বিশ্বনিখিলের দৃশ্য-অদৃশ্য শত-কোটি প্রকৃতি-বৈচিত্র্য মানুষের ক্ষুদ্রজ্ঞানে আয়ত্ত করা অসম্ভব। বিশ্বপ্রকৃতি তার অসংখ্য-অজস্র রূপ-মাধুরীর রহস্যজালে মানুষকে বিমোহিত ও কৌতুহলী করে রেখেছে যুগ যুগ ধরে। গ্রহ-সৌরজগৎ থেকে শুরু করে মাটির নিচ পর্যন্ত গবেষণা বাকি রেখেছে মানুষ? তবুও কি জেনে শেষ করতে পেরেছে পৃথিবীর রূপ-প্রকৃতির সব রহস্য! সাত সাগর-মহাদেশের এ বিশাল লীলাভূমির প্রতিটি ভাঁজে ভাঁজে আল্লাহতায়ালা সুবিন্যস্ত করে রেখেছেন জানা-অজানা নানা উপকরণ। তবে প্রত্যেকটি জীব-জানোয়ার ও বস্তুকে সৃষ্টি করেছেন মানুষের উপকারের জন্য। এটি মানুষের জন্য আল্লাহতায়ালার এক মহাঅনুগ্রহ। আকাশের চন্দ্র-সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র সবই মানুষের অপরিহার্য বস্তু। এর বাইরে মেঘ-বৃষ্টির উপকারিতাও সবার জানা। আবার জমিনেও আল্লাহর হাজারো-কোটি সৃষ্টি। পাহাড়-সাগর, ঝরনা-নহর, বন-বনানীর বৃক্ষবহর, ধু-ধু মরুভূমি আর নদী-নালা, খাল-বিল সব আল্লাহ মানুষের উপকারের জন্য সৃষ্টি করেছেন। প্রকৃতির এসব রূপ-বৈচিত্র্যই মানবজাতির জন্য আল্লাহতায়ালার অপার অনুগ্রহ ও দয়ার ফসল।
প্রকৃতির রূপে যাঁর নিদর্শন : এ পৃথিবীর যেখানে আমরা মানবজাতিসহ বিভিন্ন প্রাণী বাস করি, তা নিঃসন্দেহে খুবই চমকপ্রদ। আমরা আমাদের চারপাশের প্রকৃতিতে দেখি নানা ধরনের ফুল-ফসল ও চোখজুড়ানো অপরূপ প্রাকৃতিক দৃশ্য। এগুলো একজন ঈমানদারের কাছে আল্লাহতায়ালার নিদর্শনস্বরূপ। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘ তিনি সেই সত্তা, যিনি ভূতলকে বিস্তৃত করেছেন এবং তাতে অটল পাহাড় ও নদ-নদী সৃষ্টি করেছেন। প্রত্যেক ফল জোড়া-জোড়া সৃষ্টি করেছেন; তিনি রাতের আবরণে দিনকে আবৃত করেন। নিশ্চয়ই এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য বহু নিদর্শন রয়েছে।’ (সুরা রাদ : ৩)। প্রকৃতির ধর্ম বলা হয় ইসলামকে।
কেননা, আশরাফুল মাখলুকাত অর্থাৎ সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ হচ্ছে সামাজিক জীব। এ মানুষ জাতিকে নিয়েই পরিবেশ, প্রকৃতি ও সমাজের সৃষ্টি। আর পরিবার, সমাজ ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও সুন্দর প্রকৃতি নিয়ে ইসলামের পরিবেশগত চিন্তাভাবনা উল্লেখযোগ্য। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে বলা হয়েছে, ‘তাদের জন্য নিদর্শন একটি মৃতভূমি। আমি একে সঞ্জীবিত করি এবং তা থেকে উৎপন্ন করি শস্য, তারা তা ভক্ষণ করে। আমি তাতে উৎপন্ন করি খেজুর এবং প্রবাহিত করি ঝরনাধারা, যাতে তারা ফল খায়।’ (সুরা ইয়াসিন : ৩৩)।
