বায়ুদূষণ রোধে ইসলাম

তাবাসসুম মাহমুদ

প্রকাশ : ১০ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

ইসলামে বায়ুদূষণ থেকে মুক্ত থাকার ব্যাপারে নির্দেশনা এসেছে। যার মাধ্যমে বায়ু দূষণের ক্ষতিকর বিষয় থেকে আমরা রক্ষা পেতে পারি। যেমন- কষ্টদায়ক বস্তু সরানোর মাধ্যমে। রাস্তাঘাটে যদি কোনো কষ্টদায়ক বস্তু, বায়ু দূষণকারী পদার্থ থাকে, তাহলে তা সরানোর মাধ্যমে বায়ুদূষণ রোধ করা যায়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘ঈমানের তেহাত্তর বা তেষট্টিটি শাখা রয়েছে। এর মধ্যে সর্বোত্তমটি হলো- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলা এবং সর্বনিম্নটি হলো- রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা।’ (মুসলিম : ৬০)। রাসুল (সা.) আরও বলেন, ‘তোমরা অভিশাপ ডেকে আনে এরূপ তিনটি কাজ থেকে বিরত থাক। তা হলো- চলাচলের রাস্তায়, রাস্তার মোড়ে অথবা ছায়াদার স্থানে মলমূত্র ত্যাগ করা।’ (সুনানে আবি দাউদ : ২৬)।

আমাদের চলাচলের পথে মানুষের জন্য কষ্টদায়ক ও বিপজ্জনক অনেক বস্তু পড়ে থাকে। যেমন- মরা জীবজন্তু, কাঁটা, ময়লা, কলার ছোলা, পিচ্ছিল পলিথিন, জ্বলন্ত সিগারেটের কিয়দংশ ইত্যাদি। ঈমানের দাবি হলো, এগুলো পথ থেকে অপসারণ করা। এসব কষ্টদায়ক বস্তুর মধ্যে এমন উপাদান বা জীবাণু থাকতে পারে, যার দ্বারা বায়ু দূষিত হবে। রাসুল (সা.)-এর এ হাদিসগুলো যদি বায়ুদূষণ রোধের মূলনীতি হিসেবে ধরা যায়, তাহলে বায়ুদূষণ রোধ করা সম্ভব।

কেউ মারা গেলে ইসলাম সঙ্গে সঙ্গে তাকে কবর দিতে বলে। যাতে পরিবেশ কোনো ধরনের দূষণ না হয়। কোরআন থেকে জানা যায়, যে জিনিসটা পচে যায়, তা মরে যাওয়ার পর মাটিতে পুঁতে ফেলতে হয়। যেমন- কাবিল যখন হাবিলকে হত্যা করে, তখন দুটি কাক সেখানে আসে আর তাদের একজন আরেকজনকে হত্যা করে এবং মৃত কাককে দাফন করে ফেলে। তা দেখে কাবিল মাটি দিয়ে হাবিলকে ঢেকে ফেলে। এ ব্যাপারে কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহতায়ালা এক কাক পাঠালেন; যে তার ভাইয়ের শবদেহ কীভাবে গোপন করা যায়, তা দেখানোর জন্য মাটি খনন করতে লাগল।’ (সুরা মায়িদা : ৩১)। অতএব, কোরআন এ নির্দেশনা দিচ্ছে, কেউ মারা গেলে তাকে মাটির নিচে কবরস্থ করতে হয়। ইসলাম শুধু মৃত লাশকে দাফন করতে বলে না, বরং ইসলাম অন্যান্য পচা-দুর্গন্ধ বস্তুকে মাটিতে পুঁতে দেয়ার ব্যাপারে বিশেষভাবে গুরুত প্রদান করেছে।

বায়ুদূষণ রোধে জাবের (রা.) সূত্রে বর্ণিত হাদিসটি প্রণিধানযোগ্য। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কাঁচা পেঁয়াজ খাবে, সে যেন আমাদের থেকে অথবা আমাদের মসজিদ থেকে দূরে থাকে এবং ঘরে বসে থাকে।’ (বোখারি : ৫৪৫২)। ইসলাম শুধুই বস্তুজগতের ক্ষতিকে দূষণের মাপকাঠি মনে করে না, বরং আত্মিক ক্ষতিকেও দূষণের মাপকাঠি মনে করে। তাই তো সুঘ্রাণ হওয়া সত্ত্বেও ইসলাম নারীর সুগন্ধি ব্যবহার করে বহির্গমনকে পরিবেশ দূষণ হিসেবে দেখেছে। হাদিসে এ জাতীয় দূষণের ভয়াবহতার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। আবু মুসা আল আশআরি (রা.) সূত্রে বর্ণিত; রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে কোনো নারী সুগন্ধি বা পারফিউম ব্যবহার করে, এরপর মানুষের সামনে দিয়ে অতিক্রম করে, যাতে তারা তার সুবাস পায়, সে একজন ব্যভিচারিণী।’ (তিরমিজি : ২৭৮৬)।

সত্যিই উন্মুক্ত স্থানে বা রাস্তাঘাটে নারীর সুগন্ধি ব্যবহার এমন এক দূষণ, যা খাটি মুত্তাকিদের ঈমানের স্বচ্ছতাকে কর্দমাক্ত করে এবং পরিবেশ বিপর্যয় করে। যদিও সুগন্ধির প্রতি দুর্বলতা, সুগন্ধি ছড়ানো এবং অন্যকে তা উপহার প্রদান পরিবেশ উন্নয়নে ভূমিকা রাখে; বরং ইসলাম এর প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছে। যেমন- আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত; রাসুল (সা.) বলেন, ‘যার সামনে সুগন্ধি উপস্থাপন করা হয়, সে যেন তা প্রত্যাখ্যান না করে। কারণ, তা বহনে হালকা এবং বাতাসকে সুবাসিত করে।’ (মুসলিম : ৫৮৩৫)। রাসুল (সা.) যখন শিঙ্গা লাগাতেন অথবা লোম পরিষ্কার করতেন বা নখ কাটতেন, তখন তিনি তা বাকিউল গারকাদ কবরস্থানে পাঠাতেন; তারপর তা পুঁতে ফেলা হতো।’ (আখলাকুন নবী : ৩৫৯)।

আমরা অনেক সময় হাঁচি, কাশি দেয়ার সময় মুখ ঢেকে রাখি না। এতে নির্গত ময়লা ও জীবাণু দ্বারা অন্যরা আক্রান্ত হতে পারে। এ ব্যাপারে মহানবী (সা.)-এর বিশেষ আচরণ বর্ণিত হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, মহানবী (সা.) যখন হাঁচি দিতেন, তখন এক টুকরো কাপড় বা নিজ হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলতেন এবং নিচু আওয়াজ করতেন।’ (সুনানে আবি দাউদ : ৪৯৪৫)।