তাকওয়া অর্জনে মাহে রমজান
আমিন আজহারি
প্রকাশ : ২৭ মার্চ ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
মাহে রমজান ও তাকওয়ার মধ্যে নিবিড় যোগসূত্র রয়েছে। কেন না, রমজান মাসে প্রত্যেক রোজাদার ব্যক্তিকে অবশ্যই তাকওয়ার গুণাবলি অর্জন করতে হয়। বছরের এক মাসব্যাপী সিয়াম পালনের উদ্দেশ্য নিছক উপবাস থাকা নয়; এর মূল উদ্দেশ্য হলো, তাকওয়া অর্জন করা। তাই মুসলমানদের জন্য তাকওয়া অর্জনের লক্ষ্যে মাহে রমজানের পূর্ণাঙ্গ একটি মাস রোজা পালন করা ফরজ করা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মোমিনগণ! তোমাদের জন্য রোজা ফরজ করা হলো, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের আগে যারা ছিল, তাদের প্রতি। যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পার।’ (সুরা বাকারা : ১৮৩)।
তাকওয়ার আভিধানিক অর্থ : ‘তাকওয়া’ আরবি শব্দ। এর মূল অর্থ হলো, শঙ্কিত বিষয় থেকে কোনো জিনিসকে হেফাজত করা বা কষ্টদায়ক ও ক্ষতিকর বিষয় থেকে কোনো জিনিসকে সংরক্ষণ করা। পবিত্র কোরআনে কারিমে ‘তাকওয়া’ শব্দটি পাঁচটি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে-
এক. ভয়-ভীতি : আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মানুষ! তোমরা তোমাদের রবকে ভয় করো।’ (সুরা নিসা : ১)।
দুই. ইবাদত ও আনুগত্য করা : আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা কি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো আনুগত্য করবে?’ (সুরা নাহল : ৫২)।
তিন. গোনাহ বর্জন করা ও তা থেকে বেঁচে থাকা : আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা গৃহসমূহে তার দরোজা দিয়ে প্রবেশ করো এবং আল্লাহকে ভয় করো। (অর্থাৎ আল্লাহর আদেশের অমান্য কোরো না)।’ (সুরা বাকারা : ১৮৯ )
চার. একত্ববাদ প্রতিষ্ঠা করা ও সাক্ষ্য প্রদান করা : আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সঠিক কথা বলো। (অর্থাৎ তোমরা আল্লাহকে এক অদ্বিতীয় সাব্যস্ত করো।’ (সুরা আহজাব : ৭০)।
পাঁচ. ইখলাস ও ইয়াকিন : আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যে আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে সম্মান করে, নিঃসন্দেহে তা অন্তরের তাকওয়ারই বহিঃপ্রকাশ। (অর্থাৎ নিঃসন্দেহে তা অন্তরের বিশ্বাস ও ইখলাসের বহিঃপ্রকাশ।’ (সুরা হজ : ৩২)।
তাকওয়ার পারিভাষিক অর্থ : ওলামায়ে কেরাম তাকওয়ার অনেক সজ্ঞা বর্ণনা করেছেন। তন্মধ্যে কয়েকটি সংজ্ঞা তুলে ধরা হলো-
এক. শায়খ আবদুল আজিজ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে বায (রহ.) বলেন, ‘শরিয়তের পরিভাষায় আল্লাহর ভয়ে তার এবং রাসুল (সা.)-এর ভালোবাসায় ও জান্নাতের আশায় সব ধরনের অন্যায়, অত্যাচার ও পাপাচার বর্জন করে পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহর নির্দেশানুযায়ী আল্লাহর ইবাদত করার নামই তাকওয়া।’ (আত তাকওয়া : ৯)।
দুই. শায়খ আবদুল্লাহ আত তানুসি (রহ.) বলেন, ‘নির্দেশিত বিষয়গুলোকে মানা ও নিষিদ্ধ বিষয়গুলোকে বর্জন করার নামই তাকওয়া।’ (বাসাইরু যায়িত্তামিজ : ৫/২৫৭)।
তিন. ওমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.) বলেন, ‘আল্লাহতায়ালা যা কিছু হারাম করেছেন, সেগুলোকে বর্জন করা এবং যা কিছু ফরজ করেছেন, সেগুলোকে পালন করার নামই তাকওয়া।’ (আত তাকওয়া :১০)।
চার. ইমাম রাগিব আল ইস্পাহানি (রহ.) বলেন, ‘শরিয়তের পরিভাষায় যাবতীয় গোনাহের কাজ থেকে নফসকে হেফাজত করার নামই তাকওয়া।’ (আল মুফরাদাত : ৫৩০)।
