প্রকৃতিপ্রধান ভূমির খোঁজ
পৃথিবীর প্রত্যেকটি দেশের নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সেগুলো হতে পারে দেশটির স্থানীয় খাবার, সংস্কৃতি, স্থলভাগের স্থাপত্যকলা, প্রাচীন স্থাপত্যশৈলী, দুর্দান্ত পার্ক, সুন্দর শহর কিংবা কালজয়ী গ্রাম। এ বৈশিষ্ট্যগুলো বিশ্ববাসীর সামনে দেশটির এমন একটি ভাবমূর্তি তৈরি করে, যা দেশটিতে পর্যটকদের আকর্ষণ করে। এমনই প্রকৃতিপ্রধান সুন্দর ১০টি দেশ নিয়ে লিখেছেন- মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ
প্রকাশ : ২১ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
কানাডা : কানাডা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাষ্ট্র। যা উত্তর আমেরিকার উত্তরাঞ্চলের বেশিরভাগ এলাকাজুড়ে অবস্থিত। এ দেশটি প্রশান্ত মহাসাগর থেকে উত্তর দিকে আটলান্টিক ও আর্কটিক মহাসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। এটি এমন একটি দেশ, যেখানে একইসঙ্গে বন্য, শহুরে এবং রোমান্টিক স্থানের দেখা মেলে। বিশ্বখ্যাত নায়াগ্রা জলপ্রপাত যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত। আমেরিকাতে জলপ্রপাতটি পেছন থেকে দেখতে হয়। কানাডাতে সরাসরি সামনে থেকে দেখা যায়। ফলে সম্পূর্ণ জলপ্রপাত ভালোমতো দেখা যায়। এখানে প্রতি বছর প্রায় ৩০ মিলিয়ন মানুষের সমাগম হয়ে থাকে। এ দেশেই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি লেক অবস্থিত। দেশটির কিছু প্রধান শহর যেমন- অটোয়া, মন্ট্রিওল, ভ্যানকুভার এবং টরন্টোসহ বড় বড় শহরগুলোতে বিশ্বের কিছু সেরা স্থাপত্য রয়েছে। পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দেশের তালিকায় কানাডা আছে সবার শীর্ষে।
যুক্তরাষ্ট্র : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যসহ একটি বিশাল দেশ। বিদেশি পর্যটকদের ভ্রমণের হিসেবে এটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। আকর্ষণীয় অবকাঠামো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শহরগুলোর এক অনন্য বৈশিষ্ট্য। গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন এবং ইয়োসেমাইট জাতীয় উদ্যান দেশটি অনন্য জাতীয় উদ্যান; যেগুলো বন্যপ্রাণীর আশ্রয়কেন্দ্র। বেশিরভাগ বিদেশি পর্যটক আমেরিকার শহরগুলো দ্বারা আকৃষ্ট হন। সেজন্যই তারা লস অ্যাঞ্জেলেস, নিউ ইয়র্ক এবং শিকাগোসহ বড় শহরগুলোতে ভ্রমণ করেন।
ভারত : ভারতের মূল ভূখণ্ড হিমালয়ের চূড়া থেকে শুরু করে ভারত মহাসাগরের সৈকত পর্যন্ত বিস্তৃত। দেশটির জাতীয় উদ্যানগুলো বিপণ্ণ রয়েল বেঙ্গল টাইগার, এশিয়ান সিংহ এবং এশিয়ান হাতিসহ বিভিন্ন প্রজাতির বন্য প্রাণী এবং পাখির আবাসস্থল। এ দেশে রয়েছে মরুভূমি, মালভূমি, দীর্ঘ নদী এবং এক বিচিত্র সংস্কৃতি। এগুলোই অনেক দূর-দূরান্ত থেকে ভারতে পর্যটকদের আকর্ষণ করে। প্রকৃতি প্রধান দেশগুলোর তালিকায় ভারতের অবস্থান তৃতীয়।
আয়ারল্যান্ড : উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের দেশ আয়ারল্যান্ড। আয়ারল্যান্ড একটি ছোট্ট দেশ; যার আয়তন মাত্র ৭০ হাজার বর্গকিলোমিটার। দেশটির চারপাশে পানি উথাল-পাথাল করে। সেখানে রয়েছে অসংখ্য পাহাড়-পর্বত, বেশ কয়েকটি নদী এবং অনেক হ্রদ। দক্ষিণ-পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগর; আড়াই হাজার কিলোমিটার অতিক্রম করলেই আমেরিকা। জ্ঞান বা বিদ্যা, নব্য ধ্রুপদী এবং নব্য গোথিক শৈলীতে ১৭, ১৮ এবং ১৯ শতকে নির্মিত মহিমান্বিত বাসগৃহ যেমন- কাসল ওয়ার্ড, কাসলটাউন হাউস, বেনট্রি হাউস পর্যটকদের আগ্রহের কারণ। এ ছাড়া দেশটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এককথায় অসাধারণ। আইরিশ মানুষ কথোপকথন ভালোবাসে এবং অন্যান্য মানুষের প্রতি তাদের প্রকৃত আগ্রহ আছে। এরা খুবই ভদ্র, নম্র ও অতিথিপরায়ণ। সবচেয়ে সুন্দর দেশের তালিকায় আয়ারল্যান্ডের অবস্থান চতুর্থ।
