আল্লাহতায়ালা দাউদ (আ.) ও তার উত্তরাধিকারী সুলাইমান (আ.)-কে বিশেষ জ্ঞান দান করেছিলেন। তাকে অনেক মোমিন বান্দার ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করে বহু নেয়ামতে ধন্য করেছিলেন। সুলাইমান (আ.)-কে আল্লাহর প্রকাশ্য দয়ায় পাখিদের বুলি শেখানো হয় এবং প্রত্যেক ধরনের বস্তু দান করা হয়। সুলাইমান (আ.)-এর সামনে তার বাহিনী জিন, মানুষ এবং পক্ষীকুল একত্রিত করত।
তাদের পৃথক পৃথক দলে ভাগ করা হতো। একবার তার বাহিনী পিপীলিকার পাশ কেটে কোথাও যাচ্ছিল। তখন পিপীলিকার সরদার সুলাইমান (আ.) ও তার বাহিনীর অজান্তে যাতে পদদলিত না হয়, সে জন্য তার দলবলকে নিজ নিজ গর্তে প্রবেশ করতে বলল। সুলাইমান (আ.) পিপীলিকার শব্দ ও ইঙ্গিতের মর্ম উপলব্ধি করে মুচকি হাসলেন। আল্লাহর নেয়ামতের শোকর আদায় ও তার পছন্দের নেক কাজ করে নেককারদের অন্তর্ভুক্তির প্রার্থনা করলেন।
সুলাইমান (আ.) তার দরবারের পাখিগুলোর হাজিরা নিতেন। একবার এমনটা করলেন। কিন্তু তখন হুদহুদ নামক পাখিটিকে অনুপস্থিত পেলেন।
এতে তিনি সুস্পষ্ট কারণ না দেখাতে পারলে কঠিন শাস্তির ঘোষণা দিলেন। তারপর হুদহুদ এসে হাজির। বলল, সাবা (ইয়েমেন থেকে তিন দিনের দূরত্বে অবস্থিত শহর) সম্প্রদায় থেকে একটি সঠিক সংবাদ নিয়ে এসেছি, যা আপনি জানেন না। সেখানে দেখেছি, এক নারী রাজত্ব করছে। তাকে প্রত্যেক সরঞ্জাম দেয়া হয়েছে। তার সিংহাসনও খুবই বিরাট। তারা সূর্যের পূজা করে। শয়তান খারাপ কাজগুলোকে তাদের কাছে অতি শোভনীয় করে তাদেরকে সঠিক পথ থেকে দূরে রেখেছে। ফলে তারা সঠিক পথ পাচ্ছে না। সে চায়, যেন তারা আল্লাহকে সেজদা না করে।
সুলাইমান (আ.) সত্যতা যাচাইয়ের জন্য বললেন, আমার একটি চিঠি তাদের কাছে রেখে এসো। এরপর তাদের প্রতিক্রিয়া জানাও। হুদহুদ সেখানে গেল। সেই রাজদরবারের নেতৃবৃন্দের কাছে সুলাইমান (আ.)-এর পক্ষ থেকে পত্র পৌঁছাল। যাতে লেখা- ‘পরম দয়াময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। তোমরা আমার সামনে অহংকার কর না এবং আমার কাছে চলে এসো মুসলমান অবস্থায়।’ রাজদরবারের রানি বিলকিস দরবারের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে পরামর্শ করলেন। তারা বলল, আমরা তো যুদ্ধে শক্তিশালী ও পারদর্শী। নির্দেশ একমাত্র আপনারই। চিন্তা করুন- কী নির্দেশ দেবেন। সে বলল, বাদশাহরা যখন কোনো জনপদে যায়, তা ধ্বংস করে দেয়। সেখানকার সম্মানিত লোকদের লাঞ্ছিত করে, তারাও এরূপই করবে। আমি সুলামানের কাছে কিছু উপহার পাঠাচ্ছি। দেখা যাক, বাহক কী খবর নিয়ে আসে।
বাহক সুলাইমান (আ.)-এর কাছে এলো। তিনি সাফ জানিয়ে দিলেন, তোমরা আমাকে সম্পদ দ্বারা সাহায্য করতে চাও? অথচ আল্লাহ আমাকে এর চেয়ে উত্তম সম্পদ দিয়েছেন। তোমরা তোমাদের উপহার নিয়ে খুবই গর্ব অনুভব করছ। এগুলো নিয়ে তাদের কাছে ফিরে যাও। এমন সৈন্যবাহিনী নিয়ে আসব, যার মোকাবিলার শক্তি তোমাদের নেই। সুলাইমান (আ.) তার সভাসদদের বললেন, তোমাদের মধ্যে এমন কে আছ যে, তার সিংহাসন আমার কাছে নিয়ে আসবে তারা আসার আগে। জিনের মধ্য হতে এক পালোয়ান বলল, আপনার আসনে ওঠার আগেই আমি তা আপনার সামনে এনে দেব। আমি এ কাজে সামর্থ্যবান ও বিশ্বস্ত। কিন্তু যার কাছে কিতাবের জ্ঞান ছিল, সে বলল, আপনার চোখের পলক ফেরানোর আগেই আমি আপনার সামনে তা এনে দেব।
সুলাইমান (আ.) সেটিকে তার সামনে উপস্থিত দেখতে পেয়ে বললেন, এ আমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ। যাতে আমাকে পরীক্ষা করেন যে, আমি কৃতজ্ঞ না অকৃতজ্ঞ। যে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে, সে নিজেরই জন্য করে এবং যে অকৃতজ্ঞ (সে জেনে নিক) যে, আমার প্রতিপালক অমুখাপেক্ষী, মর্যাদাবান। এরপর সুলাইমান (আ.) বললেন, বিলকিসের জন্য তার সিংহাসনটি অচেনা করে দাও। দেখব, সে সঠিকভাবে চিনতে পারে না বিভ্রান্ত হয়? বিলকিস এলো। তাকে বলা হলো, তার সিংহাসনটি কি এরূপই? সে বলল, মনে হয় এটাই। এর আগেই আমাদের জ্ঞান দান করা হয়েছে এবং আমরা অনুগত হয়েছি।
তাকে প্রাসাদে প্রবেশ করতে বলা হলো। যখন সে সেটি দেখল, সেটাকে গভীর পানি ধারণা করল। তার উভয় পায়ের গোছা থেকে কাপড় তুলল। সুলাইমান (আ.) বললেন, এটা তো কাঁচের আস্তরি প্রাসাদ। বিলকিস বলল, আমি আমার আত্মার প্রতি অবিচার করছি। এখন আমি সুলাইমানের সঙ্গে সারা জাহানের প্রতিপালকের কাছে আত্মসমর্পন করছি। আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন যিনি। যিনি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ, তা দ্বারা সুন্দর বাগান, বৃক্ষাদি তৈরি করেছেন। পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে তার মধ্যে নদীগুলো প্রবাহিত করেছেন। স্থিরতার জন্য মজবুত পাহাড়গুলো, দুই সমুদ্রের মধ্যে প্রতিবন্ধক।
লেখক : সাধারণ সম্পাদক, বাইতুল মাওলা জামে মসজিদ, কাঁঠালবাগান, ঢাকা