শীতকাল আল্লাহর এক বিশেষ নেয়ামত। শীতের বাজারে প্রচুর শাকসবজি আর ফলমূল আসে। কনকনে শীতের দিনে দেশজুড়ে চলে পিঠাপুলির উৎসব। মিঠাই এবং মধুর চাহিদা সারাবছর থাকলেও শীতে মধু কেনাকাটার হিড়িক পড়ে যায়। কোরআন-হাদিসের আলোকে মধু পানের উপকারিতা তুলে ধরা হলো-
মধু আল্লাহর বিশেষ নেয়ামত : মধুতে রয়েছে নানান রোগের প্রতিকার। মধু তৈরি ও সংরক্ষণের ব্যবস্থাও আল্লাহর কুদরতের এক আশ্চর্য নিদর্শন। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, তোমার পালনকর্তা মৌমাছিকে নির্দেশ দিলেন, ‘তোমরা পাহাড়-পর্বতে, গাছে ও মানুষের নির্মিত ঘরে মৌচাক তৈরি কর। অতঃপর বিভিন্ন ফল-ফুল থেকে আহার কর এবং তোমার প্রতিপালকের সহজ পথ অনুসরণ কর। এর উদর হতে নির্গত হয় বিভিন্ন বর্ণের পানীয়, যাতে মানুষের জন্য রয়েছে আরোগ্য। অবশ্যই এতে রয়েছে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন।’ (সুরা নাহল : ৬৮৬৯)।
হাদিসে মধু পানের নির্দেশ : আল্লাহতায়ালা রাসুল (সা.)-এর কাছে মধুর উপকারিতা অহির মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা দুই আরোগ্য দানকারী মধু ও কোরআনকে অবশ্যই গ্রহণ করবে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ : ৩৪৫২)। রাসুল (সা.) মধু ব্যবহারে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। আবু সাঈদ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, এক ব্যক্তি নবীজি (সা.)-এর কাছে এসে বলল, ‘আমার ভাইয়ের পেটে অসুখ (ডায়রিয়া) হয়েছে।’ তখন নবীজি (সা.) বললেন, ‘তাকে মধু পান করাও।’ এরপর লোকটি দ্বিতীয়বার এলে তিনি বললেন, ‘তাকে মধু পান করাও।’ সে তৃতীয়বার এলে তিনি আবার বললেন, ‘তাকে মধু পান করাও।’ এরপর লোকটি পুনরায় এসে বলল, আমি অনুরূপ করেছি। তখন নবীজি (সা.) বললেন, ‘আল্লাহ সত্য বলেছেন, কিন্তু তোমার ভাইয়ের পেট অসত্য বলছে। তাকে মধু পান করাও।’ সে তাকে মধু পান করাল। এবার সে আরোগ্য লাভ করল। (বোখারি : ৫২৮২)।
বিজ্ঞানের গবেষণায় মধু : যুগ যুগ ধরে চিকিৎসাক্ষেত্রে মধু ব্যবহার হয়ে আসছে। এলোপ্যাথি, হোমিওপ্যাথি ও আয়ুর্বেদিক পদ্ধতিতে মধু উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। বিজ্ঞানের গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, মধুর মধ্যে রয়েছে শক্তিশালী জীবাণুনাশক ক্ষমতা, যা রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া সহজে ধ্বংস করে দেয়। মধুতে সর্দি-কাশি, শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি ও জখম ভালো হওয়ার উপাদান আছে। সিউডোমোনাস ও সেপটোকোকেই জীবাণু প্রতিরোধেও বিশেষ উপকারী।
মধু ব্যবসায়ীদের সাবধানতা : মধুর সুস্বাদু খাদ্য নির্যাসের কথা কমবেশি সবাই জানে। এজন্য মধুর প্রতি মানুষের আজন্ম আকর্ষণ। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে মধুতে ভেজাল মেশায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। চটকদার নানান বক্তব্যে হাতিয়ে নেয় মানুষের টাকা। মধু ব্যবসায়ীদের সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। কেননা, পণ্যে ভেজাল মিশিয়ে দেওয়া গোনাহের কাজ। ধোঁকাবাজ ও প্রতারকদের উদ্দেশ্যে মহান আল্লাহ বলেন, ‘হীন ঠকবাজরা ধ্বংস হোক! যারা লোকদের থেকে গ্রহণ করার সময় পুরোপুরি গ্রহণ করে, কিন্তু অন্যকে মেপে ও ওজন করে দেওয়ার সময় কম দেয়।’ (সুরা মুতাফফিফিন : ১৩)। প্রতারক ও ঠকবাজরা নবীর উম্মত নয়। এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘প্রতারক ও ধোঁকাবাজদের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।’ (তিরমিজি : ১৩১৫)।