পাঁচ. তাবেয়ি তলাক ইবনে হাবিব (রহ.) বলেন, ‘সওয়াবের আশায় দলিলের ভিত্তিতে আল্লাহর ইবাদত করা ও আজাবের ভয়ে দলিলের ভিত্তিতে পাপাচারকে বর্জন করার নামই তাকওয়া।’ (জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম : ১৪৯)।
ছয়. জনৈক বিজ্ঞ আলেম বলেন, ‘আল্লাহকে ভয় করা, কোরআন অনুযায়ী আমল করা, অল্পতে তুষ্ট থাকা ও পরকালের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করার নামই তাকওয়া।’ (আত তাকওয়া : ১১)।
সাত. আল্লামা ফিরোজ আবাদি (রহ.) বলেন, ‘দ্বীনি বিষয়ের জন্য ক্ষতিকর, এমন সব বিষয়কে বর্জন করার নামই তাকওয়া।’ (বাসাইরু যায়িত্তামিজ : ২/২৯৯)।
তাকওয়ার স্থান অন্তর : তাকওয়ার স্থান ও অবস্থান হলো অন্তর। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে স্পষ্টভাবে তা বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ অন্তরের বিষয়ে বিশেষ অবগত।’ (সুরা মায়িদা : ৭)। রাসুল (সা.) বলেন, ‘মুসলমান পরস্পর ভাই ভাই। সে তার ওপর জুলুম করে না। তাকে সঙ্গীহীন ও সহায়হীনভাবে ছেড়ে দেয় না। সে তার কাছে মিথ্যা বলে না ও তাকে অপমান করে না।’ এরপর তিনি নিজের বুকের দিকে ইশারা করে বলেন, তাকওয়া হচ্ছে এখানে। (মুসলিম : ২৫৬৪)।
ইবাদতের মূল উদ্দেশ্য অন্তরে তাকওয়া সৃষ্টি করা : ইবাদত-বন্দেগির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, অন্তরে তাকওয়া সৃষ্টি করা। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আল্লাহর কাছে এগুলোর রক্ত-গোশত পৌঁছে না, বরং তার কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া।’ (সুরা হজ : ৩৭)। আল্লাহতায়ালা আরো বলেন, ‘যে আল্লাহর নিদর্শনসমূহের সম্মান করে, নিশ্চয়ই তা অন্তরের তাকওয়ারই বহিঃপ্রকাশ।’ (সুরা হজ : ৩২)। রাসুল (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের শরীর ও বাহ্যিক আকৃতির প্রতি দৃষ্টিপাত করেন না; বরং তিনি তোমাদের অন্তরের প্রতি দৃষ্টি দেন।’ এরপর তিনি তার আঙুল দ্বারা নিজের বুকের দিকে ইশারা করেন।’ (মুসলিম : ৬৩১০)।
মুত্তাকিদের পরিচয় : পবিত্র কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালা মুত্তাকিদের পরিচয় তুলে ধরেছেন। কোরআনে কারিমের বিভিন্ন আয়াতে কিছু আমলের বর্ণনা করা হয়েছে। যারা এ আমলগুলো করবে, তারাই প্রকৃত অর্থে মুত্তাকি। আমলগুলো হলো-
এক. আকিদা ও বিশ্বাস : আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যে ঈমান আনে আল্লাহ, শেষ দিবস, ফেরেশতাগণ, কিতাব ও নবীগণের প্রতি।’ (সুরা বাকারা : ১৭৭)।
দুই. বাহ্যিক আমলসমূহ : যেমন- নিকটাত্মীয়দের, এতিমদের, অসহায়, মুসাফির ও প্রার্থনাকারীকে সম্পদ প্রদান করা; নামাজ কায়েম করা ও জাকাত প্রদান করা ইত্যাদি। যেমনটি সুরা বাকারার ১৭৭ নং আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে।
তিন. উত্তম চরিত্র : যেমন- ওয়াদা পূর্ণ করা, কষ্ট-দুর্দশা ও যুদ্ধের সময় ধৈর্য ধারণ করা, রাগ নিয়ন্ত্রণ করা এবং মানুষকে ক্ষমা করে দেওয়া। যেমনটি সুরা বাকারার ১৭৭ নং এবং সুরা আলে ইমরানের ১৩৪-১৩৫ নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে।
চার. মুত্তাকিরা যখন কোনো মন্দ কাজ করে ফেলে কিংবা নিজেদের প্রতি জুলুম করে বসে, তখন আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। যেমনটি সুরা আলে ইমরানের ১৩৫ নং আয়াতে বর্র্ণিত আছে।
পাঁচ. শায়খ কাফায়ি (রহ.) বলেন, ‘শরিয়তের পরিভাষায় যে ব্যক্তি পরকালের জন্য ক্ষতিকারক বিষয় থেকে নিজেকে হেফাজত করে, তাকে মুত্তাকি বলে। (আল কুল্লিয়াত : ৩৮)।
