বিষাক্ত পাতাবাহার
নান্দনিক রুচির প্রকাশ ঘটাতে অনেকে ঘরের কোণে, ব্যালকনিতে, বারান্দায়, এমনকি ড্রয়িংরুমে পাতাবাহার ও মানিপ্ল্যান্ট গাছ রাখেন। কিন্তু উদ্ভিদবিদরা জানিয়েছেন, এসব পাতাবাহারের মধ্যে এমন অনেক গাছ আছে, যা বেশ বিষাক্ত। এ বিষাক্ত উদ্ভিদগুলোর সংস্পর্শে থাকা শিশুসহ বড়দের জন্য ক্ষতিকর। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারে। সেসব গাছ নিয়ে লিখেছেন- তাবাসসুম মাহমুদ
প্রকাশ : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
ফিলোডেনড্রন : ফিলোডেনড্রন নামে দক্ষিণ আমেরিকার এ পাতাবাহারটির নাম অচেনা হলেও অনেকের এ গাছটি খুব চেনা। অনেকের ঘরের ব্যালকনি অথবা পড়ার টেবিলেও সাজানো থাকে এ লতানো গাছটি। সাধারণভাবে মানিপ্ল্যান্ট বা পাতাবাহার হিসেবে পরিচিত আপাত নিরীহ এ গাছটির সংস্পর্শে নানা স্বাস্থ্য জটিলতা তৈরি হতে পারে। সুইডেনের ইনস্টিটিউট অব হেলথের অণুজীব রোগতত্ত্ব বিভাগের পরিচালক ফিলিপ রস জানান, বিরল এক ব্যাকটেরিয়ার কারণে এ গাছের সংস্পর্শে থাকলে ত্বকে জ্বালাপোড়া হতে পারে। এছাড়া গলা ও মাথাব্যথা এবং শ্বাসতন্ত্রে সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়া ঝোপালো এ গাছটি বাসায় বেশি পরিমাণে থাকলে এর প্রভাবে স্নায়ুতন্ত্রে সমস্যাসহ অনিদ্রা দেখা দিতে পারে। ফিলিপ রস আরো জানিয়েছেন, এ ক্ষতিকর গাছটির প্রভাব খুব তাড়াতাড়ি বোঝার সাধ্য নেই। কিন্তু ধীরে ধীরে গাছটি মানুষ ও পোষা প্রাণীকে আক্রান্ত করে। তাই শিশু, বৃদ্ধ ও পোষা প্রাণীদের এ গাছ থেকে দূরে রাখার পরামর্শ দেন এই অণুজীব রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ।
তীরমাথা গাছ : উজ্জ্বল সবুজ রং আর হৃদয় আকৃতির পাতার জন্য তীরমাথা গাছ (অ্যারোহেড) প্রকৃতিপ্রেমীদের খুব পছন্দ। এ গাছটির ক্ষতিকারক দিক অনেকটা ফিলোডেনড্রন লতার মতোই। অল্প বয়সি অ্যারোহেড গাছের পাতা থাকে গাঢ় সবুজ এবং হৃদয় আকৃতির। আর বয়স্ক হতে হতে গাছের পাতা কালচে সবুজ এবং তীরের মাথার আকার ধারণ করে। এ গাছের সংস্পর্শে থাকলে শিশু ও পোষা প্রাণীর গলা ও মাথাব্যথা এবং শ্বাসতন্ত্রে সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়া শিশু ও পোষা প্রাণীর পেটে ব্যথা ও বমিভাব দেখা দিতে পারে। এছাড়া বৃদ্ধরাও এ গাছের সংস্পর্শে থাকলে সরাসরি আক্রান্ত হতে পারেন।
