নিজের ইফতারের সঙ্গে অন্যের ইফতারের ব্যবস্থা করা মহৎ কাজ। যারা অন্যকে ইফতার করায়, আল্লাহ তাদের পূর্ণ রোজা রাখার সওয়াব দান করেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, সে রোজাদারের সমপরিমাণ সওয়াব পাবে; রোজাদারের প্রতিদান থেকে একটুও সওয়াব কমানো হবে না।’ (তিরমিজি : ৮০৭)।
এছাড়া রোজাদারের ইফতারকালীন দোয়া ফেরৎ দেওয়া হয় না। তাই কোনো অভাবীকে ইফতার করালে নিশ্চয়ই সে মন খুলে দোয়া করে। আর রাসুল (সা.) বলেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেয়া হয় না- এক. ন্যায়পরায়ণ শাসক; দুই. রোজাদার, যখন সে ইফতার করে; তিন. মজলুমের বদ দোয়া।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ : ১৭৫২)।
অভাবীকে অন্ন দানের প্রতি রাব্বুল আলামিন উৎসাহ প্রদান করেছেন। আর সেই অভাবী যদি হয় রোজাদার, তাহলে তো কথাই নেই। যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিঃস্বার্থভাবে ক্ষুধার্ত মানুষের খাবারের ব্যবস্থা করে, আল্লাহতায়ালা তাদের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘নিশ্চয়ই সৎকর্মশীলরা খাদ্যের প্রতি আসক্তি থাকা সত্ত্বেও মিসকিন, এতিম ও বন্দিকে খাদ্য দান করে। তারা বলে, আমরা তো আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে তোমাদের খাদ্য দান করি। আমরা তোমাদের থেকে কোনো প্রতিদান চাই না এবং কোনো শোকরও না। আমরা আমাদের রবের পক্ষ থেকে এক ভয়ংকর ভীতিপ্রদ দিবসের ভয় করি। সুতরাং সেই দিবসের অকল্যাণ থেকে আল্লাহ তাদের রক্ষা করলেন। তাদের প্রদান করলেন উজ্জ্বলতা ও উৎফুল্লতা।’ (সুরা দাহর : ৮-১১)।
বর্তমান সময়ে রমজান মাসে ইফতার পার্টি বা ইফতার মাহফিল নামে প্রচলিত যে অনুষ্ঠান দেখা যায়, ইসলামের শুরু যুগে এর কোনো অস্তিত্ব ছিল না। ইসলামে এর কোনো মৌলিক ভিত্তিও নেই। একই রকম সাহরি পার্টির বিষয়টাও। বর্তমানে ইফতার পার্টির সুফলের চেয়ে কুফল বেশি। রমজানে ইফতারের অনেক সওয়াব। কিন্তু ইফতার নিয়ে আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজনকে ইসলাম নিরুৎসাহিত করেছে। এসব আয়োজনে দরিদ্র রোজাদারদের অংশগ্রহণ একেবারেই কম থাকে। বিশ্বের ইসলামি স্কলারগণ ইফতারকে কেন্দ্র করে এ ধরনের প্রবণতার সমালোচনা করছেন। তারা বলছেন, ‘ইসলামে ইফতারের অনেক মর্যাদা। তাই আয়োজনের চেয়ে তাকওয়া অর্জনের দিকেই রোজাদারকে মনোযোগী হতে হবে।’
অল্প ইবাদত করে অধিক সওয়াব অর্জনের এক সুবর্ণ সুযোগের মাস রমজান। এ সুযোগের সদ্ব্যবহার করা আমাদের সবার কর্তব্য। রমজানে রোজাদারকে ইফতার করানো একটি বড় সওয়াবের কাজ। তবে সেই সওয়াব হাসিল করতে গিয়ে আমরা মূলধারা অতিক্রম করে পাপের পথে হাঁটা শুরু করি। যেমনটা পবিত্র রমজান মাসে একজন মোমিন বান্দার থেকে মোটেই কাম্য নয়। অভাবীকে ইফতার করানো পুণ্যের কাজ। সহানুভূতি ও মানবিকতার পরিচয়। বিবেকবান মানুষমাত্রই এটি উপলব্ধি করেন। তবে ইচ্ছা ও সংকল্পের অভাবে এ আমল অনেক সময় অবহেলিত রয়ে যায়। এটি এমন সওয়াবের কাজ, যার মাধ্যমে আল্লাহর দয়া ও করুণা অর্জিত হয়। আল্লাহ বান্দার জন্য রিজিকের দ্বার উন্মুক্ত করে দেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘মানুষের কল্যাণসংশ্লিষ্ট যত কাজ আছে, তার মধ্যে সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম হচ্ছে দরিদ্র ও ক্ষুধার্তকে খাবার দান করা।’ (বোখারি : ১২)।