ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ

সহকারী মুফতি, শাইখ আরশাদ আল মাদানি, মানিকনগর, ঢাকা
মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ

প্রশ্ন : একদিন ফজর নামাজে প্রথম রাকাতে ইমামের পেছনে দাঁড়িয়ে ঘুমাচ্ছিলাম। ইমাম কখন রুকুণ্ডসেজদা করলেন, টের পাইনি। হঠাৎ চোখ খুলে দেখি, তিনি সেজদা থেকে উঠে দ্বিতীয় রাকাত শুরু করেছেন। তখন আমি তার সঙ্গে দ্বিতীয় রাকাতে শরিক হয়ে নামাজ শেষে ছুটে যাওয়া রাকাতটি আদায় করেছি। আমার ওই নামাজ আদায় হয়েছে নাকি তা পুনরায় পড়তে হবে?

উত্তর : আপনার ওই নামাজ আদায় হয়ে গেছে, তা পুনরায় পড়তে হবে না। তবে তা নিয়মসম্মত হয়নি। কারণ, নামাজের শুরু থেকে উপস্থিত থাকার পর ঘুমের কারণে কিছু অংশ ছুটে গেলে নিয়ম হলো, যে অংশ ছুটে গেছে, তা আগে আদায় করে নেয়া, তারপর ইমামের অনুসরণ করা। (আল মুহিতুল বোরহানি : ২/৩৪৭, বাদায়েউস সানায়ে : ১/৫৬৩, আল বাহরুর রায়েক : ১/৩৫৬)।

প্রশ্ন : এক নারী ব্রেন স্ট্রোক করার পর আর পূর্ণ জ্ঞান ফিরে পাননি। অনেক কিছুই মনে রাখতে পারতেন না। নামাজের সময় হলে কেউ মনে করিয়ে দিলে অজু করে এসে নামাজে দাঁড়াতেন। তবে কয় রাকাত পড়েছেন, সেজদা কয়টি করেছেন, খেয়াল রাখতে পারতেন না। এ অবস্থায় তিন বছর যাওয়ার পর তিনি মারা যান। তার উক্ত দীর্ঘ সময়ের নামাজগুলোর ফিদয়া দিতে হবে কী?

উত্তর : প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী উক্ত নারী যেহেতু পূর্ণ জ্ঞান ফিরে পাননি, বরং একেবারে অস্বাভাবিক ছিলেন, তাই তার ওই সময়ের নামাজের জন্য কিছুই দিতে হবে না। কারণ, এমন অবস্থায় নামাজ ফরজ থাকে না। (তিরমিজি : ১৪২৩, রদ্দুল মুহতার : ২/১০০)।

প্রশ্ন : মাসবুক ব্যক্তি ভুলক্রমে ইমামের সঙ্গে সালাম ফিরিয়ে ফেললে করণীয় কী?

উত্তর : ভুলক্রমে ইমামের সঙ্গে সালাম ফেরানোর কারণে নামাজ ভঙ্গ হবে না। তবে এ অবস্থায় দেখতে হবে, যদি সালাম ফেরানো ইমামের সালামের সঙ্গেই হয়, তাহলে সেজদায়ে সাহু করতে হবে না। আর যদি মাসবুকের সালাম ইমামের সালামের পরে হয়, তাহলে অবশিষ্ট নামাজ শেষে তাকে সেজদায়ে সাহু করে নিতে হবে। (বাদায়েউস সানায়ে : ১/৪২২, ফাতহুল কাদির : ১/৩৩৯, শরহুল মুনইয়াহ : ৪৬৫, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া : ১/৯১, রদ্দুল মুহতার : ১/৫৯৯)।

প্রশ্ন : একবার ট্রেনে করে এক জায়গায় যাচ্ছিলাম। মাঝে ফজরের সময় এক স্টেশনে ট্রেনটি থামে। তাই আমি প্লাটফরমের এক কামরায় ফজরের জামাতে শরিক হই। আমরা যখন বৈঠকে তাশাহুদ পড়ছি, তখন ট্রেন ছাড়ার জন্য সংকেত দেয়া হয়। তাই আমি তাড়াহুড়া করে ইমামের আগেই সালাম ফিরিয়ে ট্রেনে উঠি। ইমামের আগে সালাম ফেরানোর কারণে কি আমার ওই নামাজ নষ্ট হয়ে গেছে? ওই নামাজ কি পুনরায় আদায় করতে হবে?

