ঢাকা ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ

সহকারী মুফতি, মারকাজুশ শাইখ আরশাদ আল মাদানি, মানিকনগর, ঢাকা
মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ

প্রশ্ন : কোরবানি কার ওপর ওয়াজিব?

উত্তর : প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, যে ১০ জিলহজ ফজর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে, তার ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। টাকা-পয়সা, সোনা-রুপা, অলঙ্কার, বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজনে আসে না- এমন জমি, প্রয়োজনের অতিরিক্ত বাড়ি, ব্যবসায়িক পণ্য ও অপ্রয়োজনীয় আসবাবপত্র (যেমন- টেলিভিশন, রেডিও, ক্যাসেট, খেলনার সরঞ্জামাদি) কোরবানির নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য। আর নেসাব হলো- সোনার ক্ষেত্রে সাড়ে সাত (৭.৫) ভরি, রুপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) ভরি, টাকা-পয়সা ও অন্যান্য বস্তুর ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মূল্যের সমপরিমাণ হওয়া। আর সোনা বা রুপা কিংবা টাকা-পয়সা- এগুলোর কোনো একটি যদি পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ না থাকে, কিন্তু প্রয়োজন অতিরিক্ত একাধিক বস্তু মিলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমমূল্যের হয়ে যায়, তাহলেও তার ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। (আল মুহিতুল বোরহানি : ৮/৪৫৫, ফতোয়ায়ে তাতারখানিয়া : ১৭/৪০৫, ফতোয়ায়ে শামি : ৫/২২২, ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া : ৫/২৯২)। তবে কোরবানির নেসাব পুরো বছর থাকা জরুরি নয়; বরং কোরবানির তিন দিনের মধ্যে যে কোনো দিন থাকলেই কোরবানি ওয়াজিব হবে। (বাদায়েউস সানায়ে : ৪/১৯৬, রদ্দুল মুহতার : ৬/৩১২)।

প্রশ্ন : সুদণ্ডঘুষ বা হারাম সম্পদে কোরবানি ওয়াজিব হবে?

উত্তর : হারাম সম্পদের ওপর ভিত্তি করে কোরবানি ওয়াজিব হয় না। তাই কোরবানিদাতা হালাল সম্পদ না থাকলে সন্দেহমূলক অর্থ হলেও ধার করে কোরবানি করবে এবং নিজ হালাল অর্থ দিয়ে ঋণ পরিশোধ করবে। (ফতোয়ায়ে শামি : ২/২৫, আপকে মাসাইল আওর উনকা হল : ৬/২৫২)।

প্রশ্ন : সুদভিত্তিক ব্যাংকের সাধারণ কর্মচারীর জন্য নিজ বেতনের টাকায় কোরবানির পশু ক্রয় করা জায়েজ হবে?

উত্তর : সুদভিত্তিক ব্যাংকের সাধারণ কর্মচারী লেভেলের চাকরিজীবীর বেতন হারাম নয়, তবে সন্দেহযুক্ত। তাই সে কারো কাছ থেকে অর্থ ধার নিয়ে কোরবানি করবে। (আপকে মাসাইল আওর উনকা হল : ৬/২৫২)।

প্রশ্ন : নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক কোনো শিশুর ওপর কী কোরবানি ওয়াজিব হবে?

উত্তর : নাবালেগ শিশু-কিশোর, তেমনিভাবে যে সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন নয়, নেসাবের মালিক হলেও তাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব নয়। অবশ্য তার অভিভাবক নিজ সম্পদ দ্বারা তাদের পক্ষ থেকে কোরবানি করলে তা সহিহ হবে। (বাদায়েউস সানায়ে : ৪/১৯৬, রদ্দুল মুহতার : ৬/৩১৬)। তবে নিজ সম্পদ থেকে নাবালেগের নামে কোরবানি দেওয়া অভিভাবকের ওপর ওয়াজিব নয়; বরং মুস্তাহাব। (রদ্দুল মুহতার : ৬/৩১৫, ফতোয়ায়ে কাজিখান : ৩/৩৪৫)।

প্রশ্ন : একান্নভুক্ত পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের ওপর কী কোরবানি ওয়াজিব?

উত্তর : একান্নভুক্ত পরিবারে একাধিক ব্যক্তির ওপর কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার শর্ত পাওয়া গেলে (অর্থাৎ তাদের কাছে নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে) তাদের প্রত্যেকের ওপরই ভিন্ন ভিন্ন কোরবানি ওয়াজিব। পরিবারের যতো সদস্যের ওপর কোরবানি ওয়াজিব, তাদের প্রত্যেককেই একটি করে পশু কোরবানি করতে হবে কিংবা বড় পশুতে পৃথক পৃথক অংশ দিতে হবে। একটি কোরবানি সবার জন্য যথেষ্ট হবে না। (ফতোয়ায়ে শামি : ৫/২২০, ফতোয়ায়ে আলমগিরি : ৫/২৯২)।

প্রশ্ন : ছেলে কোরবানির পশু ক্রয় করে পিতার (নামে) পক্ষ থেকে কোরবানি দিলে পিতার ওয়াজিব কোরবানি আদায় হবে?

উত্তর : ছেলে কোরবানির পশু ক্রয় করে পিতার (নামে) পক্ষ থেকে কোরবানি দিলে পিতার ওয়াজিব কোরবানি আদায় হবে না; বরং পিতার জন্য পৃথকভাবে পশু ক্রয় করে বা ওই পশুতে নিজের মালিকানার অর্থ দিয়ে শরিক হয়ে কোরবানি আদায় করতে হবে। (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া : ৫/৩০২)।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত