স্মরণশক্তি বৃদ্ধি
এক চা চামচ পুদিনা পাতার রস বা কমলার রস বা এক কাপ রং চায়ের সঙ্গে এক চা চামচ কালোজিরার তেল মিশিয়ে দিনে তিনবার করে নিয়মিত সেব্য; যা দুশ্চিন্তা দূর করে। এছাড়া কালোজিরা মেধার বিকাশের জন্য কাজ করে দ্বিগুণ হারে। মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চলন বৃদ্ধির মাধ্যমে স্মরণশক্তি বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। কালোজিরা খেলে আমাদের দেহে রক্ত সঞ্চালন ঠিকমতো হয়। এতে মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। ফলে এটি আমাদের স্মৃতিশক্তি বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।
মাথাব্যথা নিরাময় : ১/২ চা চামচ কালোজিরার তেল মাথায় ভালোভাবে লাগাতে হবে। এক চা চামচ কালোজিরার তেল সমপরিমাণ মধুসহ দিনে তিনবার করে ২/৩ সপ্তাহ সেব্য। তাহলে মাথাব্যথার স্থায়ী নিরাময় মেলে।
ঠান্ডা রোগের অপসারণ : এক চা চামচ কালোজিরার তেল সমপরিমাণ মধু বা এক কাপ রং চায়ের সঙ্গে মিশিয়ে দৈনিক তিনবার সেব্য। মাথায় ও ঘাড়ে রোগ সেরে না যাওয়া পর্যন্ত মালিশ চালিয়ে যেতে হয়। এছাড়া এক চা চামচ কালোজিরার সঙ্গে তিন চা চামচ মধু ও দুই চা চামচ তুলসী পাতার রস মিশিয়ে খেলে জ্বর, ব্যথা, সর্দি-কাশি দূর হয়। পাতলা-পরিষ্কার কাপড়ে কালোজিরা বেঁধে শুকতে থাকলে শ্লেষ্মা তরল হয়ে ঝরে পড়ে। বুকে ও পিঠে কালোজিরার তেল মালিশ করলে দ্রুত ফল পাওয়া যায়।
বাতব্যথা দূরীকরণ : ব্যথার স্থানে মালিশ করে এক চা চামচ কাঁচা হলুদের রসের সঙ্গে সমপরিমাণ কালোজিরার তেল, সমপরিমাণ মধু বা এক কাপ রং চায়ের সঙ্গে দৈনিক তিনবার করে ২/৩ সপ্তাহ সেব্য। তাহলে বাতব্যথার নিরাময় মেলে।
হার্টের সমস্যা সমাধান : এক চা চামচ কালোজিরার তেলসহ এক কাপ দুধ খেয়ে দৈনিক দুইবার ৪ থেকে ৫ সপ্তাহ সেব্য। শুধু কালোজিরার তেল বুকে নিয়মিত মালিশ চালিয়ে গেলে হার্টের যাবতীয় সমস্যার সমাধান মেলে।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ : প্রতিদিন সকালে রসুনের দুটি কোষ চিবিয়ে খেয়ে সমস্ত শরীরে কালোজিরার তেল মালিশ করতে হয়। সূর্যের তাপে কমপক্ষে আধাঘণ্টা অবস্থান করা এবং এক চা চামচ কালোজিরার তেল সমপরিমাণ মধুসহ প্রতি সপ্তাহে ২ থেকে ৩ দিন সেব্য, যা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখে। এছাড়া কালোজিরা বা কালোজিরার তেল বহুমূত্র রোগীদের রক্তের শর্করার মাত্রা কমিয়ে দেয় এবং নিম্ন রক্তচাপকে বৃদ্ধি করে ও উচ্চ রক্তচাপকে হ্রাস করে।
পাইলস রোগের নিরাময় : এক চা চামচ মাখন ও সমপরিমাণ তিলের তেল, এক চা চামচ কালোজিরার তেলসহ প্রতিদিন খালি পেটে ৩ থেকে ৪ সপ্তাহ সেব্য। তাহলে পাইলস রোগের নিরাময় মেলে।
শ্বাসকষ্টের প্রতিরোধ : যারা হাঁপানি বা শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভোগেন, তাদের জন্য কালোজিরা অনেক বেশি উপকারী। প্রতিদিন কালোজিরার ভর্তা রাখুন খাদ্য তালিকায়। কালোজিরায় হাঁপানি বা শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার উপশম হয়। এছাড়া এক কাপ চা চামচ কালোজিরার তেল, এক কাপ দুধ বা রং চায়ের সঙ্গে দৈনিক তিন বার করে নিয়মিত সেব্য।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ : ডায়াবেটিস রোগ উপশমে বেশ কাজে লাগে কালোজিরা। এক চিমটি পরিমাণ কালোজিরা এক গ্লাস পানির সঙ্গে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। এছাড়া এক কাপ চা চামচ কালোজিরার তেল, এক কাপ রং চা বা গরম ভাতের সঙ্গে মিশিয়ে দৈনিক দুইবার করে নিয়মিত সেব্য; যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে শতভাগ কার্যকরী।