উত্তর : আপনি যদি তাশাহুদ পড়ার পর সালাম ফিরিয়ে থাকেন, তাহলে আপনি যেহেতু ওজরবশত করেছেন, তাই আপনার নামাজ আদায় হয়ে গেছে। আর যদি তাশাহুদ পড়ার আগে সালাম ফিরিয়ে থাকেন, তাহলে ওই নামাজ আদায় হয়নি। তা পুনরায় আদায় করে নিতে হবে। উল্লেখ্য, মুক্তাদির জন্য নামাজের সালামেও ইমামের অনুসরণ করা ওয়াজিব। বিনা ওজরে ইমামের আগে সালাম ফেরানো মাকরুহে তাহরিমি। বিনা ওজরে এমনটি করলে উক্ত নামাজ পুনরায় আদায় করতে হবে। (হাশিয়াতুত তাহতাবি আলাল মারাকিল ফালাহ : ১৬৯, ফাতাওয়ায়ে খানিয়া : ১/৯৭, ফতোওয়ায়ে তাতারখানিয়া : ২/১৯০, আদ্দুররুল মুখতার : ১/৫২৫)।

প্রশ্ন : দুই সুরার মাঝে একটি মাত্র সুরার ব্যবধান রাখার হুকুম কেমন? যেমন- কেউ প্রথম রাকাতে সুরা লাহাব এবং দ্বিতীয় রাকাতে সুরা ফালাক পড়ল। মাঝখানে মাত্র সুরা ইখলাসের ব্যবধান রাখল। এভাবে কেরাত পড়লে কি নামাজ মাকরুহ হবে?

উত্তর : ফরজ নামাজে প্রথম রাকাতে এক সুরা পড়ে ইচ্ছাকৃত মাঝে একটি ছোট সুরা রেখে দিয়ে দ্বিতীয় রাকাতে পরবর্তী সুরা পড়া অনুত্তম। আর অনিচ্ছাকৃত হলে অনুত্তম হবে না। উল্লেখ্য, এ হুকুম শুধু ফরজের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। নফল নামাজে এমন হলে কোনো অসুবিধা নেই। (খোলাসাতুল ফাতাওয়া : ১/৯৭, ফাতহুল কাদির : ১/২৯৯, আল বাহরুর রায়েক : ২/৩২, ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া : ১/৭৮, আদ্দুররুল মুখতার : ১/৫৪৬-৫৪৭)।

প্রশ্ন : কোনো সময় তাহাজ্জুদের নামাজ এক রাকাত পড়ার পর সুবহে সাদিক হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে করণীয় কী? নামাজ ছেড়ে দেয়া নাকি দ্বিতীয় রাকাত পড়ে দুই রাকাত পূর্ণ করা?

উত্তর : তাহাজ্জুদ পড়ার মতো সময় আছে কি-না, তা নিশ্চিত হওয়ার পরই নামাজ শুরু করা উচিত। কখনো তাহাজ্জুদ শুরু করার পর নামাজ অবস্থাতেই সুবহে সাদিক হয়ে গেলে নামাজ পূর্ণ করে নেবে। তবে এ দু’রাকাতকে ফজরের সুন্নত গণ্য করা যাবে না। ফজরের সুন্নত পৃথকভাবেই আদায় করতে হবে। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া : ১/৫২-৫৩, হাশিয়াতুত তাহতাবি আলাল মারাকিল ফালাহ : ১০১, ফাতহুল কাদির : ১/২০৯, আল বাহরুর রায়েক : ১/২৫৩, রদ্দুল মুহতার : ১/৩৭৪)।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত