শীতের পরম বার্তা
আবদুল্লাহ নুর
প্রকাশ : ১৭ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
চারদিকে মাঘের দাপাদাপি। কুয়াশাচ্ছন্ন সকাল, মিষ্টি রোদেলা দুপুর। হৃদয়-মননে লেগেছে নৈসর্গিক প্রশান্তি। প্রকৃতিতে এসেছে আমূল পরিবর্তন। এর ছোঁয়া লেগেছে প্রতিটি মোমিন হৃদয়ে। ইসলামে শীতকালকে বেশ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘শীত মোমিনের বসন্তকাল।’ (মুসনাদে আহমদ : ১১৬৫৬)। আর আল্লাহর প্রত্যেক নিদর্শনেই মানুষের জন্য শিক্ষা রয়েছে। শীতকালও এর ব্যতিক্রম নয়।
আবেদ হওয়ার শিক্ষা : শীতকালের দিন ছোট আর রাত বড়। রাসুল (সা.) শীতকালের বিভিন্ন ফজিলত বর্ণনা করেছেন। ইবাদতগোজার হতে উৎসাহিত করেছেন। যেমন- শীতকালের অজু সম্পর্কে রাসুল (সা.) সাহাবায়ে কেরাম (রা.)-কে বলেন, ‘আমি কি তোমাদের এমন বিষয়ের সংবাদ দেব না, যার মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা তোমাদের গোনাহগুলো মুছে দেবেন এবং তোমাদের মর্যাদা ও সম্মান বৃদ্ধি করবেন?’ সাহাবিরা বললেন, ‘অবশ্যই হে আল্লাহর রাসুল!’ নবীজি (সা.) বললেন, ‘(শীত বা অন্য কোনো) কষ্টকর মুহূর্তে ভালোভাবে অজু করা।’ (মুসলিম : ২৫১)। আবার দিন ছোট হওয়ায় রোজা রাখাও সহজ। তাই রাসুল (সা.) তার উম্মতদের জন্য শীতকালের রোজা গনিমত বলেছেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘শীতের গনিমত হচ্ছে শীতকালে রোজা রাখা।’ (তিরমিজি : ৭৯৭)।
আত্মীয়তার বন্ধন দৃঢ়করণ : ইসলাম পারিবারিক ও সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সর্বদা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষার্থে আরও দৃঢ়। হাদিসের ভাষ্যে আত্মীয়তা ছিন্নকারীর পরিণাম কঠোর। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (বোখারি : ৫৯৮৪, মুসলিম : ২৫৫৬, তিরমিজি : ১৯০৯, সুনানে আবি দাউদ : ১৬৯৬)।
শীতকালে খেজুর রসের ঘ্রাণে মৌ মৌ করে গ্রামগঞ্জ। গ্রামের ঘরে ঘরে আয়োজিত হয় শিরনি ও পিঠা উৎসব। তবে শহুরে বসবাসরত বাসিন্দাদের রস ও পিঠা নাগালে পাওয়া খুবই দুষ্কর। শীতকালে গ্রামের বাসিন্দাদের শহুরে স্বজনদের কাছে এসব পিঠা ও মিষ্টান্ন পাঠানো চাই। যার দ্বারা উভয়ের আত্মীয়তার বন্ধন দৃঢ় হবে। একে অপরের মাঝে মহব্বতও বৃদ্ধি পাবে। কেন না, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা পরস্পরে হাদিয়া বা উপহার আদান-প্রদান কর, তাহলে তোমাদের পারস্পরিক মহব্বত সৃষ্টি হবে।’ (আদাবুল মুফরাদ : ৫৯৭)।
দানের হাত প্রসারিতকরণ : আল্লাহতায়ালা দয়াশীল। তিনি দয়াকারীকে পছন্দ করেন। যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া করে না, আল্লাহও তার প্রতি দয়া করেন না। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা তার প্রতি দয়া করেন না, যে মানুষের প্রতি দয়া করে না।’ (বোখারি : ৭৩৭৬)। বাংলাদেশ ষড় ঋতুর দেশ। তবে শীত ও গ্রীষ্মকালের প্রভাব বেশি। শীতের প্রকোপে জবুথুবু হয়ে যায় মানুষ। হাঁড়কাপানো শীতে কেউ কেউ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। শীতজনিত রোগীর সংখ্যা হাসপাতালে অনেক। তাই বস্ত্রহীনদের শীতবস্ত্র ও রোগীদের ওষুধ প্রদানের মাধ্যমে তাদের পাশে দাঁড়ানো চাই। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা দান কর আল্লাহর সেই সম্পদ থেকে, যা তিনি তোমাদের দান করেছেন।’ (সুরা নুর : ১৩)।