ছয়. আল্লামা ফিরোজ আবাদি (রহ.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি পাপাচার ও তার মধ্যে গোনাহ বর্জন করার দৃঢ় সংকল্প ও অন্তরকে তার প্রতি উদ্বুদ্ধ করার বিষয়টিকে রক্ষণশীল হিসেবে ধার করে, যা পাপাচার ও তার মধ্যে বাধা সৃষ্টি করে, তাকে মুত্তাকি বলে।’ (বাসাইরু যায়িত্তামিজ : ২/৩০০)।
পরকালে তাকওয়ার প্রয়োজনীয়তা : আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে দুনিয়াতে সফরের জন্য পাথেয় গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। বলেছেন, ‘পরকালের সর্বোত্তম পাথেয় হলো, তাকওয়া। এরশাদ হচ্ছে, ‘তোমরা পাথেয় গ্রহণ করো। নিশ্চয়ই উত্তম পাথেয় তাকওয়া।’ (সুরা বাকারা : ১৯৭)।
মুত্তাকিদের জন্য সুসংবাদ : আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমে মুত্তাকিদেরকে অনেক সুসংবাদ দিয়েছেন। আল্লামা ফিরোজ আবাদি (রহ.) প্রায় ২৬টির মতো সুসংবাদ উল্লেখ করেছেন। তন্মধ্যে কয়েকটি তুলে ধরা হলো-
এক. সম্মানের সুসংবাদ : আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা ঈমান আনে ও তাকওয়া অবলম্বন করে, তাদের জন্যই সুসংবাদ ইহ-পরকালীন জীবনে।’ (সুরা ইউনুস : ৬৩-৬৪)।
দুই. সাহায্য ও সহযোগিতার সুসংবাদ : আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা তাকওয়া অবলম্বন করে, আল্লাহ তাদের সঙ্গে আছেন।’ (সুরা নাহল : ১২৮)।
তিন. জ্ঞান-প্রজ্ঞার সুসংবাদ : আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদরগণ! যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, তাহলে তিনি তোমাদেরকে ফোরকান তথা ন্যায়-অন্যায় পার্থক্য করার শক্তি দেবেন।’ (সুরা আনফাল : ২৯)।
চার. পাপ মোচন ও মহাপুরস্কারের সুসংবাদ : আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আল্লাহকে যে ভয় করবে, তিনি তার পাপরাশি মোচন করবেন এবং তাকে দেবেন মহাপুরস্কার।’ (সুরা তালাক : ৫)।
পাঁচ. মাগফিরাতের সুসংবাদ : আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা আনফাল : ৬৯)।
ছয়. কাজ সহজ হওয়ার সুসংবাদ : আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য তার কাজকে সহজ করে দেন।’ (সুরা তালাক : ৪)।
সাত. দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির সুসংবাদ : আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরি করে দেন।’ (সুরা তালাক : ২)।
আট. শাস্তি থেকে মুক্তির সুসংবাদ : আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘মুত্তাকিদেরকে আমি রক্ষা করব।’ (সুরা মারইয়াম : ৭২)।
নয়. উদ্দেশ্য সফলের সুসংবাদ : আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই মুত্তাকিদের জন্য রয়েছে সফলতা।’ (সুরা নাবা : ৩১)।
দশ. মসিবত থেকে নিরাপদের সুসংবাদ : আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই মুত্তাকিরা থাকবে নিরাপদ স্থানে।’ (সুরা দুখান : ৫১, বাসাইরু যায়িত্তামিজ : ২/৩০১)।
তাকওয়া অর্জনের উপায় : কোরআন-সুন্নাহে তাকওয়া অর্জনের অনেক উপায় বর্ণনা করা হয়েছে; তন্মধ্যে কয়েকটি উপায় উল্লেখ করা হলো-
