অগ্রহায়ণ ধান আর নবান্নের প্রতীক। আবহমান গ্রামবাংলার উৎসবমুখর এ মাস। বাংলা সনের অষ্টম মাস। কার্তিক আর অগ্রহায়ণ মিলে হেমন্ত। ঋতু বদলের পালায় ষড়ঋতু পর্যায়ে অগ্রহায়ণ হেমন্তের দ্বিতীয় মাস। বাতাসে বাতাসে নতুন ধানের মৌ মৌ গন্ধ আর আবহমান গ্রামবাংলায় বাঙালি গৃহস্থের গোলা ভরে ওঠার মাস। অতীতে একসময় এ মাসটিকে বছরের প্রথম মাস ধরা হতো। ‘অগ্র’ শব্দের অর্থ ‘আগে’, আর ‘হায়ণ’ শব্দের অর্থ ‘বছর’।
অগ্রহায়ণ শব্দের আভিধানিক অর্থ, বছরের যে সময় শ্রেষ্ঠ ব্রীহি (ধান) উৎপন্ন হয়। এ সময়ে প্রচুর ধান উৎপন্ন হতো বলে এ মাসটিকে বছরের প্রথম মাস ধরা হতো। অন্যদিকে স্বরবর্ণের আদ্যাক্ষর আদি অ-তে অগ্রহায়ণ শব্দটি রচিত বলে বাংলা বছরের সূচনা মাস হিসেবে অগ্রহায়ণকে ধরা হয়। এ মাসের আরেক নাম মার্গশীর্ষ। মৃগশিরা নামক তারা থেকে মার্গশীর্ষ নামটি এসেছে। সনাতন ধর্মাবলম্বী হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে এটি ধনের দেবী লক্ষ্মীর মাস। বাঙালি আর লোকসমাজে বিশ্বাস অনুযায়ী বিয়ে পক্ষে বিশেষ শুভ মাস।
শীতের আলতো পরশ, কুয়াশার চাদর আর আবহমান গ্রামবাংলায় নবান্ন মাতোয়ারায় আসে অগ্রহায়ণ। ‘ধন্য অগ্রহায়ণ মাস/ ধন্য অগ্রহায়ণ মাস/ বিফল জনম তার/ নাহি যার চাষ।’ মধ্যযুগীয় কবি মুকুন্দরাম প্রায় পাঁচ শতাব্দী আগে ‘চণ্ডীমঙ্গল’ কাব্যে এভাবেই অগ্রহায়ণের গুণকীর্তন করেছেন।
সম্রাট আকবরের আমলে খাজনা আদায়ের মধ্যদিয়ে অগ্রহায়ণ মাস থেকে বাংলা বছরের গণনা শুরু হয়। ‘অগ্রহায়ণ’ আর ‘নবান্ন’ একই সূত্রে গাঁথা। বাংলার কৃষিজীবি সমাজে শস্য উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায়ে যেসব আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসব পালিত হয়, নবান্ন তার অন্যতম। ‘নবান্ন’ শব্দের অর্থ ‘নতুন অন্ন’। নবান্ন উৎসব হলো, নতুন আমন ধান কাটার পর সেই ধান থেকে প্রস্তুত চালের প্রথম রান্না উপলক্ষ্যে আয়োজিত উৎসব। সাধারণত অগ্রহায়ণ মাসে আমন ধান কাটার পর এ উৎসব অনুষ্ঠিত হয় বাঙালির ঘরে ঘরে।
লেখক : কবি ও সাহিত্যিক