কনকনে শীতে জবুথবু চারপাশ। দেশজুড়ে চলছে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড। পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে না অনেকেই। শীতের প্রকোপে অসহায় লোকজন মহাবিপাকে। প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে সুবিধাবঞ্চিতরা হতবিহ্বল। তীব্র শীতে পোহাচ্ছে চরম দুর্ভোগ। হাসপাতালগুলোতেও বাড়ছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। এদের পাশে দাঁড়ানো বিত্তবান ও সামর্থবানদের কর্তব্য। নিজ নিজ দায়িত্ববোধ থেকে এগিয়ে আসা করণীয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা তাদের দান কর আল্লাহর সেই সম্পদ থেকে, যা তিনি তোমাদের দান করেছেন।’ (সুরা নুর : ৩৩)। আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘নিশ্চয়ই দানশীল পুরুষ ও নারী এবং যারা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দেয়, তাদের বহুগুণ বাড়িয়ে দেওয়া হবে। তাদের জন্য রয়েছে সম্মানজনক প্রতিদান।’ (সুরা হাদিদ : ১৮)।
দানে মেলে দয়া ও প্রতিদান : শীতবস্ত্র, কম্বল, খাবার ও প্রয়োজনীয় ওষুধ তীব্র শীতে অসহায়ের শীত নিবারণে সহায়ক। তাই অসহায়, দরিদ্র, ছিন্নমূল মানুষদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া উচিত। তাহলেই তাদের শীতের কষ্ট লাঘব হবে। আল্লাহর দেওয়া সম্পদ, বিদ্যা, শ্রম দিয়ে শীতার্ত ও দুর্গত মানুষদের সাহায্য করার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জিত হবে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘দয়াশীলদের ওপর করুণাময় আল্লাহতায়ালা দয়া করেন। তোমরা দুনিয়াবাসীর ওপর দয়া কর, তাহলে যিনি আসমানে আছেন, তিনিও তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।’ (সুনানে আবি দাউদ : ৪৯৪১)।
দান জীবনের নিরাপত্তা : শীতের পোশাক আছে, তবু শীত এলে নতুন পোশাক কিনি। সামর্থ্য থাকলে কিনতে দোষ নেই। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না, হাড়কাঁপানো শীতে রাস্তায় অনেকে পোশাকের অভাবে বহুকষ্টে রাতযাপন করে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের দরিদ্র এলাকার লোকদের দুর্দশা অবর্ণনীয়। প্রত্যেকে নিজ নিজ জায়গা থেকে এদের জন্য সামান্য অর্থ বরাদ্দ রাখা চাই। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা দিনরাতে গোপনে ও প্রকাশ্যে তাদের ধন দান করে, তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের কাছে পুরস্কার রয়েছে। সুতরাং তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্তও হবে না।’ (সুরা বাকারা : ২৭৪)। আলোচ্য আয়াতে যারা সর্বাবস্থায় দান করে, তাদের জন্য অপরিমেয় পুরস্কার এবং পরকালে নিরাপদ নির্বিঘ্ন জীবনের ঘোষণা রয়েছে।
দাতার কল্যাণার্থে রবের প্রতিপালন : বনি ইসরাইলের এক ব্যভিচারী নারীকে আল্লাহতায়ালা শুধু একটি পিপাসিত কুকুরকে পানি পানের জন্য ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মানুষের পাশে দাঁড়ালে, কেয়ামতের ভয়াবহ দিনে আল্লাহতায়ালা ক্ষমা করে দিতে পারেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি হালাল অর্জন থেকে একটি খেজুর পরিমাণ সদকা করবে (আল্লাহ তা কবুল করেন) এবং আল্লাহ কেবল পবিত্র বস্তু কবুল করেন। আর আল্লাহ তাঁর ডান হাত দ্বারা তা কবুল করেন। এরপর আল্লাহ দাতার কল্যাণার্থে তা প্রতিপালন করেন, যেমন তোমাদের কেউ অশ্বশাবক প্রতিপালন করে থাকে। অবশেষে সেই সদকা পাহাড় সমপরিমাণ হয়ে যায়।’ (বোখারি : ১৪১০)।
জেগে উঠুক সৃষ্টির প্রতি মমতা : শীতের আগমনে ঘরে ঘরে পিঠা-পুলি খাওয়ার ধুম পড়েছে। শীতে আমরা দেশ-বিদেশ ঘুরতে যাই। অথচ আশপাশের কত মানুষ অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটায়! আমরা তার খবরও রাখি না। রাসুল (সা.) বলেন, কেয়ামত দিবসে নিশ্চয় আল্লাহতায়ালা বলবেন, ‘হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ হয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমার শুশ্রূষা করোনি।’ বান্দা বলবে, ‘হে আমার প্রতিপালক! আপনি তো বিশ্বপালনকর্তা, কীভাবে আমি আপনার শুশ্রূষা করব?’ তিনি বলবেন, ‘তুমি কি জানতে না, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল, অথচ তাকে তুমি দেখতে যাওনি। তুমি কি জান না, যদি তুমি তার শুশ্রূষা করতে, তবে তুমি তার কাছেই আমাকে পেতে?’ এরপর বলবেন, ‘হে আদম সন্তান! আমি তোমার কাছে আহার চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে আহার করাওনি।’ বান্দা বলবে, ‘হে আমার রব! তুমি হলে বিশ্বপালনকর্তা, তোমাকে আমি কীভাবে আহার করাব?’ তিনি বলবেন, ‘তুমি কি জান না যে, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে খাদ্য চেয়েছিল, কিন্তু তাকে তুমি খাদ্য দাওনি। তুমি কি জান না, তুমি যদি তাকে আহার করাতে, তাহলে আজ তা প্রাপ্ত হতে।’ এরপর বলবেন, ‘হে আদম সন্তান! তোমার কাছে আমি পানীয় চেয়েছিলাম, অথচ তুমি আমাকে পানীয় দাওনি।’ বান্দা বলবে, ‘হে আমার রব! তুমি তো রাব্বুল আলামিন; তোমাকে আমি কীভাবে পান করাব?’ তিনি বলবেন, ‘তোমার কাছে আমার অমুক বান্দা পানি চেয়েছিল, কিন্তু তাকে তুমি পান করাওনি। তাকে যদি পান করাতে, তাহলে নিশ্চয় আজ তা প্রাপ্ত হতে।’ (মুসলিম : ৬৭২১)।