জার্মানে রমজান যেমন
রমজান মাসে বিশ্বজুড়ে মুসলিম সম্প্রদায় সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে পানাহারসহ সব ধরনের পাপাচার ও ভোগবিলাস থেকে নিজেকে সংযত রাখেন। ধর্মীয় আচার এক হলেও সংস্কৃতির ভিন্নতার কারণে বিভিন্ন দেশে দেখা যায় রমজানের বৈচিত্র্যময় উদযাপন। সেই বৈচিত্র্যের একটি দেশ জার্মান। সেখানকার রমজান সংস্কৃতির খোঁজ নিয়েছেন- মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ
প্রকাশ : ১৯ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
রাষ্ট্রীয়ভাবে রোজা শুরুর সময় ঘোষণা না করায় প্রথম কবে রোজা শুরু হবে, তা ঠিক করা জার্মান মুসলমানদের জন্য কঠিন। ফলে জার্মানির সব মুসলমান একই সময় মেনে রোজা পালন করেন, এমন নয়। অনেক মুসলমান স্থানীয়ভাবে চাঁদ দেখে রোজা রাখেন। ফলে অন্য অনেক মুসলমানের সঙ্গে তাদের সময়ের পার্থক্য হয়। অনেক ক্ষেত্রে তারা এক বা দু’দিন পর রোজা রাখা শুরু করেন। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, অন্য মুসলমানরা যখন মুসলমানদের প্রধান উৎসব ঈদ উদযাপন করছেন, সেদিন অনেক মুসলমানকে রোজা পালন করতে দেখা যায়।
রোজা রাখার সময়
১৯ ঘণ্টা রোজা রাখেন জার্মানের মুসলমানরা। রাত ৩টায় সাহরি খেয়ে পরদিন রাত ১০টায় ইফতার করেন তারা। অন্যদিকে জার্মানের মুসলমানদের চেয়ে পাঁচ মিনিট কম অর্থাৎ ১৮ ঘণ্টা ৫৫ মিনিট রোজা রাখেন ইংল্যান্ডের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। দেশটির বেশিরভাগ মুসলমান ডায়বেটিসের মতো জটিল রোগে আক্রান্ত। তাই এত দীর্ঘ সময় রোজা রাখা তাদের জন্য বেশ কষ্টসাধ্য।
লম্বা সময়ের রোজা
জার্মানে ধীরে ধীরে মুসলমানদের অবস্থান সুসংহত হচ্ছে। জার্মানিতে গ্রীষ্মে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের মধ্যে প্রায় ১৭ থেকে ১৮ ঘণ্টার ব্যবধান। অর্থাৎ রোজা রাখা মানেই এই লম্বা সময় কিছু না খেয়ে থাকা। বিশেষ করে, যারা শারীরিক পরিশ্রম করেন, তাদের জন্য অবশ্যই খুব কঠিন এ কাজ। তারপরও রমজান এলেই সাড়া পড়ে যায় জার্মান মুসলমানদের মধ্যে। তারা বিপুল উৎসাহের সঙ্গে রোজা পালন করে থাকেন। তবে অনেক কষ্ট আর ত্যাগের বিনিময়ে সেখানে তাদের ধর্মীয় বিধিবিধান পালন করতে হয়।
৭৩ শতাংশ রোজাদার
মুসলমান হিসেবে রমজানের সময় রোজা না রাখা অনেকেই ভালো চোখে দেখে না সেখানে। জার্মানিতে তুর্কি বংশোদ্ভূত মানুষদের মধ্যে প্রায় ৭৩ শতাংশ রোজা রাখেন বলে এক সমীক্ষায় জানা গেছে। জার্মানিসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হিসেবে মুসলমানদের জন্য রমজান মাসের পরিবেশ একেবারেই আলাদা। একমাত্র মসজিদে গেলেই মানুষ পরস্পরের সঙ্গে একাত্ম হয়ে উঠতে পারেন। রোজা শেষে একসঙ্গে ইফতারি করতে পারেন। জার্মানিতে মুসলমানদের সংখ্যা প্রায় ৪০ লাখ। তাদের মধ্যে অনেকেই রোজা রাখেন; কিন্তু কাজটা মোটেই সহজ নয়।
রাতে ক্যান্টিন খোলা
সেন্ট্রাল কাউন্সিল অব মুসলিমসের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, জার্মানিতে শারীরিকভাবে সক্ষম মুসলমানদের ৯৪ শতাংশই রোজা পালন করেন। বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা সত্ত্বেও অনেক মুসলমান অ্যাথলেট পালন করে থাকেন সিয়ামব্রত। এমনকি জার্মান সেনাবাহিনীতে যে হাজারের মতো মুসলিম সৈন্য রয়েছে, তাদের রোজা পালনের সুবিধার্থে বিশেষ ব্যবস্থায় রাতে ক্যান্টিন খোলা রাখা হয়।
কাজের ফাঁকে ইফতার
সেখানকার বেশিরভাগ মুসলমান শ্রমিক। তারা বিভিন্ন মুসলিম দেশ থেকে আগত। বর্তমানে এ দেশে ২ হাজার মসজিদ আছে। শীত মৌসুমে জার্মানে সূর্য ওঠে সকাল ৮টায় এবং ডোবে বিকেল ৪টায়। তাই কাজের মধ্যেই ইফতারের সময় হয়ে যায়। বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোতে মুসলমান শ্রমিকদের জন্য ইফতারের আয়োজন করা হয়।
ইফতার ব্যবস্থাপনা
জার্মানে মসজিদের পাশাপাশি রয়েছে অসংখ্য ইসলামিক সেন্টার ও নামাজের স্থান। এসব ইসলামিক সেন্টারের পক্ষ থেকে রোজাদারদের জন্য ইফতারের ব্যবস্থা করা হয়। আয়োজন করা হয় ইফতার পার্টিও। এখানকার রোজাদাররা ইউরোপের অন্যান্য দেশের মুসলমানদের মতো ইফতার করে থাকেন। আমাদের দেশের মতো ইফতারে বাহুল্য বিলাস তাদের পছন্দ নয়।
বহুমুখী পদক্ষেপ
‘দ্য কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল অব মুসলিম ইন জার্মানি’ নামক একটি বেসরকরি সংস্থা রমজান মাসকে গুরুত্বের সঙ্গে কাজে লাগায়। তারা ওই সময় মুসলমানদের নৈতিক উন্নয়নের জন্য বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। রমজান মাসে তারা ইসলামের নানা বিষয় নিয়ে আলোচনার আয়োজন করেন। ডি জাভেদ মোগেগির মতে, প্রতি বছরই এ ধরনের আলোচনার আয়োজন করা হয়। তবে সব মুসলমানই ওই আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন, এমনটি নয়।