মেন্দা: এ গাছটি বাংলাদেশের অঞ্চলভেদে চাপাইত্তা, কারজুকি, রতন, খারাজুরা নামেও পরিচিত। গ্রামাঞ্চলে এখনো পেটের পীড়া, রক্ত-আমাশা হলে পাতা বেটে পানিতে মিশিয়ে দুই বেলা খাওয়া হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, এ গাছটি ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা রাখে। এ গাছের বাকল ও পাতা উভয়ই ব্যবহার করা হয়। একসময় হাড় ভেঙে গেলে ছালের মিশ্রণে স্থানীয়ভাবে প্লাস্টারিংয়ে ব্যবহার করা হতো। অনেক সময় বুকের ব্যথার জন্য মালিশ করা হয়।
বনধনে: পেটের ব্যথা ও ডায়রিয়ার ওষুধে কার্যকর এটি। ঘা-পাঁচড়ার ক্ষেত্রে এর পাতার মিশ্রণ লাগানো হয়।
ভাট ফুল বা বনজুঁই: কৃমিনাশক এবং ডায়রিয়ার জন্য কাজ করে এটি। কাঁচা হলুদের সঙ্গে এর পাতার রস মিশিয়ে খাওয়ানো হয়। যাদের চর্ম রোগ রয়েছে, তারা এ ফুলের রস মালিশ করে উপকার পান।
নিম: ডায়াবেটিসের রোগীদের অনেকে নিমের পাতা শুকিয়ে ছোট ছোট ট্যাবলেট বানিয়ে সকাল-বিকাল খেয়ে থাকেন। এছাড়া বহুকাল থেকে চিকেন পক্স, চামড়ার অ্যালার্জির মতো সমস্যায় নিমের পাতা গরম পানিতে মিশিয়ে ব্যবহার করা হয়। পোকামাকড়ের কামড়ের ক্ষত হলে, সেখানে নিম আর হলুদের রস একসঙ্গে মিশিয়ে লাগানো হয়। দাঁতের ব্যথার জন্য নিমের ডালের রস ব্যবহার করা হয়।
তুলসী: এটি বাংলাদেশের অনেকের কাছেই পরিচিত। বিশেষ করে, গ্রামের অনেক বাড়িতেই দেখা যায়। সর্দিজনিত রোগে এ গাছটির পাতা খাওয়া হয়। অনেকে চায়ের সঙ্গেও ভিজিয়ে খান। বলা হয়ে থাকে, তুলসী পাতা ভেজে ঘি দিয়ে নিয়মিত খেলে মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়াতে কাজ করে।
চিরতা: এটি অনেক স্থানে কালমেঘ নামেও পরিচিত। ডায়াবেটিস রোগীরা খেয়ে থাকেন। পাতাগুলো গুঁড়ো করে পানির সঙ্গে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে অনেকে খান। পেট খারাপ, ডায়রিয়া, জ্বর ও বাত ব্যথার ক্ষেত্রে সারারাত পানিতে ভিজিয়ে খাওয়া হয়।
পাথরকুঁচি: গ্রামে একটা প্রচলিত ধারণা আছে, পাথরকুঁচি কিডনির পাথর ভাঙতে সহায়তা করে, যদিও এর বৈজ্ঞানিক ভিত্তি পাওয়া যায়নি। তবে ব্যবহারকারীরা গবেষকদের কাছে বলেছেন, জ্বর ও পেট ফাঁপার মতো সমস্যায় পাথরকুঁচির পাতা বেটে খেয়ে তারা উপকার পেয়েছেন। চামড়ার অ্যালার্জির জন্যও এটি বেটে ব্যবহার করা হয়। ঠান্ডাজনিত সমস্যায় পাথরকুঁচির পাতার রস ব্যবহার করা হয়।
তকমা: হজমশক্তি বৃদ্ধিকারক ও ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণে কাজ করে।
কেশরাজ বা কালোকেশী: ভারত উপমহাদেশে বহুকাল ধরেই চুলের যত্নে এ গুল্মজাতীয় গাছটি ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি চুলপড়া বন্ধ করতে সহায়তা করে বলে বিশ্বাস করা হয়। অনেকে বলেছেন, মেয়েদের মাসিকের সমস্যায় অনেকে পাতার রস খেয়ে থাকেন। বৈজ্ঞানিকভাবে এটা ছত্রাকরোধী বা অ্যান্টিফাঙ্গাল হিসেবে প্রমাণিত।
বাসক: ঠান্ডার জন্য ও ফুসফুসের নানা সমস্যায় বাসক পাতার রস ফুটিয়ে সেই রস বা পানি খাওয়ানো হয়। শ্বাসনালীর সমস্যায় লালাগ্রন্থিকে বাসকের রস সক্রিয় করে বলে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় দেখা গেছে। তবে অধিক মাত্রায় খেলে বমি ভাব হতে পারে।
অর্জুন: এ গাছের মূল, ছাল, কাণ্ড, পাতা, ফল ও ফুল ওষধি হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। হৃদরোগ, বুকে ব্যথার জন্য অর্জুনের ছাল গুঁড়ো করে খাওয়া হয়। অর্জুনের গুঁড়ো বাসক পাতার সঙ্গে মিশিয়ে খেলে যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে বলে মনে করা হয়। মচকে গেলে বা হাড়ে চিড় ধরলে রসুনের সঙ্গে মিশিয়ে অর্জুনের ছাল বেটে লাগালে উপকার পাওয়া যায়।