দৃষ্টিনন্দন ফল-ফসল : পৃথিবীর রূপ-প্রকৃতির বিরাট অংশজুড়ে রয়েছে গাছপালা। সবুজ-শ্যামলিমায় চোখজুড়ানো সারি সারি বৃক্ষ ও গাছগাছালি, নানা জাতের উদ্ভিদ, গুল্মলতাও মহান আল্লাহর বিশেষ সৃষ্টি। এছাড়া পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষা এবং মানবোন্নয়নে গাছের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ, গাছপালা না থাকলে এ পৃথিবীতে বসবাস করা অসম্ভব ছিল। মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসে অক্সিজেন গ্রহণের ক্ষেত্রে গাছপালার ভূমিকা অনস্বীকার্য। একটি সুন্দর পরিবেশ ও সুস্বাস্থ্যের জন্য গাছ-গাছালির তুলনা নেই। তাই গাছ মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের ও আমাদের পরিবেশের জন্য অমূল্য নেয়ামত। এছাড়া গাছে আছে অফুরন্ত রিজিক। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘পৃথিবীকে আমি উৎপন্ন করেছি সব ধরনের নয়নাভিরাম উদ্ভিদ প্রত্যেক বিনীত ব্যক্তির জন্য, যা চাক্ষুষ জ্ঞান ও উপদেশস্বরূপ। আর আমি আকাশ থেকে বরকতময় বৃষ্টি বর্ষণ করি। অতঃপর তার মাধ্যমে বাগান ও শস্য বীজ উদ্গত করি। আর দীর্ঘ খেজুরগাছ; যাতে থাকে গুচ্ছ গুচ্ছ খেজুরের মোচা, বান্দাদের জীবিকা হিসেবে। আমি এর দ্বারা জীবিত করি মৃত জনপদকে। আসলে এভাবেই হবে পুনরুত্থান।’ (সুরা কফ : ৭-১১)। ফসল ও ফলমূল আল্লাহর অপার দান। এ বিষয়ে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা যে শস্য বীজ বপন কর, সে বিষয়ে ভেবে দেখেছ কি? তোমরা কি ওটা উৎপন্ন কর নাকি আমি উৎপন্ন করি? আমি চাইলে অবশ্যই তা খড়কুটায় পরিণত করতে পারি। তখন তোমরা হতবুদ্ধি হয়ে পড়বে। (বলবে), আমরা তো নিশ্চিতভাবে ধ্বংস হয়ে গেলাম; বরং আমরা তো বঞ্চিত হয়ে গেলাম।’ (সুরা ওয়াকিয়া : ৬৩-৬৭)। গাছ থেকে উৎপাদিত ফল-ফসল খেয়ে প্রাণীকুল জীবন ধারণ করে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি আকাশ থেকে বারি বর্ষণ করি পরিমাণমতো। অতঃপর তা জমিনে সংরক্ষণ করি। আর আমি ওটাকে সরিয়ে নিতেও সক্ষম। অতঃপর আমি তা দিয়ে তোমাদের খেজুর ও আঙুরের বাগান সৃষ্টি করি। তোমাদের জন্য সেখানে থাকে প্রচুর ফল-ফলাদি এবং তোমরা তা থেকে ভক্ষণ করে থাক। আর আমি সৃষ্টি করেছি (জয়তুন) বৃক্ষ; যা সিনাই পর্বতে জন্মায়, যা থেকে উৎপন্ন হয় তেল এবং ভক্ষণকারীদের জন্য রুচিসম্মত খাদ্য।’ (সুরা মোমিনুন : ১৮-২০)। গবাদিপশুর জীবিকাও বৃক্ষ, লতাপাতা থেকে উৎপন্ন হয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি দেখে না, আমি ঊষর ভূমিতে (বৃষ্টির) পানি প্রবাহিত করি। অতঃপর তার মাধ্যমে শস্য উৎপাদন করি। যা থেকে ভক্ষণ করে তাদের গবাদিপশু এবং তারা নিজেরা। এরপরও কি তারা উপলব্ধি করবে না?’ (সুরা সাজদা : ২৭)।