বিনয় ও নিরহঙ্কার : বিনয় মোমিনের শ্রেষ্ঠ গুণ। ছায়াদার ফলদার বৃক্ষ যেমন নিচের দিকে ঝুঁকে থাকে, বিনয়ী মোমিনও অহঙ্কারকে দলিত মথিত করে বিনম্রভরে চলে। ফলে মহান আল্লাহ তার মর্যাদা সমৃদ্ধ করে দেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘রহমানের বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে। তাদের সঙ্গে যখন মূর্খরা কথা বলে, তখন তারা বলে- সালাম।’ (সুরা ফোরকান : ৬১)।
কিয়াম ও সেজদা : প্রকৃত মোমিন ঈমানের ডাকে সাড়া দেয়। তাকওয়ার আলোয় আলোকিত হয়। রবের ভয়ে প্রকম্পিত থাকে। রবের সন্তুষ্টির প্রতি লোভাতুর। রাত জাগে। রুকুণ্ডসেজদায় লুটিয়ে পড়ে। আল্লাহতায়ালা তাদের এ অনুপম বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেছেন, ‘যারা রাতযাপন করে পালনকর্তার উদ্দেশ্যে সেজদাবনত ও দণ্ডায়মান হয়ে।’ (সুরা ফোরকান : ৬৪)।
জাহান্নাম থেকে মুক্তি কামনা : প্রকৃত মোমিন জাহান্নামের ভয় সদা হৃদয়ে জাগরুক রাখে। তা থেকে মুক্তি চায়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা বলে, হে আমার পালনকর্তা! আমাদের কাছ থেকে জাহান্নামের শাস্তি হটিয়ে দাও। নিশ্চয় এর শাস্তি নিশ্চিত বিনাশ। বসবাস ও অবস্থানস্থল হিসেবে তা কতই না নিকৃষ্ট জায়গা।’ (সুরা ফোরকান : ৬৫-৬৬)।
মধ্যমপন্থা অবলম্বন : আল্লাহর প্রিয় কিছু বান্দা আছেন, যারা চলাফেরা-কথাবার্তায়, আচরণ-উচ্চারণে জীবনের সব ক্ষেত্রে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করেন।
দ্বীন পালনের পথে কোনো পরোয়া করেন না। এমনকি খরচের ক্ষেত্রেও হন মিতব্যয়ী। এরাই প্রকৃত আল্লাহর বান্দা। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তারা যখন ব্যয় করে, তখন অযথা ব্যয় করে না; কৃপণতাও করে না এবং তাদের পন্থা হয় এতদুভয়ের মধ্যবর্তী।’ (সুরা ফোরকান : ৬৭)।
শিরক ও অপরাধমুক্ত : আল্লাহর বান্দারা শিরক ও গোনাহ থেকে মুক্ত থাকে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা আল্লাহর সঙ্গে অন্য উপাস্যের ইবাদত করে না, আল্লাহ যার হত্যা অবৈধ করেছেন, সঙ্গত কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। যারা এ কাজ করে, তারা শাস্তির সম্মুখীন হবে। কেয়ামতের দিন তাদের শাস্তি দ্বিগুণ হবে এবং সেখানে লাঞ্ছিত অবস্থায় চিরকাল বসবাস করবে। তবে যারা তওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের গোনাহকে পুণ্য দ্বারা পরিবর্তন করেন। আল্লাহ দয়াময় ক্ষমাশীল।’ (সুরা ফোরকান : ৬৮-৭০)।
মিথ্যা ও অসার কাজ না করা : প্রকৃত মোমিন মিথ্যা ও অসার কাজে লিপ্ত হয় না। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা মিথ্যা কাজে যোগদান করে না এবং যখন অসার ক্রিয়াকর্মের সম্মুখীন হয়, তখন মান রক্ষার্থে ভদ্রভাবে চলে যায়।’ (সুরা ফোরকান : ৭২)।
অন্ধ ও বধিরের আচরণ না করা : আল্লাহর বান্দা হতে হলে অন্ধ ও বধিরের মতো আচরণ করা যাবে না। যেমনটি আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যাদেরকে তাদের পালনকর্তার আয়াতসমূহ বোঝানো হলে তাতে অন্ধ ও বধির সদৃশ আচরণ করে না।’ (সুরা ফোরকান : ৭৩)।
আলোকিত দোয়া পাঠ : আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা বলে- হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের স্ত্রী ও সন্তানদের পক্ষ থেকে আমাদের জন্য চোখের শীতলতা দান কর। আমাদেরকে মুত্তাকিদের জন্য আদর্শস্বরূপ কর।’ (সুরা ফোরকান : ৭৪)।
অভ্যর্থনা ও উত্তম নিবাস : প্রকৃত আল্লাহর বান্দাদেরই পরকালে সম্মানের সঙ্গে অভ্যর্থনা প্রদান করা হবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তাদেরকে তাদের সবরের প্রতিদানে জান্নাতে কক্ষ দেয়া হবে। তাদেরকে সেখানে দোয়া ও সালামসহ অভ্যর্থনা করা হবে।
সেখানে তারা চিরকাল বসবাস করবে। অবস্থানস্থল ও বাসস্থান হিসেবে তা কতই না উত্তম।’ (সুরা ফোরকান : ৭৫-৭৬)।