চারপাশের পরিবেশের সমস্যা শুধু প্রকৃতির উৎসগুলোর দূষণ ও তার থেকে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা প্রাকৃতিক সম্পদ কাজে লাগানোর ক্ষেত্রেও সমস্যার সৃষ্টি করেছে। বিশুদ্ধ পানি দূষণের শিকার হচ্ছে, কিন্তু পৃথিবীর অধিকাংশ অঞ্চলে বিশুদ্ধ পানিকে সঠিক পন্থায় কাজে লাগানো হচ্ছে না। আমরা দেখছি, লাখ লাখ টন বিশুদ্ধ পানি সমুদ্রে গিয়ে নষ্ট হচ্ছে। যদিও মানুষ এসব অঞ্চলে পানির অভাবের সঙ্গে বসবাস করছে এবং তাদের বিশুদ্ধ পানির তীব্র প্রয়োজন রয়েছে। নির্মাণশিল্পের সম্প্রসারণের চাপে অত্যন্ত দ্রুত গতিতে উর্বর ভূমি হ্রাস পাচ্ছে। অথচ বিশ্বের অধিকাংশ দেশে উর্বর ভূমিকেও উপযুক্ত বৈজ্ঞানিক পন্থায় কাজে লাগানো হচ্ছে না। কৃষিকাজ চলছে প্রাচীন ও আদিম পদ্ধতি ব্যবহার করে। চাষ ও সেচ ব্যবস্থার উন্নতি, বিভিন্ন ধরনের বীজের উন্নতি, মাটির ওপর চাপ এড়ানোর জন্য কৃষিচক্রের ব্যবস্থাপনা, জৈব সার ও সহায়ক উপাদান দিয়ে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি- ইত্যাদি ক্ষেত্রে যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধিত হয়েছে, সে সম্পর্কে এসব দেশ উদাসীন। সৌরশক্তি ও বায়ুশক্তির মতো বিশুদ্ধ প্রাকৃতিক শক্তিকে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে বিশ্ব এখনো ধীরগতিতে এগুচ্ছে। বিশ্ব নির্ভর করছে যে কয় ধরনের শক্তির ওপর, প্রকৃতির ওপর তার ক্ষতিকর প্রভাব প্রমাণিত। শুধু তা-ই নয়, এগুলো প্রাকৃতিক সম্পদ কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি করছে এবং মানুষের জীবনে ক্রমাগত ক্ষতি বৃদ্ধি করছে।
নবীজীবন প্রকৃতির অবদান ও শিক্ষায় পূর্ণ ছিল : এসব সমস্যার ক্ষেত্রে ইসলাম অলসতা অবলম্বন করে দূরে থাকেনি। কারণ, এ ঐশী দ্বীনকে আল্লাহতায়ালা বিশ্বজগতের জন্য মনোনীত করেছেন। এ দ্বীনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, সামগ্রিকতা; এ পৃথিবীতে মানবজীবনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার সক্ষমতা। এ দ্বীন বাস্তবিক অর্থে একজন মুসলমানের সমগ্র জীবনকে অন্তর্ভুক্ত করে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘বল, আমার সালাত, আমার ইবাদত, আমার জীবন ও আমার মরণ জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর উদ্দেশ্যে। তার কোনো শরিক নেই। এর জন্য আদিষ্ট হয়েছি এবং আমিই প্রথম মুসলিম।’ (সুরা আনআম : ১৬২-১৬৩)। এ পূর্ণাঙ্গ দ্বীনের দ্বারা আল্লাহতায়ালা নবুয়তের সমাপ্তি ঘটিয়েছেন। তার রাসুল মুহাম্মদ (সা.)-এর দ্বারা রাসুলদের পরিসমাপ্তি ঘটিয়েছেন। এ দ্বীনের ব্যাপারে তিনি বলেছেন, ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করলাম। তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম। ইসলামকে তোমাদের দ্বীন মনোনীত করলাম।’ (সুরা মায়িদা : ৩)। নবীজি (সা.)-এর জীবন ছিল এ দ্বীনের সামগ্রিকতা ও পূর্ণতার বাস্তবিক প্রতিফলন। তার জীবন রাষ্ট্রনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতির পাশাপাশি চারপাশের প্রকৃতির প্রতি গুরুত্বের ক্ষেত্রেও অবদান, উপদেশ ও শিক্ষায় পরিপূর্ণ ছিল।
সামগ্রিক ঐশী মানহাজ এখন অবরুদ্ধ : ইসলাম তার সামগ্রিকতা ও পূর্ণাঙ্গতা সত্ত্বেও এখন নানা রকম হিংস্র আক্রমণের শিকার হচ্ছে। ইসলামের সঙ্গে সহিংসতা, সন্ত্রাস, জুলুম, নিষ্ঠুরতা, পশ্চাদপদতা ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য জুড়ে দেয়া হয়েছে। পৃথিবীর পরিবেশগত বিপর্যয়ে যদিও মুসলমানদের হাত নেই, যদিও বৈশ্বিক প্রভাবে তাদের কোনো ক্ষমতা নেই, শক্তি নেই, তারপরও ইসলামের ওপর আক্রমণ অব্যাহত আছে; বরং এ আক্রমণের হিংস্রতা ও নৃশংসতা দিন দিন বেড়েই চলছে। মানবতার যাবতীয় সমস্যার সমাধানে সক্ষম পূর্ণাঙ্গ ও সামগ্রিক ঐশী মানহাজ এখন অবরুদ্ধ, তাকে অবদান রাখার সুযোগই দেয়া হচ্ছে না। তারা যদি পারত, তবে এ মানহাজের অস্তিত্বও টিকে থাকতে দিত না। আমাদের রব আল্লাহতায়ালা যেমন বলেছেন, ‘তারা সর্বদা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকবে, যে পর্যন্ত তোমাদের তোমাদের দ্বীন থেকে ফিরিয়ে না দেয়, যদি তারা সক্ষম হয়।’ (সুরা বাকারা : ২১৭)।
অনুবাদ : আবদুস সাত্তার আইনি