ইতালি : ইতালি দক্ষিণ ইউরোপের একটি দেশ। পৃথিবীর খুব কম দেশই সৌন্দর্যের বিচারে ইতালির সঙ্গে পেরে উঠবে। পশ্চিমা সংস্কৃতি ও সভ্যতার সূতিকাগার বলে পরিচিত গ্রিস এবং ইতালি। নানা ভাস্কর্য আর শৈল্পিক নিদর্শন ছড়িয়ে আছে পুরো ইতালিজুড়ে। ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় আছে এ ইতালিতেই। এ দেশেই রয়েছে ভেনিস, ফ্লোরেন্স এবং রোমের মতো বিখ্যাত সব শহর। বিশ্বের সবচেয়ে ছোট দেশ ভ্যাটিকান সিটি এ ইতালির মধ্যেই অবস্থিত। ইউরোপের সর্বোচ্চ শিখর হোয়াইট মাউনটেন এ দেশেই অবস্থিত। প্রায় ৫ কোটি মানুষ প্রতি বছর ইতালিতে ঘুরতে যান। পর্যটন খাত ইতালি অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রকৃতি প্রধান দেশগুলোর মধ্যে ইতালির অবস্থান পঞ্চমে।
ব্রাজিল : ব্রাজিল বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম এবং দক্ষিণ আমেরিকার সর্ববৃহৎ দেশ। ব্রাজিল শব্দটি শুনলে প্রথমেই মনে আসে ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ফুটবলার হিসেবে স্বীকৃত পেলের কথা। সেই সঙ্গে ভেসে ওঠে চোখ ধাঁধানো নান্দনিক ফুটবল ম্যাচ। এরপর সামনে আসে সবুজ আর হলুদের মিশ্রণে অপূর্ব সুন্দর এক পতাকার রঙ। ব্রাজিলীয় গান ও নাচের একটি ধরণ সাম্বার নামটিও উঠে আসে। এ জানার বাইরেও রয়েছে ব্রাজিলের ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির দীর্ঘ ইতিহাস। ব্রাজিল জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশ বিবেচনায় বিশ্বের অন্যতম প্রধান একটি দেশ। একই সঙ্গে ব্রাজিলের ভূপ্রকৃতি যথেষ্ট বৈচিত্র্যময়। দেশটিতে পাহাড়, পর্বত, সমভূমি, উচ্চভূমি, চারণভূমি ইত্যাদি বৈচিত্র্যময় ভূ-ভাগ বিদ্যমান। এ দেশে ঘন ও বেশ জটিল নদীব্যবস্থা বিদ্যমান; যা বিশ্বের অন্যতম জটিল নদীব্যবস্থা। ব্রাজিলের উল্লেখযোগ্য নদীর মধ্যে রয়েছে- আমাজন; যা বিশ্বের দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদী ও নিষ্কাশিত পানির পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে বিশ্বের সবচেয়ে বড় নদী। এ সবই ব্রাজিলকে বিশ্বের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত করেছে। তালিকায় ব্রাজিলের অবস্থান ষষ্ঠ নম্বরে।
চীন : চীন এশিয়া মহাদেশের পূর্ব অঞ্চলে এবং প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম দেশ। চীন একটি পর্বতময় দেশ। এর মোট আয়তনের দুই-তৃতীয়াংশ পর্বত, ছোট পাহাড় এবং মালভূমি নিয়ে গঠিত। দেশটি বিলিঙ্গুয়ান প্রাকৃতিক অঞ্চল থেকে হলুদ এবং ইয়াংজি নদী পর্যন্ত বিচিত্র প্রাকৃতিক পরিবেশে সমৃদ্ধ। একই সঙ্গে দেশটির সাম্প্রতিক প্রযুক্তিগত অগ্রগতি অপূর্ব স্থাপত্য নকশার জন্ম দিয়েছে। লম্বা লম্বা শৈল্পিক বিল্ডিং চীনের শহরগুলোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। চীনে অবস্থিত উল্লেখযোগ্য পর্বতমালার মধ্যে আছে- মাউন্ট হুয়াংশান, মাউন্ট তাইশান, মাউন্টেন হেনশান এবং মাউন্ট এভারেস্ট। আর চীনে ভ্রমণের কথা উঠলেই আমাদের চোখের সামনে সবার আগে ভেসে ওঠে চীনের মহাপ্রাচীর ‘দ্য গ্রেট ওয়াল অফ চায়না’। এটি বিশ্বের দীর্ঘতম প্রাচীর এবং চীনের প্রতীক। প্রাচীরটি চীনের পূর্ব উপকূল থেকে পশ্চিম সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত। যার দৈর্ঘ্য প্রায় পাঁচহাজার কিলোমিটার। সুন্দর দেশের তালিকায় চীনের অবস্থান সাত নম্বরে।
