ঢাকা ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আশুরার দিনের আমল

মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ
আশুরার দিনের আমল

মহররম মাসের ১০ তারিখকে আশুরা বলা হয়। এ দিনের বিশেষ মর্যাদা ও ফজিলত রয়েছে। ইতিহাসের বহু স্মরণীয় ঘটনা ঘটেছে এ দিনে। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) মদিনায় আগমন করে দেখতে পেলেন, ইহুদিরা আশুরার দিনে রোজা রাখছে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী ব্যাপার? (তোমরা এ দিনে রোজা রাখো কেন?)’ তারা বলল, ‘এ অতি উত্তম দিন। এ দিনে আল্লাহতায়ালা বনি ইসরাইলকে তাদের শত্রুর কবল থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন। ফলে এ দিনে মুসা (আ.) রোজা রেখেছেন।’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘আমি তোমাদের অপেক্ষা মুসা (আ.)-এর অধিক নিকটবর্তী।’ এরপর তিনি এ দিনে রোজা রাখেন এবং রোজা রাখার নির্দেশ দেন। (বোখারি : ২০০৪)।

আশুরায় রোজার প্রচলন : ইসলামপূর্ব যুগ থেকেই মানুষ এ দিনে রোজা রাখত। তাদের জন্য এ দিনের রোজা ফরজ ছিল। ইসলাম আসার পর রমজানের রোজা ফরজ হলে তা সুন্নত হিসেবে গণ্য হয়। হাদিস শরিফে এমনটিই বর্ণিত হয়েছে। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, জাহেলি যুগে আশুরার দিন কোরাইশরা ও নবীজি (সা.) রোজা পালন করতেন। যখন হিজরত করে মদিনায় আগমন করলেন, তখন তিনি নিজেও আশুরার রোজা পালন করতেন এবং অন্যকেও তা পালনের নির্দেশ দিতেন। যখন রমজানের রোজা ফরজ করা হলো, তখন যার ইচ্ছা (আশুরা)-এর রোজা পালন করতেন আর যার ইচ্ছা করতেন না। (বোখারি : ৩৮৩১)। অন্য হাদিসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, তার কাছে আশআস (রা.) আসেন। এ সময় ইবনে মাসউদ (রা.) পানাহার করছিলেন। তখন আশআস (রা.) বললেন, ‘আজ তো আশুরা।’ তিনি বললেন, ‘রমজানের (রোজার বিধান) অবতীর্ণ হওয়ার আগে আশুরার রোজা পালন করা হতো। যখন রমজানের (রোজার বিধান) অবতীর্ণ হলো, তখন তা পরিত্যাগ করা হয়েছে। এসো, তুমিও খাও।’ (বোখারি : ৪৫০৩)। এ হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, আশুরার রোজা আগে ফরজ ছিল; কিন্তু এখন তা সুন্নত বা মুস্তাহাব।

আশুরার রোজার গুরুত্ব : হাদিস শরিফে আশুরার দিন রোজা রাখার বহু ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। এমনকি রমজানের পর এ রোজার ফজিলত বেশি বলা হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘রমজান মাসের পর সর্বোত্তম রোজা হলো মহররম মাসের রোজা (আশুরার রোজা) এবং ফরজ সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হলো রাতের সালাত।’ (সুনানে নাসায়ি : ১৬১৩)। অন্য হাদিসে এসেছে, উবাইদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত; আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-কে যখন আশুরার রোজা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তখন তিনি তাকে বলতে শুনেছেন, নবীজি (সা.) রমজান মাসের ও আশুরার রোজা ছাড়া অন্য কোনো দিনের রোজাকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন বলে জানা নেই। (সুনানে নাসায়ি : ২৩৭০)। বিভিন্ন হাদিসে আশুরার রোজার ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, নবীজি (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর কাছে আশা রাখি, তিনি আশুরার রোজার মাধ্যমে আগের এক বছরের পাপ ক্ষমা করে দেবেন।’ (তিরমিজি : ৭৫২)।