ডায়ফেনবাসিয়া : অফিস-আদালতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বারান্দা বা করিডোরে, এমনকি ফ্ল্যাটের বারান্দায় এ গাছটি হামেশা দেখা যায়। আমাদের পরিচিত ঘরের সৌন্দর্যবর্ধক এ গাছটির ভয়াবহতা অনেকেই কল্পনা করতে পারবেন না। হাফিংটন পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ গাছটির একটি পাতা আপনাকে অসুস্থ করে দিতে পারে। পাতা খেলে মৃত্যুও ঘটতে পারে। শিশুদের বেলায় তো এটি ভয়াবহ ঝুঁকিপূর্ণ। তাই বাড়িতে ছোট শিশু থাকলে অবশ্যই সাবধান হওয়া প্রয়োজন। কৃষিবিজ্ঞানীদের মতে, এ গাছের পাতায় থাকে ক্যালসিয়াম অক্সালেট নামের এক উপাদান, যা মানুষের কিংবা পোষা প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর। এক অভিভাবকের বরাত দিয়ে পত্রিকাটি জানায়, যে বাড়িতে শিশু আছে, সেখানে এ গাছ না রাখাই উচিত। কারণ, যুক্তরাজ্যের অধিবাসী ওই অভিভাবকের তিন বছর বয়সী এক মেয়েশিশু ডায়ফেনবাসিয়া গাছের পাতা গিলে ফেলে। এতে তার জিহ্বা ফুলে যায় এবং মৃত্যু ঘটে। এ ছাড়া প্রাপ্তবয়স্কদের মৃত্যু হতে পারে ১৫ মিনিটের মধ্যে। এমনকি এ গাছ হাত দিয়ে ধরলে এবং সেই হাত চোখে লাগালে অন্ধত্বের সম্ভাবনা থাকে।
ক্যালাডিয়াম : নান্দনিক এ পাতাবাহার গাছটি আমরা সবাই চিনি। অনেকের ঘরে অথবা বারান্দার বাগানে সাজিয়ে রাখা আছে এ গাছ। লাল, গোলাপি অথবা সাদা পাতার ক্যালাডিয়াম নামে পরিচিত এ গাছটি বাগান সাজাতে বহুল ব্যবহৃত। কিন্তু দক্ষিণ আমেরিকার এ গাছটি সম্পর্কে উদ্ভিদবিদরা জানিয়েছেন ভয়ংকর তথ্য। গাছটির পাতায় আছে দীর্ঘস্থায়ী বিষ। আর শিশুরা এ গাছের পাতা মুখে দিলে আক্রান্ত হতে পারে দীর্ঘস্থায়ী পেটের পীড়ায়। শুধু তাই নয়, ঘরের পোষা প্রাণীদের জন্যও সমান ক্ষতিকর এ গাছটি। পরীক্ষার পর জানা গেছে, দীর্ঘদিন এ গাছের সংস্পর্শে থাকলে এক ধরনের স্থায়ী ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হয়। যার ফলে মুখ, জিহ্বা ও ঠোঁটে জ্বালাপোড়া, গলাব্যথা, গিলতে সমস্যা এবং শ্বাস নিতে সমস্যা হতে পারে।
শাশুড়ির জিহ্বা গাছ : শুনতে অবাক লাগলেও ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের গুল্মটির নাম এটাই। বাংলাদেশে এ গাছটিও পাতাবাহার গাছ হিসেবে বহুল প্রচলিত। বাগানের সীমানায় বেড়া হিসেবেও এ গাছটি লাগানো হয়। এছাড়া অফিসে, বাসায় গৃহসজ্জায় এ ঝোপালো গাছটি বহুল ব্যবহৃত। সাধারণত এ গাছটি গাঢ় সবুজ রঙের দেখা যায়। তবে অঞ্চলভেদে সাদা এবং হলুদ রঙের হয় ‘শাশুড়ির জিহ্বা’ গাছ। ইতালি ও স্পেনে আবার এ গাছটিকে সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে মনে করা হয়। তবে উদ্ভিদবিদরা জানাচ্ছেন, এ গাছটি স্বাস্থ্যগতভাবে শিশু এবং পোষা প্রাণীদের জন্য একেবারেই সৌভাগ্য বয়ে আনে না। অন্য গাছগুলোর তুলনায় এ গাছটি কম বিষাক্ত হলেও তা শিশু ও পোষা প্রাণীদের ক্ষতির জন্য যথেষ্ট। গাছের পাতা খাওয়া অথবা দীর্ঘদিনের সংস্পর্শে গলাব্যথা ও নাসারন্ধ্রের সমস্যা দেখা দেয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এ গাছটি আবার দীর্ঘস্থায়ী আমাশয়সহ অন্যান্য পেটের পীড়ার কারণ হয়েও দেখা দেয়।