দক্ষিণ আফ্রিকা : দক্ষিণ আফ্রিকা গোটা আফ্রিকা মহাদেশের সেরা সাফারি গন্তব্যস্থলের একটি। ক্রুগার ন্যাশনাল পার্কসহ দেশটির বেশিরভাগ জাতীয় উদ্যানে ‘বিগ ৫’-এর দেখা মেলে। পুরো আফ্রিকা মহাদেশের মধ্যে একমাত্র বোল্ডারস বিচেই পেঙ্গুইনের দেখা মেলে। যা এ দক্ষিণ আফ্রিকাতেই অবস্থিত। দেশটির তিনটি রাজধানীর একটি কেপ টাউনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কথা না বললে দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্রমণ স্থানগুলোর কথা অধরাই থেকে যায়। এখানে কেপ পয়েন্ট, টেবিল পর্বতসহ আরও অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এ ছাড়া দেশটির অনেক প্রধান বন্দর এখানে অবস্থান করছে। ভৌগোলিক বৈচিত্র্যের দিক থেকে এটিকে বিশ্বের সুন্দরতম শহরগুলোর মধ্যে ধরা হয়ে থাকে। একই সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হলো এটি। সুন্দর দেশের তালিকায় দক্ষিণ আফ্রিকার স্থান আট নম্বরে।
নিউজিল্যান্ড : নিউজিল্যান্ড ওশেনিয়া মহাদেশের একটি দ্বীপ রাষ্ট্র; যা অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত। সমগ্র বিশ্বের কাছেই নিউজিল্যান্ড একটি শান্তিপ্রিয় দেশ বা স্বর্গীয় রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত। মূলত নিউজিল্যান্ড অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত একটি দ্বীপরাষ্ট্র। এ দেশের পরিবেশ, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং প্রাণীকুল বৈচিত্র্যময় ও প্রাচুর্যপূর্ণ। মাওরি ভিলেজ, কাঠের শিল্পকলার তৈরি নানা জিনিসপত্র দেখতে পাওয়া যায় এখানে। কাঠের তৈরি হরেক রকম তৈজসপত্রের ভান্ডার পাওয়া যায়; যা দেখতে অনেকটা আদিকালের ব্যবহৃত জিনিসের মতো। সবমিলিয়ে যে কোনো ভ্রমণপিপাসু মানুষের কাছেই নিউজিল্যান্ড একটি স্বপ্নের নাম। আর সবচেয়ে সুন্দর দেশের তালিকায় নিউজিল্যান্ড আছে নয় নম্বরে।
সুইজারল্যান্ড : পৃথিবীর বুকে এক টুকরো স্বর্গ বলা হয় যে দেশটিকে, তার নাম সুইজারল্যান্ড। দেশটি বিশ্বজুড়ে ভ্রামণপিপাসু মানুষের কাছে অন্যতম কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য। তবে শুধু বেড়ানোর জন্যই নয়, সব বিচারেই দেশ হিসেবে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা পেয়েছে ইউরোপের ছোট্ট এ দেশটি। আয়তনে ছোট হলেও দেশটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। ইউরোপের পাহাড়ি দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম সুইজারল্যান্ড। এর আয়তনের ৭০ শতাংশ ঘিরে রয়েছে আল্পস পর্বতমালা। সুইজারল্যান্ডের সবচেয়ে উঁচু পর্বতের নাম মন্টি রোজা। পর্যটকরা সুইজারল্যান্ডের প্রকৃতি আর প্রাকৃতিক ভূ-দৃশ্যের জন্য আকৃষ্ট হয়। এ ছাড়া স্কিইং আর পর্বত ভ্রমণের জন্য এখানে অনেক পর্যটক আসে। বিশ্বের অন্যতম অর্থসংস্থান হওয়ায় এখানে বহু ভ্রমণকারী ব্যবসার জন্যও আসে। সুইজারল্যান্ডে বার্নের পুরাতন শহর, সাধু গলের মঠ এবং মন্টি স্যান জিওরজিওসহ ১১টি ইউনেস্কো ঐতিহ্যবাহী স্থান রয়েছে। সবচেয়ে সুন্দর দেশের তালিকায় সুইজারল্যান্ড আছে দশ নম্বরে।