এক. আল্লাহতায়ালার যথাযথ পরিচয় লাভ করা : কোনো মুসলমান যদি পবিত্র কোরআনকে ভালোভাবে বুঝতে পারে, তাহলে পবিত্র কোরআন তার অন্তরে তাকওয়া সৃষ্টি করবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি এ কোরআনে মানুষের জন্য সব দৃষ্টান্তই বর্ণনা করেছি। যাতে তারা শিক্ষাগ্রহণ করে বক্রতামুক্ত আরবি কোরআন। যাতে তারা তাকওয়া অবলম্বন করে।’ (সুরা যুমার : ২৭-২৮)। আল্লাহতায়ালা যদি কোরআন নাজিল না করতেন, তাহলে আমরা জানতে পারতাম না, কিভাবে আমরা তাকওয়া অবলম্বন করব। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা সিয়ামের বিধিবিধান বর্ণনা করার পর বলেন, ‘এভাবেই আল্লাহ তাঁর আয়াতসমূহ মানুষের জন্য বিস্তারিত বর্ণনা করেন। যাতে তারা তাকওয়া অবলম্বন করে।’ (সুরা বাকারা : ১৮৭)। সুতরাং আল্লাহ যদি বর্ণনা না করতেন, তাহলে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মানুষের জন্য তাকওয়া অবলম্বন করা সম্ভব হতো না।
আল্লাহতায়ালার পরিচয় লাভ করার অনন্য এক মাধ্যম হলো- পবিত্র কোরআন। কোনো মানুষ যখন পবিত্র কোরআন নিয়ে অভিনিবেশসহ চিন্তা করে, তখন আল্লাহতায়ালা তাঁর শান-শওকত, মহত্ব, গুণবাচক নামসমূহ ও গুণাবলির মাধ্যমে তার সামনে প্রকাশ হন। ইমাম ইবনে কাইয়ুম (রহ.) বলেন, ‘কোরআন আল্লাহর কালাম। আর আল্লাহ তাতে তার গুণাবলির মাধ্যমে বান্দার সামনে আবির্ভাব হন।’ (ফাওয়াইদ : ৮০)।
দুই. ইখলাসের সঙ্গে আল্লাহর ইবাদত করা : আল্লাহতায়ালার ইবাদতের মাধ্যমে অন্তরে তাকওয়া সৃষ্টি হয়, চাই সেটা ফরজ ইবাদত হোক কিংবা নফল। এরশাদ হচ্ছে, ‘হে মানুষ! তোমরা তোমাদের রবের ইবাদত করো। যিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদের এবং তোমাদের আগে যারা ছিল, তাদের। যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করো। (সুরা বাকারা : ২১)। যেসব ইবাদতের মাধ্যমে অন্তরে তাকওয়া সৃষ্টি হয়, তন্মধ্যে একটি ইবাদত হলো ‘সিয়াম’। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মোমিনরা! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করো।’ (সুরা বাকারা : ১৮৩)।
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যা (রহ.) বলেন, ‘আল্লাহতায়ালা তাকওয়া অর্জনের উদ্দেশ্যে সিয়াম পালনের আদেশ করেছেন।’ রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি অন্যায় কথন (গিবত, মিথ্যা, গালিগালাজ, তোহমত, লানত ইত্যাদি)-ও তৎবিষয়ে আমল পরিত্যাগ না করে, তার পানাহার ত্যাগে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ : ১৬৮৯)। সুতরাং যদি তাকওয়া অর্জন না হয়, তাহলে সিয়ামের উদ্দেশ্য আদায় হবে না। ফলে সিয়ামের সওয়াব কম হবে। (আল ফাতওয়া আল মিসরিয়্যা : ২৮৯]
তিন. আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করা : আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করার মাধ্যমে অন্তরে তাকওয়া সৃষ্টি হয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই রাত ও দিবসের বিবর্তন এবং আসমানসমূহ ও জমিনে যা আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন, তাতে বহু নিদর্শন রয়েছে এমন কওমের জন্য, যারা তাকওয়া অবলম্বন করে।’ (সুরা ইউনুস : ৬)।
চার. পরকাল ও তার ভয়াবহতা সম্পর্কৃত আয়াত ও হাদিস পাঠ করা : কবর ও তার শাস্তি এবং পরকাল ও তার ভয়াবহতা সম্পর্কৃত কোরআনের আয়াত ও হাদিসগুলো বেশি বেশি অধ্যয়ন করার মাধ্যমে অন্তরে তাকওয়া সৃষ্টি হয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তাদের জন্য তাদের ওপর দিকে থাকবে আগুনের আচ্ছাদন। আর তাদের নিচের দিকেও থাকবে (আগুনের) আচ্ছাদন। এর দ্বারা আল্লাহ তার বান্দাদের ভয় দেখান। আেমার বান্দারা! তোমরা আমাকে ভয় করো।’ (সুরা যুমার : ১৬)।
লেখক : শিক্ষার্থী, আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়, কায়রো, মিশর