ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কোরবানির পশু ক্রয়ে নির্দেশনা

যোবায়ের ইবনে ইউসুফ
কোরবানির পশু ক্রয়ে নির্দেশনা

কোরবানি ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। কোরবানির জন্য ইসলাম যেমন নির্দিষ্ট কিছু পশু নির্ধারণ করেছে, তদ্রƒপ পশুর স্বাস্থ্যগত বিভিন্ন বিষয়েও দিয়েছে সুস্পষ্ট নির্দেশনা। কোরবানির পশু ক্রয়ের আগে সেগুলো জেনে নেয়া কর্তব্য।

যেসব প্রাণী দিয়ে কোরবানি করা যায়

গৃহপালিত পশু ছাড়া কোরবানি করা যায় না। আবার গৃহপালিত পশুর মধ্যে শুধু উট, মহিষ, গরু, ছাগল, ভেড়া এবং দুম্বা দিয়ে কোরবানি করা যায়। এগুলো ছাড়া অন্যান্য পশু যেমন- হরিণ, বন্যগরু ইত্যাদি দিয়ে কোরবানি করা জায়েজ নেই। এমনিভাবে হাঁস-মুরগি বা কোনো পাখি দিয়েও কোরবানি জায়েজ নয়। (বাদায়েউস সানায়ে : ৪/২০৫)।

পশুর বয়স দেখতে হবে

পশু ক্রয়ের সময় সবার আগে পশুর বয়স দেখতে হবে। কেননা, কোরবানির পশুর জন্য শরিয়ত বয়স নির্ধারণ করে দিয়েছে। যেমন- উট কমপক্ষে পাঁচ বছর, গরু মহিষ দুই বছর আর দুম্বা ভেড়া ও ছাগল এক বছর। এর কম হলে কোরবানি শুদ্ধ হবে না। তবে ভেড়া ও দুম্বা যদি এক বছরের কিছু কমও হয়, কিন্তু দেখতে এক বছরের মতোই হৃষ্টপুষ্ট হয়, তাহলে তা দ্বারা কোরবানি বৈধ। কিন্তু ছাগলের ক্ষেত্রে এক বছর হওয়া আবশ্যক। (ফতোয়ায়ে কাজিখান : ৩/৩৪৮)।

বয়স যাচাইয়ের পদ্ধতি

কোরবানির পশুর বয়স পরিপূর্ণ হয়েছে কিনা, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য বিক্রেতার কাছে জিজ্ঞেস করতে হবে। যদি বিক্রেতা কোরবানির পশুর বয়স হয়েছে বলে স্বীকার করে এবং পশুর শরীর দেখেও তাই মনে হয়, তাহলে বিক্রেতার কথার ওপর ভিত্তি করে তা ক্রয় করা এবং কোরবানি করা বৈধ। (আহকামে ঈদুল আজহা : ৫)।

কোনো ত্রুটি আছে কিনা!

কোরবানির পশু হৃষ্টপুষ্ট ও ত্রুটিমুক্ত হওয়া উত্তম। (বাদায়েউস সানায়ে : ৪/২২৩)। পশু যদি এমন শুকনো বা দুর্বল হয়, জবাইয়ের স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারে না, তাহলে সে পশু দিয়ে কোরবানি করা জায়েজ নেই। (ফতোয়ায়ে আলমগিরি : ৫/২৯৭)।

পশুর দাঁত দেখতে হবে

কোরবানির পশু খাদ্য চিবিয়ে খেতে সক্ষম হতে হবে।

যে পশুর একটিও দাঁত নেই অথবা এত বেশি দাঁত পড়ে গেছে যে, ঘাস বা অন্যান্য খাদ্য চিবাতে পারে না, সে পশু দিয়ে কোরবানি করা জায়েজ নেই। (বাদায়েউস সানায়ে : ৪/২১৫)।

পশুর শিং দেখতে হবে

কোরবানির পশুর শিং ভালো থাকতে হবে। যে পশুর শিং একেবারে গোড়া থেকে ভেঙে গিয়ে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সে পশু দিয়ে কোরবানি করা জায়েজ নেই। তবে যে পশুর শিং অর্ধেক বা সামান্য ফেটে বা ভেঙে গেছে বা শিং একেবারেই ওঠেনি, সে পশু দিয়ে কোরবানি করা জায়েজ। (সুনানে আবি দাউদ : ৩৮৮)।

কান-লেজ দেখতে হবে

কোরবানির পশুর কান এবং লেজ দেখে ক্রয় করতে হবে। কারণ, যে পশুর লেজ বা দুই কান বা এক কানের অর্ধেক বা তারও বেশি কাটা বা ছেঁড়া, সে পশু দিয়ে কোরবানি করা জায়েজ নেই। তবে জন্মগতভাবেই যদি কান ছোট হয়, তাহলে অসুবিধা নেই। (তিরমিজি : ১/২৭৫)।

পশুর চোখ দেখতে হবে

কোরবানির পশু দৃষ্টিসম্পন্ন হতে হবে। যে পশুর উভয় চোখ অন্ধ অথবা এক চোখ পুরোপুরি নষ্ট, সে পশু দিয়ে কোরবানি করা জায়েজ নেই। রাসুল (সা.) বলেন, ‘চার ধরনের পশু দিয়ে কোরবানি করা যাবে না, যে পশুর চোখের জ্যোতি ক্ষতিগ্রস্ত, যে পশু অতি রোগাক্রান্ত, যে পশু বেশি খোঁড়া আর যে পশু অতি শীর্ণকায়।’ (তিরমিজি : ১৪৯৭)।

পশুর পা দেখতে হবে

কোরবানির পশুর সবগুলো পা ভালো আছে কিনা, দেখতে হবে। যে পশু তিন পায়ে ভর করে চলে, এক পা একেবারেই মাটিতে রাখতে পারে না, সে পশু দিয়েও কোরবানি জায়েজ হবে না। (সুনানে আবি দাউদ : ৩৮৭)।

পশু গর্ভবতী হলে করণীয়

কোরবানির পশু গর্ভবতী কি-না, তা যাচাই করে ক্রয় করা চাই। যদিও গর্ভবতী পশু কোরবানি করা জায়েজ। তবে যদি প্রসবের সময় আসন্ন হয়, তাহলে সেই পশু দিয়ে কোরবানি করা মাকরুহ। গর্ভবতী পশু জবাই করার পর যদি বাচ্চা জীবিত পাওয়া যায়, তাহলে সেটাও জবাই করতে হবে। কেউ চাইলে এর গোশত খেতেও পারবে। (ফতোয়ায়ে কাজিখান : ৩/৩৫০)।

পশু বন্ধ্যা হলে করণীয়

অনেকেই মনে করেন, কোরবানির পশু বন্ধ্যা হলে তা দ্বারা কোরবানি বিশুদ্ধ হয় না। আসলে বিষয়টা মোটেও এমন নয়। বরং বন্ধ্যা পশু দিয়েও কোরবানি করা জায়েজ। এতে কোনো সমস্যা নেই। (রদ্দুল মুহতার : ৬/৩২৫)।

নর বা মাদি পশুর বিধান

অনেকে মনে করেন, কোরবানির পশু মাদি না হয়ে নর হওয়া উত্তম। আসলে এটা ঠিক নয়। বরং যেসব পশু কোরবানি করা জায়েজ, সেগুলোর নর-মাদি উভয়টাই কোরবানি করা যায়। (বাদায়েউস সানায়ে : ৪/২০৫)।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত