বিলুপ্তির পথে পশুপাখি

তাবাসসুম মাহমুদ

প্রকাশ : ৩১ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

জীব-বৈচিত্র্যের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিলুপ্ত হচ্ছে নানা প্রজাতির প্রাণী। অস্তিত্ব সংকট ও হুমকির মধ্যে রয়েছে প্রাণীসম্পদ। গত ২০০ বছরে বিলুপ্ত হয়েছে অন্তত ৩০০ প্রজাতির প্রাণী। ঝুঁকিতে আছে আরো শ’খানেক। প্রকৃতির প্রতি মানুষের শাসন, পরিবেশ দূষণ ও পরিবর্তিত জলবায়ুর কারণে পরিবেশ বিপর্যয় জোরালো হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। হারিয়ে যেতে পারে অতি পরিচিত প্রাণীও। আগামী কয়েক বছরে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ প্রাণী বিলুপ্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। কয়েক দশক ধরেই ধারাবাহিকভাবে কমেছে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা। ১১ বছরে ৩৩৪টি বাঘ কমেছে। বর্তমানে এ সংখ্যা ১০৬। ১৯৮০ সালের পর এ পর্যন্ত সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে ৭০টি বাঘ মারা গেছে। মানুষ-হাতি দ্বন্দ্ব বা খাদ্যের অভাবে কমেছে হাতির সংখ্যাও। সবমিলিয়ে সারা দেশে ২০০-এর বেশি হাতি নেই। আর প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষাকারী শকুন প্রায় বিলুপ্তির পথে। টিকে থাকা শকুনের সংখ্যা কোনোক্রমেই ৩০০-এর বেশি হবে না।

বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের অভিমত : বৃষ্টিভেজা রাতে ঘরের পাশে এখন আর অগের মতো শোনা যায় না ব্যাঙের ডাক। ক্রমাগত বিলুপ্ত হচ্ছে ব্যাঙের নানা প্রজাতি। কমেছে কাছিমের সংখ্যাও। হারিয়ে যাচ্ছে জাতীয় পাখি দোয়েল। এ প্রসঙ্গে বিশ্লেষকরা মনে করেন, প্রাণী শিকারের প্রতি মানুষের মনোবৃত্তি, ভোগের ইচ্ছা ও অর্থনৈতিক কারণই প্রাণী কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। তার মতে, দেশের কোথাও চারণভূমি নেই। ফলে খাদ্যসঙ্কটে গবাদিপশু। এখনও সুন্দরবনে অবৈধভাবে হরিণ শিকার হয়। হরিণ শিকারের কারণেও বাঘের সংখ্যা কমছে বলে তাদের অভিমত। বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের মতে, সংরক্ষণ ও আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাবে মোট বন্যপ্রজাতির ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ আগামী কয়েক বছরে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। তাদের মতে, বিদ্যমান পরিবেশের সঙ্গে খাপ খেয়ে যে হাজারখানেক প্রজাতির বন্যপ্রাণী টিকে আছে, যারা পরিবর্তিত পরিবেশে বিপন্ন, অর্ধেক প্রজাতিই এখন কোনো না কোনো ধরনের হুমকির সম্মুখীন।

১০৬ প্রজাতির নলবাহী উদ্ভিদ বিপন্নপ্রায় : ওয়াইল্ড লাইফ ট্রাস্ট বাংলাদেশ ও দ্য ওয়ার্ল্ড কনজারভেশন ইউনিয়ন বাংলাদেশ শাখার এক জরিপের তথ্য থেকে জানা যায়, গত ২০০ বছরে বিলুপ্ত হয়েছে অন্তত ৩০০ প্রজাতির প্রাণী। দেড়শ’ প্রজাতির বন্যপ্রাণী, ১৩ প্রজাতির মেরুদণ্ডী প্রাণী, ৪৭ প্রজাতির দেশি পাখি, ৮ প্রজাতির উভচর, ৬৩ প্রজাতির সরীসৃপ ও ১০ স্তন্যপায়ী প্রাণীর ১০টি মিলিয়ে প্রায় তিনশ’ প্রজাতির বন্যপ্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এ ছাড়া বিপন্ন ৪৩ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী। একইভাবে বিপন্ন অবস্থায় ১০৬ প্রজাতির নলবাহী উদ্ভিদ। জানা গেছে, দেশের অধিকাংশ নদী বর্ষাকাল শেষে মরা খালে পরিণত হয়। বিষাক্ত বর্জ্য ও নদীতে সারা বছর পানি না থাকার কারণে মাছসহ বিভিন্ন ধরনের জলজ প্রাণীও বিলুপ্তির পথে। মিঠা পানির প্রায় ৫৪ শতাংশ প্রজাতির মাছ এখন বিলুপ্ত। শামুক, ঝিনুক, কচ্ছপ আগের মতো দেখা যায় না। নদীতে বসবাসকারী ঘড়িয়াল ও শুশুকও বিলুপ্তির তালিকায় রয়েছে। আর গ্রামে আগের মতো দেখা যায় না গুইশাপ।

অবৈধভাবে শিকার ও বিক্রির অনুযোগ : অভিযোগ রয়েছে, বিলুপ্তির পথে এমন প্রজাতির বিভিন্ন প্রকার বন্য পশু-পাখি রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে অবাধে বিক্রি হয়। রাজধানীর কাঁটাবনের পশু-পাখির মার্কেট এর অন্যতম। বিরলপ্রায় সব ধরনের পশু-পাখি এখানে পাওয়া যায়। লালমুখো বানর, লজ্জাবতী বানর, মুখপোড়া হনুমান, লাল ঠোঁটের টিয়া, শিকারি ঈগল, হরিণ, বন্যবিড়াল-কুকুর, বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, সাপসহ অনেক প্রাণী বিক্রি হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। একইভাবে দেশের বিভিন্ন জেলায়ও প্রকাশ্যে গড়ে উঠেছে এমন মার্কেট, যেখানে অবৈধভাবে বিক্রি হচ্ছে বিলুপ্ত সব প্রাণী। প্রাণী বিশেষজ্ঞদের মতে, অবৈধভাবে শিকার ও বিক্রির কারণে বিলুপ্ত হচ্ছে এসব প্রজাতি।

লেখক : গবেষক ও প্রাবন্ধিক