রোজাসংখ্যা ও দিনক্ষণ : আশুরার রোজা দুটি রাখতে হবে। নবীজি (সা.) বলেন, ‘তোমরা আশুরার দিনে রোজা রাখো, তবে এ ক্ষেত্রে ইহুদিদের সঙ্গে মিল না হওয়ার জন্য ১০ তারিখের আগের দিন অথবা পরের দিন আরো একটি রোজা রেখ।’ (মুসনাদে আহমদ : ২১৫৪)। অন্য হাদিস আছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত; রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমি যদি আগামী বছর বেঁচে থাকি, তাহলে ৯ তারিখেও অবশ্যই রোজা রাখব।’ (মুসলিম : ১/৩৫৯)। বাংলাদেশে সোমবার (৮ জুলাই) থেকে মহররম মাস গণনা শুরু হয়েছে। সে হিসেবে আজ বুধবার (১৭ জুলাই) পালিত হবে পবিত্র আশুরা। তাই মহররমের ১০ তারিখ বুধবার (১৭ জুলাই) একটি, আর এর আগে মহররমের ৯ তারিখ মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) অথবা পরের দিন মহররমের ১১ তারিখ বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) আরো একটি রোজা রাখতে হবে।

মহানবী (সা.) ১০ মহররমের সঙ্গে ৯ বা ১১ মহররম মিলিয়ে দুটি রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। ৯ তারিখে রাখতে পারলে ভালো। কারণ, হাদিসে ৯ তারিখের কথা স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) যখন আশুরার রোজা রাখছিলেন এবং অন্যদের রোজা রাখতে বলেছিলেন, তখন সাহাবিরা বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল!

এ দিনকে তো ইহুদি-নাসারারা সম্মান করে?’ নবীজি (সা.) বললেন, ‘ইনশা আল্লাহ, আগামী বছর আমরা নবম তারিখেও রোজা রাখব।’ (মুসলিম : ২৫৫৬)। এজন্য ইবনে আব্বাস (রা.) বলতেন, তোমরা ৯ তারিখ এবং ১০ তারিখ রোজা রাখো এবং ইহুদিদের বিরোধিতা করো। (তিরমিজি : ৭৫৫)।

বিশেষ আমল তওবা : তাওবা-ইসতিগফার যে কোনো সময় গুরুত্বপূর্ণ আমল। তবে কিছু কিছু সময় এমন রয়েছে, যখন তওবার পরিবেশ বেশি অনুকূল হয়। বান্দার সেই প্রত্যাশিত মুহূর্তগুলোর কদর করা চাই। মহররমের এ মাসটি বিশেষ করে ১০ তারিখ এমনই এক মোক্ষম সময়। এ দিনে তওবা কবুল হওয়া, নিরাপত্তা এবং অদৃশ্য সাহায্য লাভ করার কথাও হাদিসে রয়েছে। এজন্য এ সময়ে এমন সব আমলের প্রতি মনোনিবেশ করা উচিত, যাতে আল্লাহর রহমত বান্দার দিকে আরও বেশি ধাবিত হয়। এক সাহাবি নবীজি (সা.)-এর কাছে জিজ্ঞেস করল, ‘হে আল্লাহর রাসুল! রমজানের পর আপনি কোন মাসে রোজা রাখতে বলেন?’ নবীজি (সা.) বললেন, ‘তুমি যদি রমজানের পর রোজা রাখতে চাও, তাহলে মহররমে রোজা রাখো। কেননা, মহররম হচ্ছে আল্লাহর মাস। এ মাসে এমন এক দিন আছে, যেদিন আল্লাহতায়ালা (অতীতে) অনেকের তওবা কবুল করেছেন, ভবিষ্যতেও অনেকের তওবা কবুল করবেন।’ (তিরমিজি : ৭৪১)।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত