ত মসজিদে অবস্থান করতে হবে। কেউ যদি ১০ দিনের পরিবর্তে শুধু তিন দিন, সাত দিন বা বেজোড় রাতগুলোতে ইতেকাফ করেন, তাহলে সেটা হবে নফল ইতেকাফ।
ইতেকাফের আদব
ইতেকাফে বসে অপ্রয়োজনীয় কথা না বলা চাই। যথাসম্ভব নেকবিষয়ক আলোচনায় লেগে থাকা উচিত। উত্তম মসজিদ নির্বাচন করতে হবে। যেমন- মক্কা-মদিনার মসজিদে বা জামে মসজিদ। বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করতে হবে। ধর্মীয় বই অধ্যয়ন করতে হবে। ধর্মীয় জ্ঞান শিক্ষা করা বা শিক্ষা দেওয়া চাই। জিকির-আজকার করা চাই। জায়েজ কথাও প্রয়োজন ছাড়া না বলা উচিত।
যে কারণে ইতেকাফ ভঙ্গ হয়
ইতেকাফকারী শরিয়ত এবং মানবীয় প্রয়োজন ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে মসজিদের বাইরে গেলেই ইতেকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে। শরিয়তসম্মত প্রয়োজন বলতে জুমার নামাজ আদায়ের জন্য বের হওয়া। আর মানবীয় প্রয়োজন হলো, পেশাব-পায়খানা, অজু ও জরুরি গোসলের জন্য বের হওয়া। এসব প্রয়োজন পূরণ হওয়ার পরও যদি অল্প সময় মসজিদের বাইরে অবস্থান করে, দাঁড়িয়ে কথা বলে, হাসি-ঠাট্টা করে, তাহলে সুন্নত ইতেকাফ বাতিল হয়ে যাবে।