আধুনিক যুগে নগরায়ন ও সভ্যতা বিকাশের সঙ্গে তালমিলিয়ে দেশ-বিদেশে ফুলের প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফুল এখন আর শুধু সৌন্দর্য ও সৌখিনতার সামগ্রীই নয়, বরং ফুল এখন দেশের জাতীয় অর্থনীতি এবং বৈদেশিক বাণিজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। বাংলাদেশের যশোর জেলার ঝিকরগাছা, শার্শা, চৌগাছা ও যশোর সদর উপজেলা এবং কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ ও চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে রজনীগন্ধার চাষ হচ্ছে। এছাড়া সাতক্ষীরা, জয়দেবপুর, কুমিল্লা এবং চট্টগ্রামেও অল্পবিস্তর রজনীগন্ধার চাষ হয়। ইদানিং খুলনা জেলায়ও কিছু কিছু রজনীগন্ধা ও গোলাপ ফুলের চাষ শুরু হয়েছে। এছাড়া ঢাকা জেলার সাভার, গাজীপুর, কালিয়াকৈর এবং যশোরে গোলাপ ফুলের ব্যাপক চাষ হয়। বিশ্বজুড়ে চলছে এখন ফুলের বাণিজ্যিক উৎপাদন। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে টাটা ও বিরলার মতো বড় মাপের ব্যবসায়ীরা বাণিজ্যিকভাবে ফুলের চাষ করছে। ভারতে ফুল চাষকে উৎসাহিত করার জন্য ভর্তুকি ব্যবস্থা আছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এ ভর্তুকির পরিমাণ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে থাকে। বাণিজ্যিকভাবে ফুল উৎপাদনের লক্ষ্যে ভারতের মতো আমাদের দেশেও ভর্তুকি ব্যবস্থা চালু করা প্রয়োজন।
আন্তর্জাতিক বাজারে ফুলের চাহিদা ব্যাপক এবং প্রতি বছর ফুলের চাহিদা বাড়ছে। সে তুলনায় সরবরাহ কম। এক তথ্যে জানা যায়, বিশ্বে প্রতি বছর গড়ে আড়াই হাজার কোটি ডলার মূল্যের ফুল বেচাকেনা হয়। ফুল রপ্তানির দিক থেকে বাংলাদেশ পৃথিবীর অনেক দেশের চেয়ে বেশি পিছিয়ে আছে। বাংলাদেশের চেয়ে ক্ষুদ্র রাষ্ট্র ইসরাইল ফুল রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রায় যে পরিমাণ অর্থ প্রতি বছর আয় করে থাকে, তা বহু উন্নয়নশীল দেশের রপ্তানি বাণিজ্যের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত মধ্যপ্রাচ্য এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রতি বছর ফুল রপ্তানি করে কোটি কোটি রুপি আয় করছে। তাদের অভ্যন্তরীণ বাজারও বিশাল। অতি সম্প্রতি লন্ডন, সিঙ্গাপুর, সৌদি আরব, হল্যান্ড এবং আবুধাবিতে বাংলাদেশ থেকে ফুল রপ্তানি করা হচ্ছে। অথচ আমাদের দেশে উৎপাদিত ফুলের আকার, রং, গন্ধ স্থায়িত্ব ও সৌন্দর্য আপেক্ষাকৃত উন্নত হওয়া সত্ত্বেও আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। তাই একটু চেষ্টা ও কার্যকরী উদ্যোগ থাকলেই বিশ্ববাজারে এ দেশের উৎপাদিত ফুল স্থান করে নিতে পারে। এজন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা একান্ত প্রয়োজন। কারণ, ফুলের বাণিজ্যিক চাষ ও ফুল রপ্তানি বাংলাদেশের রপ্তানি আয়কে উজ্জীবিত করতে পারে। কাজেই আমাদের দেশেও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ব্যাপকভাবে ফুল উৎপাদন করে তা বিদেশে রপ্তানির ব্যবস্থা আরো জোরদার করা আবশ্যক। এতে একদিকে যেমন দেশে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হবে, অন্যদিকে বিপুল বেকার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং আয়ের পথ সুগম হবে; যা দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ও গ্রামীণ দারিদ্র্য বিমোচনে এক বিরাট অবদান রাখবে।