ঋতু বৈচিত্র্যের লীলাভূমি আমাদের এ বাংলাদেশ। এ দেশের পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে বিচিত্র ঋতুর সুষমা-সৌন্দর্য। কখনও গ্রীষ্মের তাপদাহ, কখনও বর্ষার রিমঝিম বৃষ্টি, কখনও শরতের পেঁজা তুলোর মতো স্নিগ্ধতা, কখনও আবার হেমন্তের সোনালি সৌন্দর্য, কখনো বা শীতের রুক্ষ্মতা ও বসন্তের প্রাণবন্ত রূপ-বিভা বিমোহিত করে রাখে আবহমান বাংলার প্রতিটি মানব-মন।
ঋতুবৈচিত্র্যে ইসলাম : প্রতিটি ঋতুই বিচিত্র বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল। ভিন্ন রূপ, ভিন্ন সাজ আর ভিন্ন শোভা-সৌন্দর্যের দরুণ প্রতিটি ঋতুই বাঙালির কাছে যেমন সমান গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও প্রতিটি ঋতু তাৎপর্যপূর্ণ। সময় বা কালের দুর্বৈবকে ইসলাম সমর্থন করে না। যদিও প্রাচীনকাল থেকেই কোনো মন্দ বিষয় ঘটলে তাকে সময় বা কালের দিকে সম্পৃক্ত করার প্রচলন রয়েছে। এমনকি বর্তমানেও সময়কে খারাপ, মন্দ অভিধায় অভিযুক্ত করার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। অথচ নবীজি (সা.) বিষয়টিকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও ভুল আখ্যায়িত করেছেন। হাদিসে কুদসিতে এসেছে, আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘মানুষ আমাকে কষ্ট দেয়। তারা সময়কে গালি দেয়। অথচ আমিই সময় (এর মালিক)। দিন-রাতের পরিবর্তন আমিই ঘটাই।’ (বোখারি : ৭৪৯১, মুসলিম : ২২৪৬)। এ কারণেই ইসলাম ধর্মে সব ঋতু, সব সময় সমান। আর একজন প্রকৃত ঈমানদারের কাছে প্রতিটি মুহূর্তই মূল্যবান। প্রতিটি মুহূর্তকেই ইবাদতের মাধ্যমে প্রাণবন্ত ও সজীব করে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা চালায় প্রতিটি মোমিন। তা সত্ত্বেও কিছু সময় থাকে বিশেষ। কিছু কাল আসে অল্প সময়ে অনেক নেকি অর্জনের মহাসুযোগ নিয়ে। তেমনি একটি সময় শীতকাল।
মোমিনের বসন্ত : শীতকাল অল্প সময়ে অনেক নেকি অর্জনের মোক্ষম সময়। কারণ, শীতের রাত হয় দীর্ঘ। ফলে অনেক সময় ধরে ইবাদত করা যায়। প্রশান্ত হৃদয়ে মহান রবের কাছে বলা যায় হৃদয়ের আকুতি। শীতের সময় সবাই খানিকটা গুটিয়ে যায়। জবুথবু হয়ে থাকে। গুটিসুটি মেরে পড়ে থাকে একটু সুযোগ পেলে। খুব সহজে বেরুতে চায় না কাঁথার নিচ থেকে। কনকনে শীতের এ পরিবেশে পানি হয় ভয়ানক ঠান্ডা। সেই পানিতে অজু করে নামাজ আদায় অবশ্যই মানুষকে আল্লাহর প্রিয় করে তোলে। শীতকালে দিন হয় ছোট। ফলে বেশি বেশি নফল রোজা রাখা সম্ভবপর হয়ে ওঠে। এ ছাড়া আরও নানা কারণে এ শীত অল্প ইবাদতে বেশি নেকি অর্জন করা যায়। নবীজি (সা.)-এর বাণীতে বিষয়টি আরও বাক্সময়। আরও চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘শীতকাল হচ্ছে মোমিনের বসন্তকাল।’ (মুসনাদে আহমদ : ১১৬৫৬)।
আমাদের করণীয় : যেহেতু শীতের রাত দীর্ঘ হয়, তাই আমরা বেশি বেশি নফল নামাজ পড়ার চেষ্টা করতে পারি। যদি বেশি নামাজ পড়া সম্ভবপর না হয়, তবে অহেতুক কাজে সময় নষ্ট না করে ঘুমিয়ে পড়া চাই। কেননা, মোমিনের ঘুমও ইবাদত। সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রলিং করতে করতে যেন আমাদের রাত শেষ হয়ে না যায়। এ সময় দিন ছোট হয়। তাই নফল রোজার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারি। শীতকালে ঠান্ডার প্রকোপে আমাদের ইবাদত করতে ইচ্ছে করে না। ইচ্ছে করে না ভোরবেলা মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করতে। অথচ হাদিসে এসেছে, একবার নবীজি (সা.) সাহাবিদের লক্ষ্য করে বললেন, ‘আমি কি তোমাদের এমন এক আমল সম্পর্কে বলব, যার মাধ্যমে আল্লাহ গোনাহসমূহ ক্ষমা করবেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন?’ সাহাবিরা বললেন, ‘অবশ্যই বলুন ইয়া রাসুলাল্লাহ!’ নবীজি (সা.) বললেন, ‘অনিচ্ছা সত্ত্বেও অজু করা; বেশি বেশি মসজিদে যাওয়া এবং এক নামাজের পর অন্য নামাজের অপেক্ষায় থাকা।’ (মুসলিম : ২৫১)। তাছাড়া আমাদের আশপাশে যেসব লোকেরা শীতে কষ্ট পাচ্ছে, পথের ধারে বস্ত্রহীন পড়ে ঠকঠক করে কাঁপছে, তাদের শীতবস্ত্র ব্যবস্থার মাধ্যমেও আমরা এ সময়ে সওয়াব লাভ করতে পারি। শুধু প্রয়োজন একটু সচেতনতা, একটু সতর্ক দৃষ্টি। তবেই আমরা অল্প সময়ে অশেষ নেকি লাভে ধন্য হবো। ঐশ্বরিক সৌন্দর্যের পবিত্রতায় ভরে উঠবে আমাদের জীবন।