পারিবারিক বিপর্যয়, মানসিক অশান্তি, সন্ত্রাস, নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট, রাজনৈতিক অস্থিরতা, সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা ও মূল্যবোধের অবক্ষয় ইত্যাদির সঙ্গে আত্মহত্যার মতো ধ্বংসাত্মক ঘটনা জড়িত। আত্মহত্যার পেছনে কাজ করে প্রচণ্ড মনস্তাত্ত্বিক চাপ। ফলে ভারসাম্য হারিয়ে তা সহ্য করতে না পেরেই আত্মহননের মধ্যদিয়ে দুর্বল চিত্তের ব্যক্তিরা মুক্তি খোঁজে। ইসলামে আত্মহত্যা মহাপাপ ও অত্যন্ত ঘৃণ্য কাজ। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা নিজেদের হত্যা কোরো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু। যে কেউ সীমালঙ্ঘন করে অন্যায়ভাবে তা (আত্মহত্যা) করবে, তাকে আগুনে দগ্ধ করব। এটা আল্লাহর পক্ষে সহজ।’ (সুরা নিসা : ২৯-৩০)।
আত্মহত্যার পরিণাম ভয়াবহ : একবার রাসুল (সা.) বললেন, তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের মধ্যে এক ব্যক্তি ছিল, যে আহত হয়ে ছটফট করত। সেই অবস্থায় সে ছুরি নিয়ে নিজেই নিজের হাত কাটল ও ব্যাপক রক্তপাত ঘটাল। এতে তার মৃত্যু হলো। আল্লাহ তার সম্পর্কে বললেন, ‘আমার এ বান্দা নিজের ব্যাপারে খুব তাড়াহুড়া করে ফেলেছে। এ কারণে আমি তার প্রতি জান্নাত হারাম করে দিয়েছি।’ (বোখারি : ৩২৭৬)। আত্মহত্যার কুফলের ব্যাপারে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি পাহাড় থেকে লাফ দিয়ে নিজেকে হত্যা করবে, সে স্থায়ীভাবে জাহান্নামে লাফ দিতে থাকবে। আর যে ব্যক্তি বিষপান করে আত্মহত্যা করবে, তার বিষ তার হাতে থাকবে। জাহান্নামে সে স্থায়ীভাবে তা পান করতে থাকবে। আর যে ব্যক্তি নিজেকে ছুরির আঘাতে হত্যা করবে, জাহান্নামে সেই ছুরি তার হাতে থাকবে। তা দিয়ে সে তার পেটে আঘাত করতে থাকবে। তাতে সে স্থায়ীভাবে থাকবে।’ (বোখারি : ৫৭৭৮, মুসলিম : ১৭৫)। রাসুল (সা.) আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইহকালে কোনো কিছু দ্বারা নিজেকে হত্যা করবে, তা দ্বারা পরকালে তাকে শাস্তি প্রদান করা হবে।’ (বোখারি : ৫৭০০, মুসলিম : ১০৯)।
তাওয়াক্কুল মোমিনের গুণ : ডিপ্রেশন, মানসিক অশান্তি ও পারিবারিক কলহে আল্লাহর ওপর ভরসা করা মোমিনের গুণ। আত্মহত্যার পরিবর্তে যেকোনো পরিস্থিতিতে আল্লাহর দয়া-অনুগ্রহ কামনা করা প্রকৃত ঈমানদারের বৈশিষ্ট্য। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা পথভ্রষ্ট, তারা ছাড়া আর কে তার রবের অনুগ্রহ হতে নিরাশ হয়?’ (সুরা হিজর : ৫৬)। আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না।’(সুরা যুমার : ৫৩)। বিপদাপদে সবক্ষেত্রে আল্লাহর রহমতই একমাত্র ভরসা। পৃথিবী ক্ষণস্থায়ী। কোনো সংকটই স্থায়ী নয়। এরশাদ হচ্ছে, ‘কষ্টের পরেই সুখ আসে।’ (সুরা ইনশিরাহ : ৫)। অন্য আয়াতে এরশাদ হচ্ছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে, তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।’ (সুরা তালাক : ৩)।
আত্মহত্যা প্রতিকারের উপায় : ইসলাম মানুষকে মৃত্যু কামনা করতে নিষেধ করেছে। আর সেই মানুষ নিজের ইচ্ছায় নিজের জীবনকে বিসর্জন দেবে, তা কখনও হতে পারে না।
রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যেন দুঃখ-কষ্টে পড়লে মৃত্যু কামনা না করে। যদি কিছু করতেই চায়, তাহলে সে যেন বলে, হে আল্লাহ! আমাকে জীবিত রাখো, যতদিন আমার জন্য বেঁচে থাকা কল্যাণকর হয়। আর মৃত্যু দাও, যখন আমার জন্য মরে যাওয়া কল্যাণকর হয়।’ (বোখারি : ৫৬৭১)।