গরমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ

আবু তালহা তোফায়েল

প্রকাশ : ২৪ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

ছয় ঋতুর বাংলাদেশে বসবাস উপযোগী ঋতু বসন্তকাল। বসন্ত পেরুতেই শুরু হয় গরমের দিন। তাপমাত্রা থাকে অসহ্যকর। বিশেষ করে, এবার বৈশাখের শুরু থেকেই প্রচণ্ড গরম পড়েছে। তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসও পেরিয়েছে কখনো বা। জনজীবন গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। বাসাবাড়ি থেকে মানুষ বেরুতে পারছে না। বেরিয়ে এলেও গরম আর পিছু ছাড়ছে না। যেন প্রকৃতি বেশ চটে আছে। এমন অসহ্যকর গরম হাজার বছর আগেও ছিল। নতুন কিছু নয়। তাই মোমিনের জন্য প্রচণ্ড গরম আর তীব্র শীতেও রয়েছে সওয়াব অর্জনের সুবর্ণ সুযোগ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে গরমকে আল্লাহর ক্রোধ বলা হয়েছে। আর ক্রোধ থেকে বাঁচার জন্য রাসুল (সা.) কিছু দোয়া শিখিয়েছেন। তেমনি একটি দোয়া হলো- আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন জাওয়ালি নি’মাতিকা ওয়া তাহবিলি আফিয়াতিকা ওয়া ফুজাআতি নিকমাতিকা ওয়া জামি’য়ি সাখাতিকা। অর্থ : হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই আপনার নেয়ামতের বিলুপ্তি, আপনার অনুকম্পার পরিবর্তন, আকস্মিক শান্তি এবং আপনার সব ক্রোধ থেকে।

গরমে বিলম্বে জোহরের নামাজ

শীত ও গ্রীষ্মের ব্যাপারে হাদিসের ব্যাখ্যা হলো, শীত ও গ্রীষ্মের তীব্রতা আসে জাহান্নামের নিঃশ্বাস থেকে। আরবের মরু এলাকায় উত্তপ্ত বালু ও মরুঝড়ের কারণে সেখানে ভীষণ গরম দেখা দিত। তাই রাসুল (সা.) জোহরের সালাত কিছুটা বিলম্বে আদায় করতেন। এ জন্য গরম বেশি পড়লে জোহরের নামাজ দেরিতে পড়া সুন্নত। আবু জর (রা.) বলেন, এক সফরে আমরা রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম। এক সময় মুয়াজ্জিন জোহরের আজান দিতে চেয়েছিল। তখন নবীজি (সা.) বলেন, ‘গরম কমতে দাও।’ কিছুক্ষণ পর আবার মুয়াজ্জিন আজান দিতে চাইলে নবীজি (সা.) বললেন, ‘গরম কমতে দাও।’ এভাবে তিনি (সালাত আদায়ে) এত বিলম্ব করলেন যে, আমরা টিলাগুলোর ছায়া দেখতে পেলাম। এরপর নবীজি (সা.) বললেন, ‘গরমের প্রচণ্ডতা জাহান্নামের উত্তাপ হতে। কাজেই গরম প্রচণ্ড হলে উত্তাপ কমার পর সালাত আদায় কর।’ (বোখারি : ৫৩৯)।

গরমে অল্প আমলে অধিক সওয়াব

গরমে অল্প আমলে বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। একজন মোমিন সে আমল করে সহজেই আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারে। যেমন- গরমের রোজা শীতের থেকে বেশি কষ্টকর। সে কষ্ট উপেক্ষা করে যদি নফল রোজা রাখা যায়, তাহলে আল্লাহতায়ালা নেকিও দেবেন বেশি। সাহাবায়ে কেরাম (রা.) অধিক সওয়াবের আশায় গরমকালে রোজা রাখতেন। অনুরূপভাবে পিপাসার্তকে পানি পান করানো একটি উত্তম কাজ। আর যদি প্রচণ্ড গরমে কাউকে ঠান্ডা পানি পান করানো হয়, তাহলে তো কাজটি আরও উত্তম হবে। এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-কে প্রশ্ন করল, ‘কোন দান উত্তম?’ তিনি বললেন, ‘পানি পান করানো।’ (সুনানে নাসায়ি : ৫৪৫৬)। ইমাম কুরতুবি (রহ.) বলেন, ‘তৃষ্ণার্তের তৃষ্ণা নিবারণ সর্বোত্তম মহৎ কাজের একটি।’ অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেন, ‘সদকা বা দান জাহান্নামের আগুন নির্বাপণ করে। আর পানি পান করানো উত্তম সদকা।’ (সুনানে আবি দাউদ : ৭৪৩৫)। অতিরিক্ত গরম হলো জাহান্নামের নিঃশ্বাস। তাই জাহান্নামের ভয়ে বেশি করে এবং দীর্ঘ সুরায় নফল নামাজ আদায় করা উত্তম। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যখন গরম বেশি পড়বে, তখন বেশি নামাজ আদায় কর। কারণ, অতিরিক্ত গরম হলো জাহান্নামের নিশ্বাস।’ (মিশকাতুল মাসাবিহ : ৫৯১)।

গরম থেকে মোমিনের শিক্ষা

গরমের তীব্রতা থেকে মোমিনের জন্য রয়েছে শিক্ষা। কেননা, জাহান্নামের আগুনের উত্তাপ পৃথিবীর আগুনের চেয়ে ৭০ গুণ বেশি। তাই এর থেকে জাহান্নামের প্রখরতা অনুমান করে গোনাহ থেকে মুক্ত থাকা চাই। রাসুল (সা.) বলেন, ‘জাহান্নাম তার প্রতিপালকের কাছে এ বলে নালিশ করেছিল, হে আমার প্রতিপালক! (দহনের প্রচণ্ডতায়) আমার এক অংশ আরেক অংশকে গ্রাস করে ফেলছে। ফলে আল্লাহ তাকে দুটি শ্বাস ফেলার অনুমতি দেন। একটি শীতকালে, অপরটি গ্রীষ্মকালে। আর তাই তোমরা গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড উত্তাপ এবং শীতকালে তীব্র ঠান্ডা অনুভব কর।’ (বোখারি : ৫৪৫৫)। আল্লাহর নৈকট্য লাভ করার আরও মাধ্যম হচ্ছে, গরিব-দুঃখীদের মাঝে সুমিষ্ট ফল বিতরণ করা, ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করা, ঘর্মাক্ত শরীরে জনসমাগমে গমন না করা, গরমের সময় প্রবাহিত ঘামের গন্ধ যেন অন্যের কষ্টের কারণ না হয়, গ্রীষ্মকালকে গালমন্দ না করা।