রিফিউজি লতা: এটি একেক অঞ্চলে একেক নামে পরিচিত। বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্র এ লতা গাছটি দেখা যায়। কেটে গেলে রক্তপাত বন্ধ করতে সহায়তা করে।
জবা: পেট খারাপের জন্য জবা গাছের পাতা ও ফুল গরম ভাতের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া হয়। জন্ডিসের জন্য এর পাতার জুস খাওয়া হয়। ফুলের রস নারীরা মাসিক ও স্রাবজনিত সমস্যার জন্য খেয়ে থাকেন।
লজ্জাবতী: অনেকে একে লাজুক লতা বা অঞ্জলিকারিকাও বলে থাকেন। এ গাছের শেকড় বেটে গুঁড়ো করে ডায়রিয়ার জন্য খাওয়া হয়ে থাকে। পাতা ঘা-পাঁচড়া নিরাময়ের জন্য ব্যবহার করা হয়। গাছের পাতা ও ফুল বেটে শরীরের ক্ষতের স্থানে ব্যবহার করা হয়। বাতজ্বর বা হাড়ের ব্যথায়ও গাছটি বেটে দিলে উপকার পাওয়া যায়। এছাড়া আমাশয়, হাত-পায়ে জ্বলুনির জন্য অনেকে লজ্জাবতী গাছের মিশ্রণ ব্যবহার করেন।
দূর্বা ঘাস: মাঠে, ঘাটে, রাস্তায় এ ঘাস অবাধে জন্মালেও অনেকেরই এর ঔষধি গুণের কথা জানা নেই। রক্তক্ষরণ, আঘাতজনিত কেটে যাওয়া, চর্ম রোগে এ ঘাসের রস অনেক উপকারী। কোথাও কেটে গেলে এর পাতার রস লাগালে রক্তপাত তাৎক্ষণিক বন্ধ হয়ে যায়। এতে অনেক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে বলে গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে।
ধুতুরা: এটি এখন বিলুপ্তির পথে। এটি অনেকে অ্যাজমার জন্য ব্যবহার করতেন। পাতা শুকিয়ে গুঁড়ো করে ধোয়া তৈরি করে সেটা শোকা হতো।
থানকুনি: এটি সম্ভবত বাংলাদেশে বহুল প্রচলিত একটি ঔষধি উদ্ভিদ। খুবই সাধারণ যে কোনো পেটের ওষুধের জন্য থানকুনি পাতা কার্যকরী। থানকুনির পাতা বেটে রস বা ভর্তা করে খাওয়া হয়। এ পাতা হজম শক্তি বাড়ায়, কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে, চুল পড়া কমায়, ক্ষত নিরাময়ে সহায়তা করে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
স্বর্ণলতা: জন্ডিস নিরাময়, তলপেটের ব্যথা কমানো ও ক্ষত উপশমে এ লতা কাজ করে বলে গবেষণায় দেখা গেছে। লতা সেদ্ধ করে পানি খাওয়া হয়।
এ লতার পানি পিত্তনাশক ও কৃমি দমনে সহায়তা করে। ব্যাকটেরিয়া দমনেও এটি সহায়ক। তবে এ পাতার রস অনেক সময় গর্ভপাত বা প্রজনন ক্ষমতা কমিয়ে দেয় বলেও ধারণা আছে।
শতমূলী: শতমূলী উচ্চমানের ফলিক এসিড ও পটাশিয়ামের প্রাকৃতিক উৎস। এতে ফাইবার, ভিটামিন এ ও ভিটামিন বি রয়েছে। এটি বন্ধ্যাত্ব নিরাময় ও শক্তিবর্ধক হিসেবে কাজ করে। সেইসঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও সহায়তা করে।
বিলিম্বি: কামরাঙ্গা গোত্রের একটি ফল হলেও এটি আলাদা ধরনের ফল। এ ফল ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণে প্রমাণিত। গবেষণায় দেখা গেছে, এর ভেতরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আছে। চুলকানি নিরাময়, মাম্পস, চামড়া ফাটা, যৌনরোগ চিকিৎসায় অনেক আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক এ গাছের ফল ও পাতা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে যাদের কিডনির রোগ রয়েছে, তাদের জন্য এ ফল বা পাতা ক্ষতিকর।
সাজনা: উচ্চ রক্তচাপ ও লিভারের বিভিন্ন ওষুধে সাজনার পাতা ও ফল ব্যবহার করা হয়।
মনে করা হয়, সাজনা খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। কাচা রসুনের সঙ্গে সাজনা গাছের পাতা মিলিয়ে খেলে বাতের ব্যথার উপশম হয়। এছাড়া এ গাছের পাতা ও ফল অনেক পুষ্টিকারক বলে গবেষণায় দেখা গেছে। রুচি বৃদ্ধি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে বলে বহুকাল ধরে ভারতীয় উপমহাদেশে বিশ্বাস রয়েছে। এছাড়া আমলকি, হরিতকী, বহেরার মতো ফলগুলো ঔষধি হিসেবে বহুকাল ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।