জৈবশক্তি বৃদ্ধি : কালোজিরা নারী-পুরুষ উভয়ের যৌন সক্ষমতা বাড়ায়। প্রতিদিন কালোজিরা খাবারের সঙ্গে খেলে পুরুষত্বহীনতা থেকে মুক্তির সম্ভাবনা তৈরি করে। মধ্যপ্রাচ্যে প্রচলিত আছে, কালোজিরা যৌনক্ষমতা বাড়ায় এবং পুরুষত্বহীনতা থেকে মুক্তি দিতে সহায়তা করে। এক চা চামচ মাখন, এক চা চামচ জায়তুন তেল সমপরিমাণ কালোজিরার তেল ও মধুসহ দৈনিক তিনবার ৪ থেকে ৫ সপ্তাহ সেব্য। তবে পুরোনো কালোজিরার তেল স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক।
মেহরোগের সমাধান : এক কাপ কাঁচা হলুদের রস বা সমপরিমাণ আতপ চাল ধোয়া পানির সঙ্গে এক কাপ চা চামচ কালোজিরার তেল মিশিয়ে দৈনিক তিন বার করে নিয়মিত সেব্য; যা অনিয়মিত মেহরোগ নিরাময়ে শতভাগ কার্যকরী।
দুধ বৃদ্ধির জন্য : যেসব মায়েদের বুকে পর্যাপ্ত দুধ নেই, তাদের জন্যও মহৌষধ কালোজিরা। মায়েরা প্রতি রাতে শোয়ার আগে ৫-১০ গ্রাম কালোজিরা মিহি করে দুধের সঙ্গে খেলে মাত্র ১০ থেকে ১৫ দিনে দুধের প্রবাহ বেড়ে যাবে। এছাড়া এ সমস্যা সমাধানে কালোজিরা ভর্তা করে ভাতের সঙ্গে খেতে পারেন। সর্বোপরি এক চা চামচ কালোজিরার তেল সমপরিমাণ মধুসহ দৈনিক তিনবার করে নিয়মিত সেব্য; যা দুধ বৃদ্ধিতে শতভাগ কার্যকরী।
তারুণ্য ধারণে সহায়ক : ত্বকের গঠনের উন্নতি ও উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য কালোজিরা অত্যাবশ্যকীয়; যা পরিবেশের প্রখরতা ইত্যাদি থেকে ত্বককে রক্ষা করে। ত্বককে সুন্দর করে ও ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখে। এছাড়া মধু ও কালোজিরার পেস্ট বানিয়ে ত্বকে লাগিয়ে আধাঘণ্টা বা ১ ঘণ্টা রেখে দিলেও ত্বক উজ্জ্বল হয়। শুকনো ত্বকের জন্য কালোজিরার গুঁড়া ও কালোজিরার তেলের সঙ্গে তিলের তেল মিশিয়ে ত্বকে লাগালে এক সপ্তাহের মধ্যে লক্ষণীয় পরিবর্তন মেলে।
আমাশয়ের নিরাময় : এক চা চামচ তেল সমপরিমাণ মধুসহ দিনে তিনবার করে কালোজিরা ২ দুই ৩ সপ্তাহ সেব্য। তাহলে আমাশয়ের স্থায়ী নিরাময় মেলে।
জন্ডিস-লিভার দূরীকরণ : এক গ্লাস ত্রিফলার শরবতের সঙ্গে এক চা চামচ কালোজিরার তেল দিনে তিনবার করে ৪ থেকে ৫ সপ্তাহ সেব্য। এতে জন্ডিস বা লিভারজনিত সব সমস্যার নিরাময় মেলে।
দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধিকরণ : দুই বছরের অধিক বয়সি শিশুদের কালোজিরা খাওয়ানোর অভ্যাস করলে দ্রুত শিশুর দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধি ঘটে। শিশুর মস্তিষ্কের সুস্থতা ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতেও অনেক কাজ করে কালোজিরা। দুই বছরের কম বয়সের বাচ্চাদের কালোজিরার তেল সেবন করা উচিত নয়। তবে বাহ্যিকভাবে ব্যবহার করা যায়।
হজমের সমস্যা দূরীকরণ : হজমের সমস্যায় এক-দুই চামচ কালোজিরা বেটে পানির সঙ্গে প্রতিদিন দুই-তিনবার খেলে এক মাসের মধ্যে হজমশক্তি বেড়ে যায়। পাশাপাশি পেট ফাঁপা ভাবও দূর হয়। চুল পড়া বন্ধ হয় কালোজিরা খাওয়ার ফলে চুল পর্যাপ্ত পুষ্টি পায়। কালোজিরার তেল চুলের গোড়ায় মালিশ করলে আশানুরূপ ফল পাওয়া সম্ভব। কালোজিরার তেল চুলের কোষকে সতেজ ও শক্তিশালী করে। যার ফলে নতুন চুল জন্মায়। এছাড়া কালোজিরার তেল চুলের গোড়া শক্ত করে ও চুল পড়া কমায়। এর তেল ব্যবহারে রাতভর শান্তির ঘুম হয়।
দাঁতব্যথা দূরীকরণ : দাঁতে ব্যথা হলে কুসুম গরম পানিতে কালোজিরা দিয়ে কুলি করলে ব্যথা কমে। জিহ্বা, তালু, দাঁতের মাড়ির জীবাণু ধ্বংস করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি : কালোজিরা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে। নিয়মিত কালোজিরা খেলে শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সতেজ থাকে। এতে যে কোনো জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে দেহকে প্রস্তুত করে তোলে। সার্বিকভাবে স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। ১ চামচ কালোজিরা অথবা কয়েক ফোঁটা কালোজিরার তেল ও ১ চামচ মধুসহ প্রতিদিন সেবন করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।