ঢাকা ১০ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

প্রকৃতি ও মানুষ

হুমাইদুল্লাহ তাকরিম
প্রকৃতি ও মানুষ

মানবসৃষ্টির আগেই মহান আল্লাহ পৃথিবীকে মানুষের আবাস হিসেবে মনোনীত করেন। এ হিসেবে সৃষ্টি হওয়ার আগেই মানবজাতির সঙ্গে পৃথিবীর একটি সংযোগ স্থাপিত হয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যখন আপনার প্রতিপালক ফেরেশতাদের বলেন, নিশ্চয় আমি পৃথিবীতে আমার প্রতিনিধি প্রেরণ করব।’ (সুরা বাকারা : ৩০)। মুসলিম ঐতিহাসিকদের দাবি, মানুষ প্রেরণের আগে আল্লাহ পৃথিবীকে আবাসযোগ্য করে তোলেন। পৃথিবীতে বসবাসকারী অন্য জাতি-গোষ্ঠীকে ফেরেশতাদের মাধ্যমে বিতাড়িত করা হয়। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া : ১/১৭৮)। অন্যদিকে আল্লাহ মানবজাতিকে পৃথিবীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। এরশাদ হচ্ছে, ‘আল্লাহ আদমকে সব বস্তুর নাম শেখালেন।’ (সুরা বাকারা : ৩১)। মুজাহিদ (রহ.) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘তাকে প্রতিটি প্রাণী ও পাখি এবং সব জীব ও জড় বস্তুর নাম শিক্ষা দেয়া হয়।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির)।

পরিবেশের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক

ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতর জীব। পৃথিবীর আলো-বাতাস, খাদ্য-পানীয়, আবহাওয়া থেকেই সে তার জীবন ধারণের প্রয়োজনীয় উপাদান সংগ্রহ করে। সুতরাং পৃথিবীর প্রকৃতি, পরিবেশ ও জলবায়ুর সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। পবিত্র কোরআনে এ সম্পর্কের প্রতি ইঙ্গিত করে এরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয় আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি। আমি তাদের স্থলে ও জলে চলাচলের বাহন দান করেছি। তাদের উত্তম জীবনোপকরণ প্রদান করেছি। তাদের অনেক সৃষ্ট বস্তুর ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি।’ (সুরা বনি ইসরাইল : ৭০)।

জন্ম ও বিকাশে পরিবেশের গুরুত্ব

কোরআনের আলোকে মানুষের শারীরিক ও মানসিক গঠন এবং বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে প্রাকৃতিক উপাদান ও পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। যেমন- ১. শারীরিক বা জৈবিক গঠন : পৃথিবীর অন্যান্য প্রাণীর মতো মানুষও আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত প্রাকৃতিক উপায়ে ও প্রাকৃতিক উপাদানে জন্মগ্রহণ করে এবং তার শারীরিক বিকাশও হয় প্রাকৃতিকভাবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি মানুষকে মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর আমি তাকে শুক্রবিন্দুতে পরিণত করে এক সংরক্ষিত আঁধারে স্থাপন করেছি। এরপর আমি শুক্রবিন্দুকে জমাট রক্তরূপে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর জমাট রক্তকে মাংসপি-ে পরিণত করেছি। এরপর তাতে হাড় স্থাপন করেছি। অতঃপর হাড়কে মাংস দ্বারা আবৃত করেছি। অবশেষে তাকে এক নবরূপে দাঁড় করিয়েছি। নিপুণতম সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ কত কল্যাণময়! এরপর তোমরা মৃত্যুবরণ করবে।’ (সুরা মোমিনুন : ১২-১৫)।

মানসিক গঠন

আল্লাহ মানবজাতিকে যেসব উপাদানের মাধ্যমে পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন, তার অন্যতম হলো তার মানসিক গঠন। মানসিক গঠন দ্বারা উদ্দেশ্য তার বোধ ও বিশ্বাস। মানুষের বোধ ও বিশ্বাস পরিশুদ্ধ করার এবং তা সুদৃঢ়করণে প্রকৃতি ও পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। এ জন্য মহান আল্লাহ বলেন, ‘যদি আসমান ও জমিনে আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য থাকত, তবে তা অবশ্যই ধ্বংস হয়ে যেত।’ (সুরা আম্বিয়া : ২২)। নবুয়ত লাভের আগে ইবরাহিম (আ.)-এর বিশ্বাস পরিশুদ্ধকরণে চন্দ্র-সূর্যের প্রাকৃতিক উদয়-অস্ত ভূমিকা রেখেছিল। তিনি চন্দ্র-সূর্যের নিয়মাবর্তিতা দেখে বুঝতে পারেন, তাদের নিয়ন্ত্রক আছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘এভাবে আমি ইবরাহিমকে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর পরিচালনব্যবস্থা দেখাই; যাতে সে নিশ্চিত বিশ্বাসীদের অন্তর্ভুক্ত হয়।’ (সুরা আনআম : ৭৫)।

বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ

পরিবেশ ও প্রকৃতি মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ জন্য পবিত্র কোরআনের অসংখ্য আয়াতে মানুষকে আল্লাহর সৃষ্টি তথা পরিবেশ, প্রকৃতি ও আবহাওয়া নিয়ে ভাবতে বলা হয়েছে; যেন তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ ঘটে এবং তারা সত্যের দিশা লাভে সক্ষম হয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তারা কি উটের প্রতি লক্ষ্য করে না, তা কীভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে; আকাশের দিকে লক্ষ্য করে না, তা কীভাবে উচ্চ করা হয়েছে এবং পাহাড়ের দিকে যে, তা কীভাবে স্থাপন করা হয়েছে এবং পৃথিবীর দিকে যে, তা কিভাবে সমতল বিছানা হয়েছে।’ (সুরা গাশিয়া : ১৭-২০)।

মানবসেবায় নিয়োজিত প্রকৃতি

পৃথিবীর যাবতীয় সৃষ্টি ও প্রকৃতি মানুষের কল্যাণে ও সেবায় নিয়োজিত। এরশাদ হচ্ছে, ‘তিনিই সেই সত্তা, যিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্য যা কিছু জমিনে আছে।’ (সুরা বাকারা : ২২)। এ আয়াতে আল্লাহ প্রকৃতি ও পরিবেশকে মানুষের জন্য উপকারী ও বন্ধু হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। সুতরাং মানুষের দায়িত্ব হলো, তা সংরক্ষণ করা। পবিত্র কোরআনে সেসব মানুষের নিন্দা করা হয়েছে, যারা পৃথিবীর প্রকৃতি ও পরিবেশ ধ্বংসে ভূমিকা রাখে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘মানুষের মধ্যে এমন ব্যক্তি আছে, পার্থিব জীবন সম্পর্কে যার কথাবার্তা তোমাকে চমৎকৃত করে এবং তার অন্তরে যা আছে, সে সম্পর্কে আল্লাহকে সাক্ষী রাখে। প্রকৃতপক্ষে সে ভীষণ কলহপ্রিয়। যখন সে প্রস্থান করে, তখন পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টির এবং শস্যক্ষেত ও জীবজন্তু নিপাতের চেষ্টা করে। আল্লাহ অশান্তি পছন্দ করেন না।’ (সুরা বাকারা : ২০৪-২০৫)।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত