রমজান মাস কল্যাণ ও বরকতের বসন্তকাল। এ মাসে আমল দ্বারা মোমিনরা জান্নাতে তাদের আবাসস্থল বানিয়ে নেয়। তওবা করে অতীতের গোনাহ আল্লাহর কাছ থেকে মাফ করিয়ে নেয়। কারণ, রমজানই এর সুবর্ণ সুযোগ। রমজান পেয়েও যদি কেউ সে সুবর্ণ সুযোগ কাজে লাগাতে না পারে, সে প্রকৃত হতভাগা। কেননা, এ মাসের চেয়ে উত্তম আর কোনো মাস হতে পারে না। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর; যাতে তাকওয়া অবলম্বন করতে পার।’ (সুরা বাকারা : ১৮৩)। নবীজি (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর কসম! মুসলমানদের জন্য রমজানের চেয়ে উত্তম কোনো মাস আসেনি এবং মোনাফেকদের জন্য রমজান মাসের চেয়ে অধিক ক্ষতির মাসও আর আসেনি। কেননা, মোমিনরা এ মাসে (সারা বছরের জন্য) ইবাদতের শক্তি ও পাথেয় সংগ্রহ করে; আর মোনাফেকরা তাতে মানুষের উদাসীনতা ও দোষত্রুটি অন্বেষণ করে। এ মাস মোমিনের জন্য গনিমত, আর মোনাফেকের জন্য ক্ষতির কারণ।’ (মুসনাদে আহমদ : ৮৩৬৮)।
গোনাহ মাফের অফুরন্ত সুযোগ
রমজান মাসে আল্লাহ অগণিত গোনাহগার বান্দাকে ক্ষমা করেন। অসংখ্য জাহান্নামিকে মুক্তি দান করেন। এ সংক্রান্ত অনেক হাদিস রয়েছে। যেমন- রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানে ঈমান ও সওয়াবের আশায় রোজা রাখবে, আল্লাহ তার পূর্ববর্তী গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন। যে ব্যক্তি রমজানে ঈমান ও সওয়াবের আশায় তারাবি পড়বে, আল্লাহ তার অতীতের সব গোনাহ মাফ করে দেবেন। যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের আশায় শবেকদরে ইবাদত করবে, আল্লাহ তার অতীতের গোনাহ মাফ করে দেবেন।’ (বোখারি : ৩৮, মুসলিম : ১৮১৭)। এ ছাড়া রোজার আরেকটি উল্লেখযোগ্য ফজিলত হচ্ছে, জান্নাতে রোজাদারদের জন্য আলাদা একটি দরজা থাকবে। যে দরজা দিয়ে শুধু রোজাদাররাই প্রবেশ করবে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘বেহেশতে আটটি দরজা রয়েছে। এর একটির নাম রাইয়ান। এই দরজা দিয়ে শুধু রোজাদাররাই প্রবেশ করবে।’ (বোখারি : ৩২৫৭)।
রোজা পরকালে সুপারিশ করবে
রাসুল (সা.) বলেন, রোজা ও কোরআন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, ‘হে রব, আমি তাকে খাবার ও জৈবিক চাহিদা থেকে দিনে বিরত রেখেছি। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন।’ কোরআন বলবে, ‘আমি তাকে রাতে ঘুম থেকে বিরত রেখেছি। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন।’ তখন উভয়ের সুপারিশ কবুল করা হবে।’ (শোআবুল ঈমান : ১৯৯৪, মুসতাদরাকে হাকেম : ২০৩৬)। রাসুল (সা.) আরও বলেন, ‘আল্লাহ রমজানের প্রত্যেক দিন ও রাতে অনেককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। রমজানের প্রত্যেক দিনে এমন সময় রয়েছে, যখন দোয়া কবুল হয়।’ (মুসনাদে আহমদ : ৭৪৫০)।
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় হতভাগা
যে রমজান পেয়েও গোনাহ মাফ করাতে পারল না, সে হতভাগা। কাব ইবনে উজরা (রা.) বর্ণনা করেন; রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা মিম্বরের কাছে এসো।’ আমরা এলাম। তিনি যখন একটি সিঁড়িতে আরোহণ করলেন, তখন বললেন, ‘আমিন’। দ্বিতীয় সিঁড়িতে আরোহণের সময়ও বললেন, ‘আমিন’। তৃতীয় সিঁড়িতে আরোহণের সময়ও বললেন, ‘আমিন’। রাসুল (সা.) যখন মিম্বর থেকে নামলেন, তখন আমরা বললাম, ‘আল্লাহর রাসুল! আজকে আপনার থেকে এমন কিছু শুনেছি, যা আগে শুনিনি।’ তিনি বললেন, জিবরাইল (আ.) আমার কাছে এসে বললেন, ‘যে রমজান মাস পেয়েও তার গোনাহ মাফ করাতে পারল না, সে হতভাগা।’ তখন আমি বললাম, ‘আমিন’। দ্বিতীয় সিঁড়িতে জিবরাইল (আ.) বলেছেন, ‘যার সামনে আমার নাম পাঠ হলো; কিন্তু সে আমার ওপর দরুদ পড়ল না, সে হতভাগা।’ আমি বললাম, ‘আমিন’। তৃতীয় সিঁড়িতে জিবরাইল (আ.) বললেন, ‘যে তার পিতামাতাকে অথবা উভয়ের একজনকে বৃদ্ধ অবস্থায় পেল; কিন্তু জান্নাত অর্জন করতে পারল না, সে হতভাগা।’ আমি বললাম, ‘আমিন’। (মুসতাদরাকে হাকেম : ৭২৫৬)।