লীলাভূমি সুন্দরবন
প্রকাশ : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
তাবাসসুম মাহমুদ
পৃথিবীতে যতগুলো ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট আছে, তার মধ্যে অন্যতম সেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অধিকারী বাংলাদেশের সুন্দরবন। যা একেবারে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলঘেঁষা খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলার অন্তর্গত এবং পশ্চিম অঞ্চলটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত। এককথায় বলা চলে, বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী দক্ষিণবঙ্গের জন-জঙ্গলাকীর্ণ সুবিস্তৃত গাঙ্গেয় নিম্নভূমি অঞ্চলের সাধারণ নাম ‘সুন্দরবন’। খ্রিষ্ট ষষ্ঠ শতকের আগে গঙ্গার মূল প্রবাহ থেকে ভৈরব ও পদ্মা নদী প্রবাহিত হওয়ার পর সুন্দরবন অঞ্চলে ব-দ্বীপের সৃষ্টি হতে থাকে। কোনো কোনো গবেষকের ধারণা, পঞ্চম শতক থেকে তেরো শতকের মধ্যে বঙ্গোপসাগরের বুক থেকে এ অঞ্চলে আস্তে আস্তে জেগে উঠতে থাকে কখনো পলির দ্বীপ হিসেবে, কখনো গভীর অরণ্য প্রাকৃতিকভাবে সংকুল আনা বাসযোগ্য জলাভূমি হিসেবে। যা দেখতে চারিদিক থেকে বিষ্ময়কর, ভেতরে বিশাল জলাকার এবং তার সব ফাঁকা অঞ্চলজুড়ে বিশাল জঙ্গল। দেখতে অত্যন্ত সুন্দর, চোখ জুড়িয়ে আসে। পৃথিবীতে যতগুলো সেরা সৃষ্টি, বাঙালির গর্ব ‘সুন্দরবন’ তার অন্যতম।
এ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সুন্দরবনের পরিচিতি প্রচ্ছন্ন রয়েছে ইতিহাসসমৃদ্ধ গঙ্গা হৃদয়, গঙ্গে সমতট, কালিকাবন ইত্যাদি স্থান নামের অন্তরালে। মধ্যযুগের মুসলমান ঐতিহাসিকরা এ নিম্নভূমি বনাঞ্চলকে ‘ভাটি’ নামে উল্লেখ করেছেন। পাঠান যুগের শেষে এখানে বারো ভুঁঞার আধিপত্য অতিশয় বৃদ্ধি পায় বলে এর নাম দাঁড়ায় ‘বারো ভাটি বাঙ্গালা’। এর পরপরই বনটির অতিমাত্রায় সৌন্দর্য বৃদ্ধির কারণে এর নাম হয় ‘সুন্দরবন’। এ সুখশ্রাব্য নামটি অতি দ্রুত প্রচলিত হতে থাকে। সুন্দরবনের উৎপত্তি বিষয়ে নানা ব্যাখ্যা কথিত আছে। সুন্দরবনের সর্বত্রজুড়ে প্রচুর সুন্দরী বৃক্ষ জন্মে এবং সুন্দরী বৃক্ষ বা গাছ অন্যান্য বৃক্ষ থেকে অনেকটা জনসাধারণের কাছে প্রিয়। তাই সুন্দরী বৃক্ষ হতেই বনের নামকরণ করা হয়েছে ‘সুন্দরবন’। ইংরেজ শাসনামলে বিদেশি পর্যটকরা সুন্দর বনের নানা প্রকার বৃক্ষাদি দর্শনে একে ‘জঙ্গল অব সুন্দরী ট্রিস’ নামে আখ্যায়িত করেন। এ সুন্দরী শব্দ থেকে ধীরে ধীরে বনাঞ্চলটির নাম হয় সুন্দরবন। সুন্দরবনকে আমরা যেভাবেই সজ্ঞায়িত করি না কেন, দক্ষিণ বংলার ঐতিহ্যবাহী ও গর্ব করার মতো এক নয়নাভিরাম দৃশ্য সুন্দরবন। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে, পূর্ব অঞ্চলে এবং একেবারে দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে বিশাল বিশাল পাহাড়ের নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখে দর্শনার্থীরা অত্যন্ত মুগ্ধ হন। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র হলেও এ দেশের চারিদিকের যে প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং ঐতিহাসিক স্থান-স্থাপনা, তা পৃথিবীর অন্য কোথাও নেই। বিশেষ করে, সুন্দরবনের মতো ‘বন’ নিয়ে আমরা গর্বিত। এ দেশ আমাদের অহংকার।